থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে আতশবাজি ও পটকা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে এই আহ্বান জানানো হয়। আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
থার্টি ফার্স্ট নাইট মানে কী?
থার্টি ফার্স্ট নাইট ইংরেজি ক্যালেন্ডারের বছরের শেষ রাত। এটি নতুন বছরের সূচনার আগের দিন উদযাপনের একটি সময়। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি উদযাপন করা হয় আতশবাজি, সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং নানা পার্টির মাধ্যমে। তবে, বাংলাদেশের মতো দেশে এই উদযাপন অনেক সময় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এর বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অতিরিক্ত শব্দে শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক অস্থিরতা, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এর আগে একটি থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজির শব্দে ভীত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ইসলাম কি বলে
ইসলামে এমন কোনো কর্মকাণ্ড সমর্থন করা হয় না, যা অপচয়, অনৈতিকতা বা সমাজে অসুবিধার সৃষ্টি করে। হাদিসে বলা হয়েছে,
“যে ব্যক্তি তার প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়, সে মুমিন হতে পারে না।“
আতশবাজি ও পটকার শব্দ প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয় এবং সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে।
কুরআনের সূরা আল-ইসরা’র ২৬-২৭ আয়াতে অপচয়ের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে,
“অপচয়কারী শয়তানের ভাই; এবং শয়তান তার প্রভুর প্রতি অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ।“
আতশবাজি ও পটকার পরিবেশগত প্রভাব
আতশবাজি ও পটকা ফোটানো শুধু শব্দদূষণই নয়, বায়ুদূষণেরও প্রধান কারণ। এটি কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইডের মতো ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত করে, যা জনস্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ৭ বিধি লঙ্ঘন করে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি বা পটকা ফোটালে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং পুনরায় একই অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।
পরিবেশবান্ধব থার্টি ফার্স্ট উদযাপন
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সরকারী নীতিমালা ভঙ্গ না করে পরিবেশবান্ধব উপায়েও করা যেতে পারে। পরিবেশের ক্ষতি না করে আনন্দ করার কিছু উপায় জানুন এখানে
- পরিবার ও বন্ধুরা মিলে ঘরোয়া আয়োজন করুন।
- আলোসজ্জা দিয়ে ঘর ও আশপাশ সাজান।
- সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা গল্পের আসর করুন।
- সামাজিক ও দান কার্যক্রমে অংশ নিন।
সমাজ ও প্রতিবেশীদের প্রতি দায়িত্ব
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে প্রতিবেশীদের কষ্ট না দেওয়া এবং সামাজিক দায়িত্ব পালন করা জরুরি। এমন কিছু কাজ করতে পারেন, যা সবাইকে আনন্দিত করে এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ:
- শব্দ ও ধোঁয়া তৈরি করে এমন কার্যক্রম এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে উদযাপন করুন।
- শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ যত্নশীল থাকুন।
উপসংহার
থার্টি ফার্স্ট নাইট আনন্দের একটি বিশেষ দিন। তবে, পরিবেশ, সমাজ এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়াতে আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। পরিবেশবান্ধব উদযাপন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার মাধ্যমে এই রাতটি সত্যিই অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে। আরো জানুন ২০২৫ সালের ক্যালেন্ডার: সবার আগে জানুন সরকারি ছুটি ২০২৫ কবে কবে?
জিজ্ঞাসা ও উত্তর (FAQs)
১. থার্টি ফার্স্ট নাইট মানে কী?
থার্টি ফার্স্ট নাইট হলো ইংরেজি ক্যালেন্ডারের বছরের শেষ রাত, যা বিশ্বজুড়ে নতুন বছরের আগমনী আনন্দে উদযাপন করা হয়।
২. আতশবাজি ও পটকা কেন ক্ষতিকর?
আতশবাজি ও পটকা শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ সৃষ্টি করে, যা জনস্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩. ইসলাম থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পর্কে কী বলে?
ইসলাম অপচয় এবং প্রতিবেশীর অসুবিধার বিরুদ্ধে। যেকোন পরিস্থিতিতে সংযমী এবং নৈতিকতার সঙ্গে চলাই ইসলামি দৃষ্টিতে সঠিক।
৪. পরিবেশবান্ধব থার্টি ফার্স্ট উদযাপন কীভাবে সম্ভব?
আতশবাজি বা পটকার পরিবর্তে ঘরোয়া আয়োজন, আলোসজ্জা, গল্পের আসর বা সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উদযাপন সম্ভব।
৫. থার্টি ফার্স্ট নাইটে আইন লঙ্ঘন করলে কী শাস্তি হতে পারে?
শব্দদূষণ আইন লঙ্ঘন করলে প্রথমবার এক মাস কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা এবং দ্বিতীয়বার ছয় মাস কারাদণ্ড বা দশ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।