যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির কাছে পোটোম্যাক নদীর ওপর মধ্যাকাশে যাত্রীবাহী বিমান ও সামরিক হেলিকপ্টারের ভয়াবহ সংঘর্ষে ৬৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এই ওয়াশিংটন বিমান দুর্ঘটনা-র পর উদ্ধারকারী দল জানিয়েছেন, বেঁচে থাকার কোনো আশা নেই।
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৫৩৪২ এবং ইউএস আর্মির হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ নদী থেকে উদ্ধার করা হলেও তীব্র স্রোত ও হিমশীতল পানির কারণে উদ্ধার কার্যক্রম জটিল হয়ে পড়েছে। গত ২০০৯ সালে নিউ ইয়র্কের বাফালোতে ৫০ জনের মৃত্যুর পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা।
ওয়াশিংটন বিমান দুর্ঘটনা: কী ঘটেছিল?
স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯:০০টায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোর ২:০০টা) রোনাল্ড রেগান ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণের ঠিক আগে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ক্রুজেট বিমানটি একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানায়, বিমানটি ক্যানসাসের উইচিটা থেকে উড্ডয়নের পর রুটিন ফ্লাইটে থাকলেও শেষ মুহূর্তে হেলিকপ্টারটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। বিমানটি কয়েকটি টুকরো হয়ে নদীতে ডুবে যায়, আর হেলিকপ্টারটি উল্টো হয়ে ভেসে ওঠে।
বিমানে ৬০ জন যাত্রী ও ৪ জন ক্রু ছিলেন । অপরদিকে, হেলিকপ্টারটিতে ছিলেন তিন সামরিক কর্মী, যাদের “অভিজ্ঞ দল” বলে উল্লেখ করেছেন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। জানা গেছে, হেলিকপ্টারটি ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভোয়ার থেকে রাতের প্রশিক্ষণ মিশনে বেরিয়েছিল।
বিমানের যাত্রীদের নামঃ
ডিসি ফায়ার অ্যান্ড ইএমএস প্রধান জন ডোনেলি বৃহস্পতিবার সকালে নিশ্চিত করেছেন, বিমান থেকে ২
৭ ও হেলিকপ্টার থেকে ১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাকিদের খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। তিনি বলেন, “পানির তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে, আর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকায় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।”
নিহতদের মধ্যে মার্কিন ও রাশিয়ার ফিগার স্কেটিং কমিউনিটির সদস্যরা রয়েছেন। মার্কিন ফিগার স্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন জানায়, ক্যানসাসে একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শেষে ফেরার পথে দলটি ওই ফ্লাইটে ছিলেন। রাশিয়ার ক্রেমলিনও নিহতদের মধ্যে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইভজেনিয়া শিশকোভা ও ভাদিম নাউমভের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
ওয়াশিংটন বিমান দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীদের চোখে
ঘটনাস্থলের কাছেই থাকা এরিয় শুলম্যান বলেন, বিমানটি হঠাৎ ডান দিকে ঝুঁকে আগুনের গোলায় জ্বলে উঠেছিল।
“একটি বিশাল আতশবাজির মতো দেখাচ্ছিল! বিমানের নিচ থেকে স্পার্ক বের হচ্ছিল, যা আমি আগে কখনো দেখিনি,”
রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ওয়াশিংটন বিমান দুর্ঘটনা-কে “জাতীয় ট্র্যাজেডি” আখ্যা দেন। এফএএ ও ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ড (এনটিএসবি) যৌথ তদন্ত শুরু করেছে। হেগসেথের মতে, হেলিকপ্টারটি নির্ধারিত ফ্লাইট পথে ছিল কি না, তা শিগগিরই নিশ্চিত হবে।
দুর্ঘটনার উদ্ধার কার্যক্রম
৩০০-এর বেশি উদ্ধারকর্মী রাবারের নৌকা, সোনার যন্ত্র ও ডাইভিং টিম নিয়ে কাজ করছেন। তবে পানির নিচে জমে থাকা বরফের টুকরো এবং তীব্র স্রোত তাদের কাজের গতি শিথীল করেছে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের সিইও রবার্ট আইসম এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।” আরো জানুনঃ গত ১০ বছরে বড় বিমান দুর্ঘটনা’র কারন এবং বাংলাদেশ বিমান এর ইতিহাস
তদন্তের জন্য বিমানের ব্ল্যাক বক্স ও হেলিকপ্টারের ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার খুঁজছে এনটিএসবি। এদিকে, LiveATC.net-এর একটি অডিও ক্লিপে শোনা যায়, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল হেলিকপ্টারকে সতর্ক করলেও কোনো উত্তর আসেনি। তবে এই অডিওর authenticity এখনো নিশ্চিত হয়নি।