তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৫:পালন করা যায়েজ?

আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৫পালন করা যায়েজ
আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৫পালন করা যায়েজ

বাংলাদেশের আকাশে সফর মাসের চাঁদ ১৯ জুলাই ২০২৫ শুক্রবার দেখা যায়নি। এর ফলে পরদিন শনিবার (২০ জুলাই) ছিল হিজরি মুহাররম মাসের ৩০তম দিন।সফর মাস শুরু হয়েছে ২১ জুলাই ২০২৫ রবিবার থেকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সফর মাসের ২৫ তারিখ পড়ছে আগামী ২০ আগস্ট ২০২৫ বুধবার। তাই আখেরি চাহার সোম্বা ২০২৫ পালন করা হবে আগামী ২০ আগস্ট ২০২৫ বুধবার।

🔗 সূত্র: ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সভা: বায়তুল মোকাররম
সভাপতি: এ এফ এম খালিদ হোসেন, উপদেষ্টা, ধর্ম মন্ত্রণালয়
সদস্য: মো. নিজামুল কবীর, আবদুল মালেক, আ. ছালাম খান (DG, I.F.)

আখেরি চাহার সোম্বা কী ?

সফর মাসের শেষ বুধবারকে এই উপমহাদেশের বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এর মুসলমানদের একটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিন হিসেবে দেখা হয়।

  • কেউ দিনটিকে ইবাদতের দিন হিসেবে পালন করেন
  • কেউ দান-সদকা ও নফল নামাজ আদায় করেন
  • কেউ বিশ্বনবির সুস্থতা স্মরণে শুকরিয়া আদায় করেন

এইসব প্রচলন শত শত বছর ধরে উপমহাদেশে চলে আসছে। তবে বিশ্বের সকল মুসলিম এই দিনটি পালন করেন না। আরো জানুন: ভারতের ওয়াকফ বিলে ৫টি বড় সমস্যা

কেন পালিত হয় আখেরি চাহার সোম্বা?

আখেরি চাহার সোম্বা অর্থ:

* আখেরি = শেষ (ফার্সি ও আরবি)
* চাহার = চার / সফর (ফার্সি সংখ্যা)
* সোম্বা = বুধবার

অর্থাৎ এটি সফর মাসের শেষ বুধবারকে বোঝায়। এই দিনটি নিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র অনুভূতি।

আখেরি চাহার সোম্বা এর ইতিহাস

ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক এবং ইবনে হিশামের মতে,

সফর মাসের শেষ দিকে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) গ্রন্থ অনুযায়ী এই সময় তিনি এক রাতে বাকিউল গারকাদ (জান্নাতুল বাকি) কবরস্থানে যান। সেখানে মৃতদের জন্য দোয়া করেন এবং গভীর রাত শেষে ঘরে ফিরে আসেন। ফেরার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং নিজেই বুঝতে পারেন যে এটি ছিল তার অন্তিমযাত্রার সূচনা।

রাসুলুল্লাহ (সা.)যখন জান্নাতুল বাকিতে ছিলেন তখন মুক্ত ক্রীতদাস হিবাও ছিলেন। তিনি (হিবা) জানান, হজরত মোহাম্মদ (সা.) তাকে বলেন, তাকে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়েছে

১. এই দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও দীর্ঘজীবন

২.আল্লাহর সাক্ষাৎ ও তাৎক্ষণিক জান্নাতে প্রবেশ।

নবিজি দ্বিতীয় বিকল্প বেছে নেন। এরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তাঁর অসুস্থতায় আবিসিনিয়া থেকে ওষুধ এনে দেওয়া হলেও তা কাজে আসেনি। কিছু সময়ের জন্য তিনি সুস্থ মনে হলেও পরে আবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। সাহাবিরা তখন আশা প্রায় ছেড়েই দেন।

এই অসুস্থতার মাঝে একদিন তিনি হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠেন। সাতটি কুয়োর পানি দিয়ে গোসল করেন এবং পরিবার (ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং দুই নাতি হাসান ও হোসেন রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) কে সঙ্গে নিয়ে খাবার খান। এতে পরিবার ও সাহাবারা আনন্দিত হয়ে শুকরিয়া আদায় করেন, নফল নামাজ আদায় করেন এবং গরিবদের মাঝে দান-খয়রাত করেন।

এ ঘটনায় সাহাবিরা আনন্দিত হন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন।

কোন সাহাবী কত দান করেছিলেন?

সাহাবি দানের পরিমাণ
আবু বকর (রা.) ৫০০০ দিরহাম
ওমর (রা.) ৭০০০ দিরহাম
আলি (রা.) ৩০০০ দিরহাম
আবদুর রহমান (রা.) ১০০টি উট

হজরত আয়েশা (রা.)-এর ভাষ্য অনুযায়ী, ওই দিন বিকেল নাগাদ রাসুল (সা.) আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আখেরি চাহার সোম্বা ২০ অগাস্ট: জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা

গত শুক্রবার বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে । ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

পাশাপাশি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামূল কবীর, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক উপস্থিত ছিলেন।

আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা জায়েয?

এমন কোনো সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না যেখানে রাসুল (সা.) বা সাহাবায়ে কেরাম সফর মাসের শেষ বুধবারকে আলাদা করে পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। ইমাম নওয়াবী (রহ.) বলেন—

“যে কাজ রাসুল (সা.) করেননি এবং সাহাবিরাও করেননি, তা নিয়ম করে করা বিদআত।”- আল-মাজমু, ইমাম নববী

তবে ইবনে ইসহাক ও ইবনে হিশাম বলেন, ওই দিন নবিজি (সা.) সাময়িক সুস্থ হন এবং সাহাবারা শুকরিয়া আদায় করেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি সুস্থ হলেও বিকেলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। (সীরাতে রাসুলুল্লাহ গ্রন্থ)

ইসলামিক স্কলারদের দৃষ্টিভঙ্গি

পক্ষ যুক্তি ও বক্তব্য
যারা পক্ষে
  • যদি কেউ নিয়ত করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন— নফল নামাজ বা দান-সদকা করেন, তাহলে তাতে বাধা নেই।
  • একটি বিশেষ দিন হিসেবে ঘটা করে পালন না করে, নফল ইবাদত হিসেবেই করলে অনেকেই তা বৈধ মনে করেন।

মুফতি রফিকুল ইসলাম (জামিয়া রাহমানিয়া, ঢাকা) বলেন:
“ইবাদত করলে গুনাহ নেই, কিন্তু নতুন রেওয়াজ বানানো ঠিক নয়।”

যারা বিপক্ষে
  • ইসলামী চিন্তাবিদ ও সালাফি আলেমরা মনে করেন— যে আমল হাদিসে নেই, তা উদ্ভাবন করা ঠিক নয়।

“নবিজি (সা.) ও সাহাবারা যদি পালন না করে থাকেন, তবে আমাদেরও করা উচিত নয়।”

তাহলে আখেরি চাহার সোম্বা পালন করা জায়েজ?

বিষয় ব্যাখ্যা
হাদিসে আছে? না, কোনো সহীহ হাদিস নেই
সাহাবারা পালন করেছেন? দলিল নেই
ইতিহাসে রয়েছে? হ্যাঁ, সাময়িক সুস্থতার ইতিহাস
দান-সদকা করা যাবে? হ্যাঁ, অন্য দিনেও যায়
এই দিনে করায় দোষ আছে? নিয়ম বানালে সমস্যা, কিন্তু ইচ্ছায় ইবাদত জায়েজ
নতুন উৎসব বানানো? না, ইসলাম তা অনুমোদন করে না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!