গাজীপুর, ১৯ নভেম্বর দুপুর ০২:০৬
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড এর শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। ১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) সকাল ৮টা থেকে শ্রমিকরা তাদের অক্টোবর মাসের বেতন দাবিতে সড়ক অবরোধ শুরু করেন, যার ফলে ওই এলাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। এই বিক্ষোভ সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণ
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা তাদের অক্টোবর মাসের বেতনপরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। আফজাল হোসেন, বেক্সিমকো কারখানার একজন শ্রমিক জানান, “আমরা গত আগস্ট মাস থেকে বেতন পাচ্ছি না। এতদিন পেরিয়ে গেলেও অক্টোবর মাসের বেতন পাইনি, যার ফলে আমাদের পরিবার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।” এদিকে, ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড এর শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে কারখানাটি বন্ধ থাকায় এবং বেতন না পাওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের দাবী, “যতদিন না আমাদের বেতন দেওয়া হয়, ততদিন আন্দোলন চলবে।”
যানজট এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি
শ্রমিকদের এই আন্দোলনের কারণে চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধ হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এই সড়কটি গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, যা বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলকে সংযুক্ত করে। ফলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া: পুলিশের পদক্ষেপ
গাজীপুর পুলিশ এবং শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে। কাশিমপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, “আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছি এবং আশপাশের এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।” তবে শ্রমিকরা তাদের দাবির বিষয়ে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন এবং তারা সড়ক অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন।
ডরিন ফ্যাশন এবং বেক্সিমকো শ্রমিকদের ক্ষোভ
ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড এর শ্রমিকরা জানান, ১ নভেম্বর থেকে কারখানা বন্ধ রাখা হলেও তাদের বেতন বা কোনো ন্যায্যতা দেওয়া হয়নি। আসীমুল ইসলাম, একজন অপারেটর জানান, “আমরা জানি না কেন আমাদের কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে কোনো সমস্যা ছিল না। আমরা দ্রুত আমাদের কাজ পুনরায় শুরু করতে চাই।”
গাজীপুরের শিল্প খাতে বিরাজমান অস্থিরতা
গাজীপুরের এই শ্রমিক বিক্ষোভ আসলে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দীর্ঘকালীন সমস্যা বেতন না দেওয়া, শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা এবং বিচ্ছিন্ন আন্দোলন এরই অংশ। এর ফলস্বরূপ, প্রতিবাদকারীদের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের অন্যান্য কারখানায়, যেমন অ্যামাজন নীট কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
পরিণতি এবং স্থানীয় পরিস্থিতি
এই বিক্ষোভের কারণে গাজীপুরের অন্তত ১০টি পোশাক কারখানা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, শ্রমিকদের প্রতিবাদের কারণে কিছু এলাকায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে, যাতে বিক্ষোভ আরও ব্যাপক না হয়।
সমাপ্তি
গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এবং ডরিন ফ্যাশন লিমিটেড এর শ্রমিকদের এই বিক্ষোভ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যাগুলোর প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কেননা শ্রমিকদের বেতন, নিরাপত্তা ও অধিকারের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এখন পর্যন্ত, গাজীপুরের চন্দ্রা-নবীনগর সড়ক অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণের আরও সমস্যার মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও জানুনপ্রবাসী শ্রমিকদের জন্য লাউঞ্জ উদ্বোধন