তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

গোয়েন্দা ব্যর্থতাই পতনের কারণঃ আসাদুজ্জামান খান কামাল সাক্ষাৎকার

গোয়েন্দা ব্যর্থতাই পতনের কারণঃ আসাদুজ্জামান খান কামাল সাক্ষাৎকার
গোয়েন্দা ব্যর্থতাই পতনের কারণ বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি আসাদুজ্জামান খান কামাল 

বাংলাদেশের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সাক্ষাৎকারে দেওয়া এক বিস্ফোরক মন্তব্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি গত বছরের আগস্ট মাসে কিভাবে আওয়ামীলীগ এর পতন ঘটে তা বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেছেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল এখন কোথায় আছে?

গত ২৮ সেপ্টেম্বর, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইকো পার্কে আড্ডা দিচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। তার মুখে শ্বেত শুভ্র সাদা দাড়ি ছিল। এ সময় তার সাথে আরও কয়েকজন ছিলেন। ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অসহযোগ আন্দোলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে ভারত চলে যায়। পরদিন ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দিলে তিনি সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ হারান। এরপর থেকে তিনি অজ্ঞাতস্থানে আত্মগোপনে আছেন। তিনি ঢাকায় ৫ ও ৬ই আগস্ট অবস্থান করেছিলেন এবং গত ৭ই আগস্ট দেশ ছাড়েন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল সাক্ষাৎকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অজ্ঞাত স্থান থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, গত বছরের ৩রা আগস্ট থেকে ৫ই আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রায় ৪৬০টি থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ৫ হাজার ৮২৯টি অস্ত্র লুট করা হয়। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন থেকে এসএসএফের (বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী) অস্ত্রও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনাগুলো ইসলামী উগ্রবাদী এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভ্যুত্থানের ফল।

গোয়েন্দা ব্যর্থতাই ছিল ৫ আগস্টের পিছনে

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আসাদুজ্জামান খান কামাল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে, গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল আওয়ামীলীগ এর পতনের মূল কারণ। তিনি বলেন, “গোয়েন্দাদের রিপোর্ট সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে শুধু সারসংক্ষেপ আসে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, DGFI (ডিরেক্টর জেনারেল ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থাও এই ব্যর্থতার জন্য দায়ী। আরো জানুনঃসরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ বাতিল যে কারণে

DGFI এর কাজ কি?

DGFI এর কাজ হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি পরিচালনা করা। এছাড়া, প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক, সামরিক ও কৌশলগত পরিবর্তনগুলো পর্যবেক্ষণ করাও DGFI বা (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ডিজিএফআই-এর কোনো ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বা ভূমিকা নেই। সংস্থাটি সম্পূর্ণভাবে পেশাদার ও নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করে থাকে।

আওয়ামী লীগ নেতারা এখন কি করবে?

আসাদুজ্জামান খান কামাল মনে করেন, আওয়ামী লীগের পুনর্গঠনে দেরি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “দল পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুই বছর পর নতুন নেতাদের আসার কথা ছিল, কিন্তু আমরা তা করতে পারিনি।” তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে এবং তিনি দলের নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে আটক আছেন বা পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। আসাদুজ্জামান খান কামালের নিজের ছেলেও কারাগারে আছেন। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের কর্মীদের মনোবল অনেক উঁচু। শেখ হাসিনা ছাড়া তারা ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আইনের শাসন পুনরুদ্ধার করা গেলে তিনি দেশে ফিরে যেতে প্রস্তুত।  

ভারতের সহায়তা কামনা করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল ‍

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, “ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল। এখনও তারা কূটনৈতিকভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে।” তিনি বিশেষভাবে আদালতের কার্যক্রম পুনরুদ্ধার এবং আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানান। তার মতে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা অপরিহার্য।

বাংলাদেশের মিডিয়া কার দখলে?

কামাল বর্তমান সরকারের মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “গণমাধ্যম এখন সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তারা স্বাধীনভাবে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছে না।” তার মতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মিডিয়া আবারও সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে এবং জনগণের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আসাদুজ্জামান খান কামাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন,

“তার চেয়ারে বসার কোনো অধিকার নেই। তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতা নন।”

কামালের মতে, ড. ইউনূসের উচিত হবে পদত্যাগ করে সকল রাজনৈতিক দলকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই একমাত্র সমাধান।”

তিনি আওয়ামীলীগ এর যুব নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং বলেন, “আমার বয়স ৭৫ হতে চলেছে, আমি এখন বোনাস জীবনে আছি। ঝুঁকি নিতে আমি প্রস্তুত। তরুণরাও এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।” তার মতে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারও জেগে উঠবে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বক্তব্য

প্রেস উইং, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের দেওয়া তথ্যকে ভিত্তিহীন ও অসত্য বলে উল্লেখ করেছে। তার বক্তব্যে উল্লেখিত দাবিগুলো কোনো প্রমাণ বা যুক্তি দ্বারা সমর্থিত নয়। প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে এবং এ ধরনের মিথ্যা তথ্য প্রচারকে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *