তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

৭ এপ্রিল, নো ওয়ার্ক নো স্কুল – গাজার সর্বশেষ খবর

‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’আপডেট - গাজার সর্বশেষ খবর
‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল’আপডেট – গাজার সর্বশেষ খবর   

৭ এপ্রিল ২০২৫, রবিবারঃ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী  হরতাল পালনের আহ্বান জানিয়েছেন নিপীড়িত গাজাবাসী । গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের প্রতিটি দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে সংহতির বার্তা জানাতে এই আহ্বান ছড়িয়ে পড়েছে।

এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজ থেকে আহ্বানে সাড়া মিলেছে।

বাংলাদেশে ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচি

এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।  এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা জানান—

“গাজায় যখন শিশু-মহিলাসহ নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন আমরা কেবল পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পারি না। এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

শিক্ষার্থী সুমাইয়া বিনতে মান্নান বলেন—

“এটা ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নয়, বরং মানবিক ব্যাপার। পুরো দুনিয়া চুপ করে থাকলে আমরা কথা বলব।”

সারজিস আলম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (উত্তরাঞ্চল) সংগঠক বলেন—

“৭ এপ্রিল কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নয়, বরং ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষ হয়ে রাজপথে দাঁড়াতে হবে।”

ঢাবি ছাত্রনেতা মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ ও এ বি জোবায়ের সবাইকে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।

গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতিঃ

০৭ এপ্রিল ২০২৫: নারী-শিশুর মরদেহ তুলে আনলেন প্রতিবেশীরা। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র হামলায় ডজনখানেক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারির বরাতে জানা যায়, এই হামলার লক্ষ্য ছিল বসতবাড়ি ও অস্থায়ী তাঁবুগুলো, যেখানে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে জড়ো হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ।

গাজার সর্বশেষ পরিস্থিতিঃ
১৫ জন মৃতের মধ্যে ৫ জন শিশু ও ৫ জন নারী। মৃতদের জানাযায় অংশ নিচ্ছে স্বজনেরা- আলজাজিরা

স্থানীয় বাসিন্দা জামাল আল-মধৌন জানান, “আমরা শান্তভাবে ঘুমাচ্ছিলাম… হঠাৎই বাড়িগুলো ধ্বংস হয়ে গেলো, ছাদ ধসে পড়ে নারী-শিশুদের মাথার ওপর। এমন ভারী মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছে, যা দিয়ে পাহাড় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।” তিনি বলেন, “আমরা আটটি মরদেহ বের করেছি—সবাই নারী ও শিশু। একজন পুরুষও ছিল না।

ওরা বলে তারা যোদ্ধাদের টার্গেট করছে—সব মিথ্যা। তাদের আসল লক্ষ্য হলো মুসলমান পরিচয়ধারী যে কোনো মানুষকে হত্যা করা।”

 

প্রতিদিন শতাধিক শিশু হতাহত:

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা আবারও শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০-এর বেশি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাকারী সংস্থা UNRWA-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে বলেন, “শিশু হত্যার কোনো ন্যায্যতা নেই।” তিনি আরও বলেন,

UNRWA-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এর পোস্ট
UNRWA-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এর পোস্ট

সোর্স

“ইসরায়েল গাজা অঞ্চলকে শিশুদের জন্য একপ্রকার ‘নো-ল্যান্ড’ বা নিষিদ্ধ ভূমিতে পরিণত করেছে। অসহায় শিশুরা এমন এক যুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছে, যেটি তারা কখনো শুরুই করেনি।”

লাজারিনি এই অব্যাহত শিশুহত্যাকে “আমাদের সম্মিলিত মানবতার ওপর এক গভীর কলঙ্ক” হিসেবে অভিহিত করেন।  আরো জানুনঃ ভারতের ওয়াকফ বিল পাশ হলে যে ৫টি বড় সমস্যা হবে

UNICEF-এর হুঁশিয়ারি:

UNICEF-এর হিসাব অনুযায়ী, গত ১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি নতুন হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৩২২ শিশু নিহত হয়েছে।

১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি নতুন হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৩২২ শিশু নিহত হয়েছে।
১৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি নতুন হামলায় গাজায় কমপক্ষে ৩২২ শিশু নিহত হয়েছে- আল জাজিরা

শিশুদের জন্য এই সহিংসতা যেন আবার নতুন করে বিভীষিকার চক্র শুরু করেছে। UNICEF-এর নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, “দুই মাসের নাজুক যুদ্ধবিরতি গাজার শিশুদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় আশার বাতিঘর হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই আশার আলো আবারও মুছে যাচ্ছে। শিশুদের ফের তীব্র সহিংসতা ও দৈনন্দিন বঞ্চনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।”

১৭,০০০ শিশুর মৃত্যুর দায় কার?

ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ শিশু হত্যাযজ্ঞের রচনা করছে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া আগ্রাসনে ১৭,০০০-এর বেশি শিশু গাজায় নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৫ এপ্রিল ‘ফিলিস্তিন শিশু দিবস’ উপলক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই সংখ্যা শুধুই পরিসংখ্যান নয়, বরং প্রতিটি শিশুর পেছনে রয়েছে এক একটি গল্প, স্মৃতি ও হারিয়ে যাওয়া ভবিষ্যৎ।

গাজার সর্বশেষ খবর

UNRWA-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

গাজার সর্বশেষ খবর
গাজার সর্বশেষ খবর- আব্দুল হাদি নামক ফিলিস্তিনির বাড়ির ধ্বংসাবশেষ

গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে, এবং এতে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সংস্থাটি জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ বারবার স্থানচ্যুত হয়েছে, যাদের মধ্যে হাজার হাজার শিশু রয়েছে। শিশুদের জীবনের স্বাভাবিকতা ও নিরাপত্তা আজ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই বাস্তুচ্যুতি এক নতুন মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে গাজাকে।

ইসরায়েল মানবাধিকার লঙ্ঘন এর সীমা পাড় করেছে

আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ৫০,৬০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশই শিশু ও নারী। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গ্যালান্ট-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ)-এ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলমান রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হয়ে উঠছে, বিশেষ করে যখন শিশুদের জীবন হুমকির মুখে।

৭ এপ্রিল নো ওয়ার্ক নো স্কুল

৭ এপ্রিল শুধুমাত্র একটি দিন নয়, এটি হতে পারে  গণমানবিক সংহতির একটি জোরালো বার্তা । গাজাবাসীর আর্তনাদ ও তাদের জীবনের জন্য লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!