আজিমপুর কবরস্থান খরচ, অবস্থান ও চাদাবাজি?

আজিমপুর কবরস্থান খরচ, অবস্থান ও চাদাবাজি
আজিমপুর কবরস্থান-ফাইল ছবি

আজিমপুর কবরস্থান ইতিহাস

ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত আজিমপুর কবরস্থান বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক কবরস্থান। এ কবরস্থানে প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০টি কবর দেওয়া হয়, যা থেকে দিনে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি হচ্ছে।২৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই স্থানটি মোগল আমলে, বিশেষত শায়েস্তা খাঁর শাসনামলে, সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কেবল একটি কবরস্থান নয়, বরং ঢাকার ঐতিহ্যের প্রতীক।

ইতিহাস এবং কাঠামো

আজিমপুর কবরস্থান দুটি ভাগে বিভক্ত: পুরাতন এবং নতুন। পুরাতন অংশটি তুলনামূলক ছোট এবং বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না। নতুন অংশটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে প্রতিদিনের দাফন কার্যক্রম পরিচালনা করে।

আজিমপুর কবরস্থান খরচ

কবরস্থানের পরিচালনা কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত মূল্য তালিকা রয়েছে, যা সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

  • রেজিস্ট্রেশন ফি: ১,০০০ টাকা।
  • কবর সংরক্ষণের ফি: ১০ থেকে ২৫ বছরের জন্য ৫ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকার মধ্যে।
  • বাঁশ-চাটাই বাবদ ফি: নির্ধারিত মূল্য তালিকায় বয়সভেদে ১৬১ থেকে ৮৬৫ টাকা।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই মূল্য তালিকার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

অবস্থান : https://maps.app.goo.gl/Zp2wH5NeWcjCV1Zs6

চাঁদাবাজি এবং স্থানীয় সমস্যা

আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজির অভিযোগ নতুন নয়, তবে ০৫ আগস্টের পর সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা এটি আরও জটিল করেছে।

সিন্ডিকেটের দখলদারিত্ব:

  • ৫ আগস্ট রাতে মেসার্স মায়া ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আজিমপুর এলাকার একজন স্থানীয় বিএনপি নেতা কবরস্থানের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য হুমকি দেন। এরপরে ৪০-৫০ জনের একটি দল কবরস্থানে এসে কার্যক্রম দখল করে নেয়।
  • বিষয়টি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩-এর সহকারী কর্মকর্তা মাসুদ হাসানের কাছে জানানো হলে, অঞ্চল-৩-এর নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউর রহমান মেসার্স মায়া ট্রেডার্সকে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেন। তবে কিছুদিন পরেই পুরো দখল সিন্ডিকেটের হাতে চলে যায়।

অতিরিক্ত অর্থ আদায়:

  • অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত ৮৬৫ টাকার পরিবর্তে প্রতিটি কবরের জন্য ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০টি কবর দেওয়া হয়, যা থেকে দিনে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাজি হচ্ছে।

স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা:

  • ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, “সাবেক ঠিকাদার অনিক পালিয়ে যাওয়ার পর জরুরিভিত্তিতে স্থানীয় ফারুককে বাঁশ-চাটাই সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এক টাকাও বেশি নেওয়া হচ্ছে না।”

গোরখোদকদের অবস্থা

কবরস্থানের গোরখোদক আব্দুর রহিম জানান, দরিদ্র পরিবারের জন্য তারা বিনামূল্যে কাজ করেন। তবে বাঁশ-চাটাইয়ের জন্য ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে এই অর্থ আদায় বেড়ে যাওয়ায় দাফন প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।

সিটি করপোরেশনের পদক্ষেপ

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সমাজ কল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন শাখার প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, “নতুন ঠিকাদার কবরস্থানে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এ কারণে মেসার্স মায়া ট্রেডার্সকে পুনরায় কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে স্থানীয় নেতৃত্বের কারণে সমস্যা সমাধান কঠিন হয়ে পড়েছে।”

উন্নয়নের সম্ভাবনা

যদিও চাঁদাবাজি এবং স্থানীয় প্রভাব সমস্যা সৃষ্টি করছে, তবুও সঠিক তদারকি এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই কবরস্থানের পরিষেবা উন্নত করা সম্ভব।

  • সিটি করপোরেশনের সরাসরি নজরদারি।
  • স্থানীয় নেতৃত্বের প্রভাবমুক্ত স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা।
  • চাঁদাবাজি বন্ধে আইন প্রয়োগ।

উপসংহার

আজিমপুর কবরস্থান ঢাকার ইতিহাসের একটি অনন্য অংশ। তবে স্থানীয় প্রভাব এবং চাঁদাবাজির কারণে এর কার্যক্রমে সুষ্ঠুতা বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারি সংস্থা এবং সংশ্লিষ্টদের সমন্বিত উদ্যোগ এই কবরস্থানের সুনাম পুনরুদ্ধার করতে পারে। ঢাকাবাসীর জন্য এটি শুধু একটি দাফনের স্থান নয়, বরং তাদের আবেগ এবং স্মৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আরো জানুন: সিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) ট্যুর এর জন্য যা জানা প্রয়োজন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *