মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরার অভিযোগে ৫৭ বাংলাদেশি জেলেকে আটক করে মিয়ানমার নৌবাহিনী। বুধবার দুপুর ২ টায় ছয়টি ট্রলারসহ তাদের আটক করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার তাদের ছেড়ে দেয় মিয়ানমার নৌবাহিনী। সন্ধ্যার আগেই ছয়টি ট্রলার শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পৌঁছায়।
এ ঘটনায় মিয়ানমার নৌবাহিনীর গুলিতে মোহাম্মদ ওসমান নামের বাংলাদেশি এক জেলে নিহত এবং আরো দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মিয়ানমার নৌবাহিনী দাবি করে বাংলাদেশি জেলেরা মিয়ানমারের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরেছিলেন | কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল হকও এ ঘটনা স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশি ট্রলার অনেক সময়ই বাংলাদেশ মিয়ানমার আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম করে থাকে। তবে এ বিষয়ে জেলেদের সচেতন করার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেছেন জোনাল কমান্ডার।
এরূপ ঘটনায় পূর্বে ট্রলার মালিকরা প্রতিবারই অস্বীকার করে থাকেন। তবে এবার ফিরে আসা জেলেদের অনেকেই অকপটে স্বীকার করেছেন, তারা মাছ ধরার সময় তারা মিয়ানমারের জলসীমাতে চলে গিয়েছিলেন। জেলে আব্দুল আজিজ বলেন,
‘আমরা নিয়মিত সেখানে মাছ ধরতে যাই। এটা সত্যি যে আমরা যেখানে জাল ভাসাই সেটি মিয়ানমারের জলসীমাবাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে অন্তত চার কিলোমিটার ভেতরে। তবে এত দিন সেখানে মিয়ানমার নৌবাহিনীর যে জাহাজটি অবস্থান করেছিল তারা আমাদের কাছে থেকে দেখলেও কোনো বাধা দিত না। কিন্তু ওই দিন আকিয়াবের দিক থেকে একটি জাহাজ আমাদের লক্ষ্য করে ছুটে আসে এবং জাহাজ থেকে একটি স্পিডবোট নামিয়ে আমাদের ধাওয়া করে। আমরা সেখানে ছয়টি ট্রলার ছিলাম। আমাদের পাঁচটি ট্রলার হাত উঁচু করে দেখিয়ে তাদের আত্মসমর্পণ করি
জেলে আব্দুল আজিজ আরো বলেন, ‘টেকনাফ এলাকার বেশির ভাগ ট্রলার দীর্ঘদিন থেকে মিয়ানমার জলসীমায় এভাবে জাল ফেলে আসছে মূলত দুটি কারণে। একটি কারণ হচ্ছে, মিয়ানমার সাগরের ওই অঞ্চলে মাছ ধরা পড়ে বেশি। অন্য কারণটি হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে বড় বড় ফিশিং ট্রলারের কারণে ছোট ট্রলারগুলো সেখানে জাল ভাসালে অনেক সময় জাল কাটা পড়ে।’
বাংলাদেশের জলসীমা অতিক্রম করে জেলেরা মিয়ানমার সীমান্তে প্রবেশ করলে মাঝে মাঝেই গ্রেফতার এর ঘটনা ঘটে | মাঝে মাঝে তাদের ১০ থেকে ১৫ বছরের জেল ও হয় । তবে এবারে ভাগ্য ভালো যে বাংলাদেশের কার্যকর তৎপরতার কারণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছয়টি আটক বোট ছেড়ে দিয়েছে।’ ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল হক আরো বলেন,
‘সীমান্তের কাছাকাছি এভাবে গুলিবর্ষণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমার বরাবর প্রতিবাদলিপি প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার আগে ও পরে আমরা সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ বোট মালিক সমিতিকে জাহাজে ডেকেছি এবং তাদের দেখিয়েছি যে ট্রলারগুলো যে জলসীমার বাহিরে চলে যায়। জেলেরা যাতে আমাদের জলসীমার বাইরে চলে না যান এ বিষয়ে সতর্ক করার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া আমরা এসব এলাকায় টহল বাড়িয়ে দিয়েছি |