তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

তিব্বতের ভূমিকম্পে প্রাণহানি ১২৬: মাইনাস (-)১৬ ডিগ্রিীতে উদ্ধার অভিযান

 তিব্বতের ভূমিকম্পে প্রাণহানি ১২৬: মাইনাস (-)১৬ ডিগ্রিীতে উদ্ধার অভিযান
তিব্বতের ভূমিকম্পে মাইনাস (-)১৬ ডিগ্রিীতে উদ্ধার অভিযান চলছে ছবি-বিবিসি

তিব্বতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে কমপক্ষে ১২৬ জন নিহত হয়েছে এবং ১৮৮ জন আহত হয়েছেন। ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে আঘাত হানে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (USGS) মতে, ভূমিকম্পটি ৭.১ মাত্রার ছিল এবং এর গভীরতা ছিল মাত্র ১০ কিলোমিটার। এটি ভারতের কিছু অংশসহ নেপালেও অনুভূত হয়েছে।


ভূমিকম্পের ভয়াবহতা 

  • ১০০০-এরও বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।
  • শিগাতসে শহরে বহু ভবন ধ্বংস হয়েছে।
  • অঞ্চলটির বিদ্যুৎ এবং পানীয় জলের সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।

উদ্ধার অভিযান

বিবিসির সূত্রে জানা যায়, রাত্রিকালীন ঠান্ডা আবহাওয়ার (-১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) মধ্যেও উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ করছেন। ড্রোন এবং হেলিকপ্টারের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।


ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিস্থিতি

প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ

হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত টিংরি কাউন্টি, যেখানে এভারেস্টের পাদদেশ রয়েছে, এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। ঠান্ডা আবহাওয়া ও উচ্চতল ভূমির কারণে উদ্ধারকর্মীরা অতিরিক্ত চাপে পড়ছেন। ৩৪ বছর বয়সী সাংজি ডাংঝি বলেন, “এখানে ঘরবাড়ি সাধারণত মাটির তৈরি, তাই ভূমিকম্পে সেগুলি খুব দ্রুত ভেঙে পড়ে।” অনেক বাসিন্দা জরুরি ভিত্তিতে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

শিগাতসে, যেখানে পঞ্চেন লামার ঐতিহ্যবাহী আসন অবস্থিত, এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র। তিব্বত বৌদ্ধ ধর্মের প্রধান ব্যক্তিত্ব দালাই লামা ভূমিকম্পে প্রাণ হারানোদের জন্য প্রার্থনা করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন।


আন্তর্জাতিক প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া

নেপালে প্রভাব

নেপালে শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হলেও তেমন বড় ধরনের ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। কাঠমান্ডুর অনেক বাসিন্দা ভূমিকম্পের ভয়ে তাদের ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন।

 তিব্বতের ভূমিকম্পে প্রাণহানি ১২৬: মাইনাস (-)১৬ ডিগ্রিীতে উদ্ধার অভিযান
তিব্বতের ভূমিকম্পে বাস্তুচূত লোকজন ছবি-বিবিসি

চীনের রাষ্ট্রপতির আহ্বান

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং উদ্ধার কার্যক্রম দ্রুত ও কার্যকর করতে আহ্বান জানিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের পুনর্বাসনের জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে।


তিব্বতে ভূমিকম্পের কারণ 

এভারেস্ট অঞ্চলের ভারতীয় ও ইউরেশীয় টেকটোনিক প্লেটের সীমানা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। ২০১৫ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে প্রায় ৯,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। মঙ্গলবারের ভূমিকম্প সেই স্মৃতিকে আবারও ফিরিয়ে এনেছে। আরো জানুনঃ চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী

ভূমিকম্প কেন হয়?

ভূমিকম্প সাধারণত ঘটে যখন টেকটোনিক প্লেটগুলো একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষ করে বা সরতে শুরু করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠতল আসলে ভাসমান প্লেটগুলোর সমষ্টি, যা ম্যান্টলের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে চলে।

যখন প্লেটগুলো শক্তিশালী চাপ তৈরি করে এবং তা মুক্ত হয়, তখন ঘটে ভূমিকম্প।

ভূমিকম্পের কারণ:

১. টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ: প্রধান কারণ।
২. জ্বালামুখী বিস্ফোরণ: কিছু ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের কারণ।
৩. মানুষের কার্যকলাপ: বড় বাঁধ নির্মাণ বা খনি খননেও ছোট ভূমিকম্প হতে পারে।

ভূমিকম্পের সময় কী করবেন?

জীবন রক্ষার জন্য ভূমিকম্প চলাকালে এবং পরবর্তীতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

ভূমিকম্প চলাকালে করণীয়:

১. মজবুত স্থানের নিচে আশ্রয় নিন: টেবিল বা শক্ত কোনো আসবাবের নিচে লুকান।
২. দরজা এবং জানালা থেকে দূরে থাকুন: এগুলি সহজেই ভেঙে পড়তে পারে।
৩. বিদ্যুৎ সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন: আগুন বা শর্ট সার্কিটের ঝুঁকি থাকে।
৪. বাইরে থাকলে: খোলা স্থানে যান এবং বিল্ডিং, গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকুন।

ভূমিকম্প পরবর্তী করণীয়:

১. ধ্বংসাবশেষের নীচে থাকলে: চিৎকার বা মোবাইল আলো দিয়ে নিজের অবস্থান জানান।
২. ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করুন: অপ্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন না।
৩. পরবর্তী আফটারশকের জন্য প্রস্তুত থাকুন: প্রথম ভূমিকম্পের পর আরও কম্পন অনুভূত হতে পারে।


উপসংহার

তিব্বতের এই ভূমিকম্পের কারণে অনেক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং স্থানীয় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। হিমালয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প প্রমাণ করে যে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও উদ্ধার কার্যক্রমে আরও উন্নতি করা প্রয়োজন। এই ঘটনার আন্তর্জাতিক সহানুভূতি এবং ত্রাণ কার্যক্রম সাহায্যপ্রাপ্তদের দ্রুত পুনর্বাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।


প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQs)

১. ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল কোথায় ছিল?

ভূমিকম্পটি তিব্বতের টিংরি কাউন্টিতে হিমালয়ের উত্তরে ঘটেছে।

২. তিব্বতের ভূমিকম্পে কতজন মানুষ নিহত হয়েছে?

০৮ জানুয়ারি ২০২৫ রাত ০১০০ ঘটিকা পর্যন্ত ১২৬ জন নিহত এবং ১৮৮ জন আহত হয়েছে।

৩. ভূমিকম্পের মাত্রা কত ছিল?

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার মতে, ভূমিকম্পটি ৭.১ মাত্রার ছিল।

৪. উদ্ধার কার্যক্রমে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

ঠান্ডা আবহাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবস্থান উদ্ধার কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।

৫. আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কীভাবে ঘটেছে?

চীন, নেপাল, এবং অন্যান্য দেশ থেকে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে দ্রুত সাড়া দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!