০৬ জানুয়ারি, ২০২৫ সোমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দল নতুন নেতা নির্বাচন করার পর তিনি লিবারেল পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। ৯ বছর ধরে কানাডার নেতৃত্বে থাকা এই রাজনীতিবিদের পদত্যাগের ঘোষণা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও দেশ-বিদেশে আলোড়ন তুলেছে।
জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের কারণ ও পরিবারের ভূমিকা
সংবাদ সম্মেলনে জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, নিজের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর ভাষায়,
“আমার পরিবারের সদস্যরা সবসময় আমার পাশে থেকেছে। আমার সফলতার পেছনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গত রাতে নৈশভোজের সময় সন্তানদের কাছে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়েছি।”
ট্রুডো আরও উল্লেখ করেন, পার্লামেন্টের বর্তমান অচলাবস্থা তাঁর পদত্যাগের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, “কানাডার রাজনীতিতে উত্তাপ কমিয়ে আনার জন্য এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। দেশের উন্নয়নে নতুন নেতৃত্ব প্রয়োজন।”
কানাডার লিবারেল পার্টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা ট্রুডো জানান, বর্তমানে পার্লামেন্টে কাজের পরিবেশ যথাযথ নেই। আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতবি থাকবে এবং এর মধ্যে লিবারেল পার্টি নতুন নেতা নির্বাচন করবে।
ট্রুডো বলেন, “দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই জটিল সময়ে নতুন নেতৃত্ব কানাডাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। এটি শুধু আমার দলের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।”
ট্রুডোর নেতৃত্ব ও অর্জন
জাস্টিন ট্রুডো ২০১৫ সালে লিবারেল পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রথমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে কানাডা বৈশ্বিক রাজনীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পায়।
- ২০১৯ এবং ২০২১ সালের নির্বাচনে ট্রুডো পুনরায় জয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
- জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অভিবাসন নীতিতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
- LGBTQ+ সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধার এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে ট্রুডোর জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়ে। আরো জানুনঃ চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী
জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগের কারণ
জাস্টিন ট্রুডো তাঁর পদত্যাগের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করেছেন।
- পার্লামেন্টের অচলাবস্থা: সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পার্লামেন্টে কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে, যা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
- উৎপাদনশীলতার ঘাটতি: রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ও নীতি বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়নি।
- পরিবারের প্রতি অঙ্গীকার: পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া।
- নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন: কানাডার রাজনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও উত্তাপ কমাতে নতুন নেতৃত্বের সময় এসেছে বলে তিনি মনে করেন।
- অভ্যন্তরীণ চাপ: তাঁর দল লিবারেল পার্টির ভেতর থেকেও নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য চাপ বাড়ছিল।
এই কারণগুলোর সমন্বয়ে ট্রুডো সিদ্ধান্ত নেন, এখনই সরে দাঁড়িয়ে নতুন নেতৃত্বকে সুযোগ দেওয়ার সঠিক সময়।
ট্রুডোর উত্তরসূরি কে হবেন?
ট্রুডোর পদত্যাগের পর লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে কে আসবেন, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম দুটি:
- ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড: সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী।
- মার্ক কারনি: কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা।
ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড গেলো ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকেই দলের ভেতরে ট্রুডোর ওপর নেতৃত্ব ছাড়ার চাপ বাড়তে থাকে।
নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি
কানাডায় আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচন সম্পন্ন হবে। নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার পরই দেশটির রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
FAQ: পাঠকদের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর
প্রশ্ন: জাস্টিন ট্রুডো কেন পদত্যাগ করলেন?
উত্তর: পার্লামেন্টের অচলাবস্থা, উৎপাদনশীলতার ঘাটতি এবং পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
প্রশ্ন: জাস্টিন ট্রুডোর পরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী কে হতে পারেন?
উত্তর: সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং মার্ক কারনির নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
প্রশ্ন: জাস্টিন ট্রুডো কতদিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন?
উত্তর: তিনি ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯ বছর কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রশ্ন: নতুন নির্বাচনের সময় কবে?
উত্তর: আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে কানাডায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রশ্ন: লিবারেল পার্টির নতুন নেতা কবে নির্বাচিত হবেন?
উত্তর: আগামী ২৪ মার্চের মধ্যে লিবারেল পার্টির নতুন নেতা নির্বাচিত হবেন।