করদাতা জসিম এর মৃত্যুতে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী এবং সেরা করদাতা পুরস্কারপ্রাপ্ত জসিম উদ্দিন মাসুমকে পরিকল্পিতভাবে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তার প্রেমিকা রুমা আক্তারকে। অপর এক নারীর সঙ্গে জসিমের সম্পর্কের খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে রুমা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কীভাবে হত্যা করা হয় জসিমকে?
১০ নভেম্বর রাতে ঢাকার শেওড়াপাড়ায় নিজের ফ্ল্যাটে জসিমকে ডেকে নেন রুমা। সেখানেই চেতনানাশক মেশানো পানীয় খাইয়ে জসিমকে অচেতন করেন তিনি। অচেতন অবস্থায় ধারালো চাপাতি দিয়ে জসিমকে হত্যা করেন এবং পরে তার মরদেহ সাত টুকরো করে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় নারায়ণগঞ্জের পূর্বাচলের একটি লেকে ফেলে আসেন।
পুলিশের বক্তব্য অনুসারে, এই পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। জসিমকে একা খুন করার পর তার মরদেহ বহন করে নির্দিষ্ট লেকে ফেলে আসার জন্য রুমা সিএনজি ও উবার ব্যবহার করেছিলেন। পুরো প্রক্রিয়াটি তিনি একাধিক দফায় সম্পন্ন করেন বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
জসিম কে খুনের পেছনের কারণ
পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, জসিম ও রুমার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। জসিম রুমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা পূরণে বারবার দেরি করছিলেন। এরমধ্যে রুমা জানতে পারেন, জসিম অন্য এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জসিমকে খুনের পরিকল্পনা করেন রুমা।
রুমা জানিয়েছেন, জসিম তাকে বিয়ে না করে প্রতারণা করেছেন এবং অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছেন। এই ক্ষোভের কারণেই তিনি হত্যার সিদ্ধান্ত নেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে হত্যা করেন।
জসিম এর মরদেহের সন্ধান ও তদন্ত
১১ নভেম্বর জসিম নিখোঁজের বিষয়ে তার পরিবার গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ১৩ নভেম্বর পূর্বাচলের লেকে পলিথিন মোড়ানো সাত খণ্ড মরদেহের সন্ধান পায় পুলিশ। রাতে মরদেহ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে গেলে সেখানেই পরিবার সদস্যরা মরদেহ শনাক্ত করেন। পুলিশের সূত্র মতে, এ ঘটনায় রুমা আক্তারকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রুমা স্বীকার করেছেন, পুরো কাজটি তিনি একাই করেছেন। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হেসকো ব্লেড এবং মরদেহ বহনে ব্যবহৃত পলিথিন ব্যাগও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো সরঞ্জাম ও অন্যান্য প্রমাণ বনানীর একটি ভিন্ন ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
জসিম হত্যার তদন্তের অংশ হিসেবে রুমার এক বান্ধবীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডে অন্য কেউ তাকে সহযোগিতা করতে পারে। পুরো বিষয়টি এখন তদন্তাধীন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জসিমের পরিবারের শোক এবং সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান
নিহত ব্যবসায়ী জসিমের পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। জসিমের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম সিহাব বলেন, “বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, এই হত্যাকাণ্ডে জসিমের ব্যবসায়িক কোনো শত্রুতা জড়িত নেই।
শেষকথা
বাংলাদেশের আলোচিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে জসিমউদ্দিন মাসুম একজন নামকরা ব্যক্তি। তিনি দেশের অন্যতম সেরা করদাতা পুরস্কার পেয়েছিলেন। এছাড়া, কোনো নারী কর্তৃক একজন ব্যক্তিকে খুন করা খুবই বিরল ঘটনা হওয়ায় সাধারণ জনগণের মধ্যেও এই ঘটনা ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
আরো পড়ুন: শিশু মুনতাহার লাশ পাওয়া গেল পুকুরে