তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এক দিন

টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এক দিন
টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এক দিন

বাংলাদেশ এর এক অপার্থিব সুন্দর টাংগুয়ার হাওড়।

মায়াবী এই হাওড় এর সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। প্রতিবছর অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু মানুষ এখানে ছুটে যান এক অচেনা টানে, হারিয়ে যেতে এক অন্য ভুবনে।

টাঙ্গুয়ার হাওড় বাংলাদেশের সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি হাওড় । প্রায় ১২৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত।
মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০ টিরও বেশি ঝরা (ঝরনা) এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮ টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ১২,৬৬৫ হেক্টর অথবা ৩১,২৭১.১৯ একর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওড় জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানিবহুল মূল হাওড় ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ বসতি ও কৃষিজমি। হাওর এলাকার ভেতরে ও তীরে ৮৮টি গ্রাম আছে। এই হাওরকে মাদার অফ ফিশারিজ বা সব হাওড় এর মা ও বলা হয়।

এই মায়াবী হাওরকে কাছ থেকে অবলোকন করতে আমরা চলে গিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ট্যুর গ্রুপ ( বিটিজি ) এর সাথে ওদের হাওর এর ডে ইভেন্ট এ। বাজেট অনুযায়ী বেস্ট একটা ট্যুর ছিল এটা।
রাতে রওনা দিয়ে সকাল সকাল হিমেল হাওয়া খেতে খেতে পৌছে গেলাম নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দায়। পরে ঘাট থেকে হাউসবোট এ উঠে গেলাম। গন্তব্য আমাদের প্রথম স্পট ওয়াচ টাওয়ার। যেতে যেতে আমরা হাওড় এর অপার্থিব সুন্দর চোখ মন ভরে দেখতে লাগলাম আর এগোতে লাগলাম আমাদের গন্তব্যের দিকে।

পথিমধ্যে নদীতে এগোতে এগুতে আমরা সকালের নাস্তাটা সেরে ফেললাম সে এক অন্যরকম অনুভূতি একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমাদের সকালের নাস্তার মেনু ছিল ডিম খিচুড়ি এক কথায় অসাধারণ স্বাদ। এর অভিজ্ঞতা ছিল লবণ ছাড়া একটি লবণাক্ত অভিজ্ঞতা , যেন লবণ না পাওয়ার একটি আর্তনাদ। লবণ ছাড়া খাবার আলু ছাড়া সিঙ্গারার মত। যাইহোক খাবার খেয়ে হালকা অতৃপ্তির ঢেকুর তুলে আবার আমরা ছুটে চললাম হাওরের পানে। প্রায় ৪ ঘণ্টা পরে আমরা পৌছে গেলাম ওয়াচ টাওয়ার এ। সেখানে হাওরের স্বচ্ছ পানিতে দাপাদাপি করে আমরা আবার উড়াল দিলাম হাওড় এ। এবার গন্তব্য টেকেরঘাট।

দুপুরে রোদের তীব্রতা ছিল চোখে পড়ার মতো । মনে হচ্ছিল শরীরের চামড়া বুঝি পুড়ে তার রং পরিবর্তন করে ফেলবে। আর একটু হলে তো নিজের ছাতাটাই তার নিজের রং পরিবর্তন করে ফেলছিল। পথিমধ্যেই আমরা দুপুরের খাবারটা শেষ করে নিয়েছিলাম। সেটা ছিল আমাদের কাছে এক কথায় অমৃত । মেনু ছিল মুরগির মাংস সাথে আলু ভর্তা , ডাল এবং সাদা ভাত। দুপুরের খাবার খেয়ে সবাই তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিল এবং নিমিষেই হারিয়ে গেল সকালের সেই লবণাক্ত অভিজ্ঞতা। প্রায় ১.৫০ ঘণ্টা পরে আমরা পৌছে গেলাম টেকেরঘাট। সেখানে থেকে আমরা একে একে গেলাম লাকমাছড়া, নীলাদ্রি লেক / শহীদ সিরাজী লেক, শিমুল বাগান, বারিক্কা টিলা, মিনি সুইজারল্যান্ড, সাদা পাথর আর কালাপাহাড়। নীলাদ্রি লেক থেকে শিমুল বাগান যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই প্রকৃতির তার নিজের চিরচেনা রূপ পরিবর্তন করে ফেলল। হঠাৎ করেই কোথা থেকে যেন দমকা হিমেল হওয়ার সাথে এক পশলা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এবং আকাশে মেঘের ঘনঘটা করা শুরু হয়ে গেল। সেই সাথে বিদায় নিল সারা দিনের অস্বস্তিকর রোদ। এমন আবহাওয়া পেয়ে মনে মনে খুশি হয়ে গেলাম এবং খুব দ্রুত শিমুল বাগান ঘুরাঘুরি শেষ করে চলে গেলাম বারিক্কা টিলাতে প্রকৃতির এই সুন্দর জায়গাটাকে উপভোগ করার জন্য। এখানে গিয়ে তো আমাদের চোখ ছানাবড়া। প্রকৃতি তার রূপ নিয়ে যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল দেখানোর জন্য।
প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে নিজের অচেতন মন থেকে বলতে ইচ্ছা করছে,

