ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল হত্যায় জড়িত ২১ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে, শাহবাগ থানা পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। সম্প্রতি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘটনার পটভূমি
২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর, ফজলুল হক মুসলিম হলে চুরির অভিযোগে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। দুপুরে হলের ছয়টি মোবাইল ফোন এবং মানিব্যাগ চুরির খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাত ৮টার দিকে তোফাজ্জল হোসেন হলের মাঠে প্রবেশ করলে, তাকে চোর সন্দেহে আটক করে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়।
তদন্তে উঠে আসা তথ্য অনুযায়ী, তোফাজ্জলকে তিন ধাপে মারধর করা হয়েছিল:
- প্রথমে তাকে অতিথি কক্ষে নিয়ে স্টাম্প দিয়ে মারধর করা হয়।
- পরে হলের ক্যানটিনে নিয়ে গিয়ে খাবার খাওয়ানোর পর আবার অতিথি কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
- মারধরের একপর্যায়ে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং রাত ১২টার দিকে হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
এই মারধরের ঘটনায় একাধিক পর্যায়ে মোট ২১ জন শিক্ষার্থী জড়িত ছিলেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তোফাজ্জল হত্যায় মামলা
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান জানান, অভিযোগপত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন ছাত্রের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অভিযুক্তের মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের নাম:
- মো. জালাল মিয়া
- সুমন মিয়া
- মো. মোত্তাকিন সাকিন
- আল হুসাইন সাজ্জাদ
- আহসানউল্লাহ
- ওয়াজিবুল আলম
পলাতক আসামিরা
অভিযোগপত্রে অন্তর্ভুক্ত বাকি ১৫ জন শিক্ষার্থী পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আরো জানুনঃ থানায় জিডি করার এক ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করতে হবে পুলিশকে।
আইনি প্রক্রিয়া: মামলা এবং অভিযোগপত্র
এই ঘটনার পরদিন, ১৯ সেপ্টেম্বর, শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি, ২৫ সেপ্টেম্বর তোফাজ্জলের বোন আসমা আক্তার ১৪ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে একটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে দুটি মামলার তদন্ত একত্রিত করে একটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রমাণিত হয়েছে যে, অভিযুক্তরা পরিকল্পিতভাবে তোফাজ্জলকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এমন সহিংসতার ঘটনায় সচেতন নাগরিকরা ন্যায়বিচারের দাবি করেছেন।
উপসংহার
ঢাবির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংগঠিত তোফাজ্জল হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। পুলিশ, প্রশাসন এবং বিচার বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে যেন দোষীরা শাস্তি পায় এবং এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
FAQs
কী কারণে তোফাজ্জল হোসেনকে হত্যা করা হয়?
তাকে চোর সন্দেহে আটক করে মারধর করা হয়, যার ফলে তার মৃত্যু হয়।
মামলায় অভিযুক্ত কতজন ছাত্র?
এই মামলায় ২১ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বর্তমান অবস্থা কী?
গ্রেপ্তারকৃত ছয়জন আদালতে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
প্রশাসন নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি এই মামলায় পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করছে।