সামাজিকমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম—অ্যাডলফ খান। ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে, “দেশের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষের অ্যাওয়ার্ড পেলেন অ্যাডলফ খান!” কিন্তু আসলেই কি তিনি ‘সুদর্শন পুরুষ’ হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন? নাকি এটি নিছকই গুজব?
নিজেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, “আমি কোনো ‘সুদর্শন পুরুষ’ অ্যাওয়ার্ড পাইনি। আমি পেয়েছি ‘স্টাইলিশ ফ্যাশন ডিরেক্টর’ অ্যাওয়ার্ড, কোরিওগ্রাফির জন্য।” তার ভাষায়,
“ভাইরাল আর ভিউয়ের বাণিজ্যে আমাকে বন্দুকের গুলির মুখে রেখে ডলার কামাচ্ছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। সত্যিটা লিখলেই তো হতো!”
অ্যাডলফ খানের পরিচয়
পুরো নাম অ্যাডলফ খান। তিনি ঢাকাতেই বড় হয়েছেন। তার বাবা আবদুস শহীদ খান এবং মা হাসনে আরা খান। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটার সায়েন্সে, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি সম্পন্ন করেছেন। যদিও পেশাগত জীবন শুরু করেছিলেন আইটি ফার্মে, কিন্তু মিডিয়ার প্রতি ভালোবাসা তাকে নিয়ে আসে ফ্যাশন ও বিনোদন জগতে।
২০০৮ সালে র্যাম্প মডেল বুলবুল টুম্পার গ্রুমিং স্কুলের মাধ্যমে মিডিয়াতে যাত্রা শুরু করেন। এরপর র্যাম্প মডেল, স্টাইল ডিজাইনার, কোরিওগ্রাফার, টিভি উপস্থাপক, এমনকি নাট্যশিল্পী হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি মূলত কোরিওগ্রাফার ও ফ্যাশন ডিরেক্টর হিসেবে বেশি পরিচিত। দেশের শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন শো, ব্রাইডাল শো, টিভি বিজ্ঞাপন, এবং নাটকে তার কোরিওগ্রাফি ও স্টাইলিং প্রশংসিত হয়েছে।
অ্যাডলফ খানের কাজ
- লিপটন চা, বাংলালিংক, আরসি কোলা-সহ বহু ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে মডেল ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে।
- রবীন্দ্রনাথের স্পেশাল শো, স্ট্রিট চিলড্রেন শো, ব্রাইডাল শো, পারসোনা শো, র্যাম্প অন দ্য স্ট্রিট-এর মতো বড় বড় ইভেন্টে।
- নিপুণ-এর প্রায় সব ছবিতে স্টাইল ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন, চরিত্র অনুযায়ী পোশাক ও হেয়ার স্টাইল সেটআপ করেছেন।
- এছাড়া, তিনি নিজেই ‘অটোগ্রাফ’নামে একটি ফ্যাশন হাউজ পরিচালনা করেন এবং ‘উইন্ডো’ ফ্যাশন ম্যাগাজিনের ফ্যাশন এডিটর হিসেবেও কাজ করেছেন। তার নিজস্ব মডেল গ্রুমিং স্কুলে নতুন মডেলদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন।
সুদর্শন পুরুষ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা
সাম্প্রতিক ভাইরাল ও বিভ্রান্তি সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যমে অ্যাডলফ খানের কিছু ছবি ভাইরাল হয়, যেখানে দাবি করা হয় তিনি নাকি দেশের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এই তথ্যটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নিজের ভেরিফাইড ফেসবুকে জানিয়েছেন, তিনি ‘স্টাইলিশ ফ্যাশন ডিরেক্টর অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন, যা তার কোরিওগ্রাফি ও ফ্যাশন ডিজাইনের স্বীকৃতি।
তার ভাষায়,
“আমার ছবি ভিডিও দিয়ে নেট দুনিয়া সয়লাব! ভাইরে ভাই, আমাকেই পাইলেন আপনারা। ভালো মন্দ বাস্তব অবাস্তব মনগড়া ক্যাপশন দিয়ে লাখ লাখ ভিডিও বানাচ্ছে সব একের পর এক! অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার বিষয়টিও সত্য, তবে সেটা সুদর্শন পুরুষের নয়।”
এছাড়া, তিনি অভিযোগ করেছেন, কিছু কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে ভিউ ও ডলার কামাচ্ছেন, যা তার জন্য মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, যখন তার বাবা হাসপাতালে, তখন এমন ট্রল ও গুজব তাকে আরও বেশি কষ্ট দিয়েছে।
এক নজরে কিছু প্রশ্নোত্তর
অ্যাডলফ খান কেন ভাইরাল?
সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যমে তার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে তাকে “সুদর্শন পুরুষ” বলে দাবি করা হচ্ছে যা সঠিক নয়।
অ্যাডলফ খান কি সত্যিই দেশের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ?
না, অ্যাডলফ খান নিজে কখনোই এই দাবি করেননি এবং কোনো “সুদর্শন পুরুষ” অ্যাওয়ার্ডও পাননি। এটি সামাজিকমাধ্যমে ছড়ানো গুজব। তিনি কোরিওগ্রাফি ও ফ্যাশন ডিজাইনের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন, সৌন্দর্যের জন্য নয়।
অ্যাডলফ খানের ভাইরাল ছবি ও ভিডিওর পেছনে কী সত্য?
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কনটেন্ট ক্রিয়েটর তার ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে মনগড়া ক্যাপশন দিচ্ছেন, যার ফলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অ্যাডলফ খান নিজেই বলেছেন, এসব ভাইরাল কনটেন্টের বেশিরভাগই সত্য নয়।
অ্যাডলফ খান কী ধরনের পুরস্কার পেয়েছেন?
তিনি “স্টাইলিশ ফ্যাশন ডিরেক্টর” অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা তার কোরিওগ্রাফি ও ফ্যাশন ডিজাইনের স্বীকৃতি। “সুদর্শন পুরুষ” হিসেবে কোনো স্বীকৃতি নেই।
অ্যাডলফ খানের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য কাজ কী কী?
- র্যাম্প মডেল ও কোরিওগ্রাফার হিসেবে বহু ফ্যাশন শোতে কাজ।
- জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনে মডেল ও স্টাইলিস্ট।
- চিত্রনায়িকা নিপুণের ছবিতে স্টাইল ডিজাইনার।
- ‘অটোগ্রাফ’ ফ্যাশন হাউজ ও মডেল গ্রুমিং স্কুল পরিচালনা।
অ্যাডলফ খান কেন এত সমালোচিত হচ্ছেন?
তার স্টাইল ও ব্যক্তিত্ব সবসময়ই আলোচনায় ছিল। তবে সাম্প্রতিক “সুদর্শন পুরুষ” বিতর্ক, গুজব ও ট্রলিং তাকে নতুন করে সমালোচনার মুখে ফেলেছে। অনেকেই মনে করেন, ভাইরাল কনটেন্টের জন্য তার ব্যক্তিগত জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
“সুদর্শন পুরুষ” নিয়ে এত আলোচনা কেন?
বাংলাদেশে “সুদর্শন পুরুষ” ট্যাগটি সবসময়ই কৌতূহলের। যখন কোনো মিডিয়া ব্যক্তিত্বকে এই ট্যাগ দেওয়া হয়, তখন তা নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও মিম তৈরি হয়। অ্যাডলফ খানের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও বেশি ভাইরাল হয়েছে কারণ তিনি নিজেই বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
অ্যাডলফ খান কি মিডিয়া থেকে সরে যাচ্ছেন?
বর্তমানে তিনি কিছুটা বিরক্ত ও মানসিক চাপে থাকলেও, মিডিয়া ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তার কাজ চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন কিছু নিয়ে আসার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
“সুদর্শন পুরুষ” নিয়ে অ্যাডলফ খানের বার্তা কী?
তিনি চান, সবাই সত্য তথ্য জানুক এবং গুজব ছড়ানো বন্ধ হোক। তার ভাষায়, “ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বাস্তবিক, সত্য এবং সুন্দর হতে পারে।”