পারি দিলাম প্রকৃতির টানে,
হারিয়ে আসলাম মন,
যেতে চাবো আবারও সেই,
হাওর বন।

ভাসিয়েছিলো আমাকে
নয় ভাসিয়াছিলো মন।
মন জুড়ানো সপ্ন দেখিয়া
ভাবছে আমার মন।

চলে এসেছি তাকে ছেড়ে
ভুলব কি তাই বল? স্মৃতি হিসাবে রেখে দিলাম
পাহাড়া দিবে মন।

এসে গেছি ব্যস্ত শহরে
মানছেনা যে মন।
ভাবছি তাই আবারও যাবো
পিছে রেখে ব্যস্ততার জীবন।

আমরা সেই সৌন্দর্য উপভোগ করে আবার নির্দিষ্ট সময় ফিরে আসলাম হাউস বোটে। বিকাল ৪:৩০ টার দিকে আমরা আমার হাওড় এ উড়াল দিলাম কলমাকান্দা এর উদ্দেশ্যে। পথে সবার মাঝে ক্লান্তি আর ঘুম ঘুম ভাব।। তার মাঝে আমাদের আনন্দের পালে হাওয়া দিলো মেঘালয় থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা বাতাস এবং বৃষ্টির এক পশলা ঝটকা। হাউস বোট এর ছাদে বসে এই মনোমুগ্ধকর বৃষ্টি এবং হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা আমাদের গন্তব্যের দিকে এগোতে থাকলাম।
ফিরে আসার পথে হাওরের সূর্যাস্তের সময়টার কথা না বললেই নয়। হঠাৎ করেই আচমকা একটা ঝড় শুরু হয়ে গেল আর বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়তে লাগলো আমাদের হাউসবোটের উপর। ভয়ে সবাই চুপটি হয়ে বসে থাকলাম আর দেখতে লাগলাম কিভাবে হঠাৎ করেই চিরচেনা হাওড় তার রূপ পাল্টে ফেলল। অবশ্য আলহামদুলিল্লাহ কিছুক্ষণ পরেই ঝড় থেমে গিয়েছিল এবং তারপরেই আমাদের সামনে হাজির হয়ে গেল বৃষ্টি পরবর্তী আকাশের সৌন্দর্য লীলা। সারাদিন প্রকৃতি তার অপরূপ সৌন্দর্য মেলে ধরার পরে সন্ধ্যায় আকাশ তার গোধূলি রং দিয়ে তার সৌন্দর্য মিলে ধরে ছিল আমাদের সামনে এবং সম্পূর্ণ হাওরের বুকে। এই সৌন্দর্য আমরা অবাক হয়ে দেখেছি তাকিয়ে থেকেছি অপলক দৃষ্টিতে। আকাশের রং আর হাওরের পানির রং যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছিল।

প্রায় ৫ ঘণ্টা পর আমরা গন্তব্য এসে পৌঁছালাম এবং ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম। এরই সাথে শেষ হয়ে গেল আমাদের বাংলাদেশের এক অপার্থিব সুন্দর টাঙ্গুয়ার হাওরের অপ্রকাশিত একটি গল্প

রবিউল ইসলাম শাওন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *