চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিজের খামারের গরুর দুধ সরবরাহ করছেন চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) টিপু সুলতান। বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে দুধ বিক্রি এবং সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
অভিযোগ অনুযায়ী, কারাগারের ক্যান্টিনে বন্দীদের জন্য তাঁর খামারের দুধ সরবরাহ করা হয়, যার দাম রাখা হয় লিটারপ্রতি ১০০ টাকা। অথচ বাজারে কাঁচা দুধের পাইকারি দাম ৭০-৭৫ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৮০ টাকা। বর্তমানে এ কারাগারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বন্দী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী, এম এ লতিফ, ফজলে করিম সহ আরো অনেকে ।
কারাগারের নিয়ম লঙ্ঘন
বাংলাদেশ কারাবিধি অনুযায়ী, কোনো কারা কর্মকর্তা বা কর্মচারী বন্দীদের কাছে কোনো দ্রব্য বিক্রি বা ভাড়া দিতে পারেন না। এছাড়া, কোনো সরকারি কর্মকর্তা ব্যক্তিগত ব্যবসায় সরকারি কর্মচারীদের ব্যবহার করতে পারেন না।
কিন্তু চট্টগ্রামের ডিআইজি প্রিজন এই নিয়ম মানছেন না। অভিযোগ রয়েছে, কারাগারের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের (সুইপার) চারজনকে তিনি ব্যক্তিগত খামারে গরুর দেখভালের কাজে ব্যবহার করছেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গতকাল ছিলেন ৪ হাজার ৩০০ জন। এসব বন্দীর জন্য ১৬–১৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর দরকার। আছেন নয়জন। এর মধ্যে চারজন ডিআইজি প্রিজনের গরুর খামারের দেখভাল করেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে, ডিআইজি প্রিজন বলেন, ‘আগে লোকজন আরও বেশি ছিল। আমি কম ব্যবহার করছি।’ সূত্রঃ প্রথম আলো।
চট্টগ্রাম কারাগারে ক্যান্টিনে দুধ সরবরাহ
ডিআইজি প্রিজনের কার্যালয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কাছেই লালদিঘির পাড়ে অবস্থিত। সেখানেই তাঁর বাংলোর সামনে রয়েছে ১৩টি গরু ও বাছুরের খামার। গত ১০ মাস ধরে নিয়মিতভাবে এখান থেকে কারাগারের ক্যান্টিনে দুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকাল ১০টার পর এক ভ্যানে করে ডিআইজি প্রিজনের কার্যালয় থেকে কারাগারে দুধ সরবরাহ করা হয়। বন্দীদের জন্য ক্যান্টিনে দুধ ও দুধ-চা বিক্রি হয়। আরো জানুনঃ জাজিরা থানার ওসি আল-আমিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার:
বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা তরল দুধ বন্দীদের জন্য স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। কারণ এই দুধ কীভাবে সংগ্রহ করা হয়, সেটি পর্যবেক্ষণের কোনো নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা নেই। সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেছেন, এখনই বন্ধ করা না হলে ভবিষ্যতে বড় অঘটন ঘটতে পারে।”
কারা অধিদপ্তরের প্রতিক্রিয়া
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন বলেন, “কেউ অনুমতি নিয়ে দুটি গরু পালন করতে পারেন, কিন্তু দুধ বিক্রির বিষয়টি জানা ছিল না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।”
অন্যদিকে, ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান বলেন,
“দুধ অত বেশি দিই না, সামান্য। দামও বেশি রাখি না। এতে অসুবিধা কী?”