দরবেশ বাবা’র প্রতারণা: স্ক্যাম করে হাতিয়ে নিলো ৫.৮৬ কোটি টাকা!
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দরবেশ বাবা’র প্রতারণার একটি অবিশ্বাস্য কাহিনি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। ফেসবুকের একটি বিজ্ঞাপন থেকে শুরু হওয়া প্রতারণায় এক অবসরপ্রাপ্ত নার্স হারিয়েছেন তার জীবনের সঞ্চিত ৫.৮৬ কোটি টাকা। এই প্রতারণায় ব্যবহৃত হয়েছে ভয়েস-চেঞ্জিং প্রযুক্তি, মুখরোচক আধ্যাত্মিক গল্প এবং অসাধারণ অভিনয়ের কৌশল।
কীভাবে শুরু হলো প্রতারণা?
২০২২ সালে ঢাকার এক নার্স, যিনি একজন বিশিষ্ট চিকিৎসকের স্ত্রী, তার স্বামীর প্রতি সন্দেহ থেকে ফেসবুকে একটি বিজ্ঞাপনে নজর দেন। বিজ্ঞাপনটিতে দাবি করা হয়, বৈবাহিক সম্পর্কের সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে আধ্যাত্মিক উপায়ে। হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় তিনি বিজ্ঞাপনের ‘দরবেশ বাবা’ র সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
‘দরবেশ বাবা’ নিজেকে মদিনার প্রাক্তন ইমাম এবং চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ‘জিন’ ও আধ্যাত্মিক শক্তির মাধ্যমে তিনি তার সমস্যার সমাধান করতে পারবেন।
প্রতারণার কৌশল: সুপারন্যাচারাল স্ক্যাম
প্রথমে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৯,০০০ টাকা চাওয়া হয়। এরপর এক বছরের মধ্যে তার কাছ থেকে ধাপে ধাপে মোট ৫.৮৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি। প্রতারণার অংশ হিসেবে তারা ভয়েস-চেঞ্জিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজেদের ‘জিন’, ‘ফেরেশতা’, এবং ২০০ বছরের পুরনো ‘দরবেশ বাবা’ হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়।
তারা ভুক্তভোগীকে বারবার বলে, টাকা দিলে ‘জাদু’ সফল হবে। কোনো প্রশ্ন তোলা বা কারও সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করলে ‘জাদু ভেঙে যাবে’ বলে ভয় দেখায়। তাদের নির্দেশে ভুক্তভোগী নিজের অবসরকালীন সঞ্চয়, স্বর্ণ বন্ধক রাখা এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে ধার করে টাকার জোগান দেন।
বিলাসী জীবন কাটিয়েছে প্রতারক চক্র
ভুক্তভোগীর কষ্টার্জিত অর্থে প্রতারক তানজিল আহমেদ কিনেছেন একটি হোন্ডা ভেজেল গাড়ি এবং একটি সুজুকি মোটরসাইকেল। অপর প্রতারক মোহাম্মদ হাসেম ঢাকার মিরপুরে একটি ৮৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং গ্রামে একটি দু’তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। তারা অনলাইনে জুয়া এবং ব্যবসায়ও অর্থ ব্যয় করেছেন।
অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং আইনি প্রক্রিয়া
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভুক্তভোগী মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বিষয়টি তদন্ত করে। অক্টোবরে সিআইডি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়, যেখানে প্রতারণার সম্পূর্ণ বিবরণ উঠে আসে।
তদন্তে আরও জানা যায়, হাসনাইন ওরফে হাসান নামে তানজিলের অফিসের এক কর্মচারীও এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনজনই গ্রেপ্তার হলেও পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান।
সামাজিক মাধ্যমে প্রতারণা থেকে সাবধানতার পরামর্শ
সিআইডি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীদের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে,
“সামাজিক মাধ্যমের যে কোনো অস্বাভাবিক বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলুন এবং অপরিচিত ব্যক্তির কাছে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।”
প্রতারণার শিকার এড়াতে কী করবেন?
- মুখরোচক বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলুন: ফেসবুক বা অন্য সামাজিক মাধ্যমে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন থেকে দূরে থাকুন।
- প্রমাণ যাচাই করুন: যে কারও আধ্যাত্মিক বা অলৌকিক দাবি যাচাই করুন।
- গোপনীয়তা রাখবেন না: কাউকে অর্থ দিতে বললে সেটা পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করুন।
- প্রতারণার শিকার হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।*
উপসংহার
এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত ক্ষতির উদাহরণ নয়, বরং সামাজিক মাধ্যমে প্রতারণার ক্রমবর্ধমান প্রবণতার প্রতিচ্ছবি। সতর্ক থাকুন এবং এই ধরনের প্রতারণা থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে রক্ষা করুন।
আরো জানুন: সাদ কে গ্রেফতার করলো র্যাব