তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

পৃথিবীর টপ ১% সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস: কেন তারা এত সফল?

পৃথিবীর টপ ১% সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস: কেন তারা এত সফল?
পৃথিবীর টপ ১% সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস: কেন তারা এত সফল?

টপ ১% সফল ব্যক্তিদের কাছে আছে পুরো পৃথিবীর ৪৬% সম্পদ। কেন তারা এত সফল? উত্তর একটাই। সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস এবং মনমানসিকতা। একটা মজার উদাহরণ দেওয়া যাক। ভাবুন, আপনি প্রতিদিন সকালে আলার্ম বন্ধ করে আরও ১০ মিনিট ঘুমান, কিন্তু ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ততক্ষনে ৫ কিলোমিটার দৌড় শেষ করে জর্জিনার সাথে নাস্তা করছে। কে জিতবে? আমি বলছি না আপনি সকালে উঠে দৌড়ালেই পৃথিবী জয় করে ফেলবেন । কিন্তু বর্তমানে সফল ব্যক্তিদের অভ্যাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সিক্রেট জানলে, তা আপনার জীবন বদলে দিতে পারে। এই নিয়ে আজকের পর্যালোচনা।

সফল হওয়া কি রকেট সায়েন্স? না, এটা অভ্যাসের খেলা!

সফল ব্যক্তিরা সকালে এমন কিছু করেন যা তাদের মন ও শরীরকে শক্তিশালী করে। টপ ১% ব্যক্তিদের বেশিরভাগই সকালে মেডিটেশন বা ধ্যান করেন আর শরীরচর্চার মাধ্যমে দিনের শুরু করেন। এতে তারা মানসিক শান্তি পান এবং কাজে মনোযোগ দিতে পারেন।

যা করবেন :

  • সকাল শুরু করুন এক গ্লাস পানি, মেডিটেশন দিয়ে।
  • মেডিটেশন বা নিজ নিজ ধর্মানুযায়ী প্রার্থনা করুন।

যা করবেন না :

  • ঘুম থেকে উঠেই ফোন স্ক্রল করা বন্ধ করুন।
  • দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা এড়িয়ে চলুন।

একটি সুপার পাওয়ার: সারাদিনের পরিকল্পনা করা

আপনার লক্ষ্য যদি পরিষ্কার না হয়, তবে সাফল্যের চেহারা শুধু স্বপ্নেই দেখবেন ? বিল গেটস প্রতিদিন সকালেই তার কাজের তালিকা ঠিক করে ফেলেন। দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে করেন। ব্রায়ান ট্রেসির Eat That Frog বই ব্যক্তিজীবনে সময়ের কাজ সময়ে করা এত কঠিন কেন এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন,

“আপনার যদি একটি বড় ব্যাঙ খেতে (কঠিন কাজ) হয়, তবে সকালে সেটি করুন।”

এর মানে দিন শুরুতেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করুন। David Goggins এর মজার একটি উদাহরণ দেই—আপনার যদি সকালে উঠেই কষ্টকর এক্সারসাইজ করতে পারেন, তখন দিনের বাকি সময়টা আপনার কিছুই মনে হবে না। যে কাজ এখনই/অবশ্যই করতে হবে, যে কাজ একটু পরে করলেও সমস্যা নেই এবং যে কাজে সময় নষ্ট এই ৩ ক্যাটাগরী মাথায় রেখে দিনের পরিকল্পনা করতে পারেন।

যা করবেন :

    • প্রতিদিন তিনটি প্রধান কাজ ঠিক করুন। এগুলোর পাশাপাশি ২য় প্রায়োরিটির কাজগুলো সেরে নিন।
    • সময়মতো কাজ শেষ করার চেষ্টা করুন।

যা করবেন না :

    • ফালতু কাজ নিয়ে সময় এবং চিন্তাশক্তি নষ্ট করবেন না।

বই পড়ার অভ্যাস

ইন্টারনেট এর দুনিয়ায় বই পড়া এখন একেবারেই সেকেলে। আপনি বলতে পারেন যে, আমি মোবাইলে Pdf পড়ি। একই বই আপনি লাইব্রেরী থেকে কিনে পড়লেন। দুইটি সিনারিওর মধ্যে লাইব্রেরীর বই এর প্রভাব আপনার মস্তিষ্কে বেশি পড়বে। কারন, বই আপনি হাতে ধরতে পারছেন এবং পাতা উল্টাতে উল্টাতে আপনার মস্তিষ্ক এটা বুঝতে পারছে। অন্যদিকে মোবাইলে Pdf পড়তে পড়তে ফেসবুকের নোটিফিকেশন কাটতে কাটতে কত নাম্বার পাতায় ছিলেন তা ভুলে যাবেন।

ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা বই পড়ে কাটান। তার মতে, “টাকা বিনিয়োগের চেয়ে জ্ঞান বিনিয়োগ বেশি লাভজনক।”

যা করবেন :

  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • অডিওবুক বা পডকাস্ট শুনুন।

যা করবেন না :

নতুন দক্ষতা অর্জন

জেমস ক্লিয়ার তার বিখ্যাত বই Atomic Habits বই এ বলেছেন,

“আপনি প্রতিদিন নিজেকে ১% উন্নতি করার চেষ্টা করুন, বছরে ৩৭ গুণ বেশি ভালো হয়ে যাবেন।”

বই আর ভিডিও দেখে রকেট সায়েন্স শেখা একজন ব্যক্তি আজকে নাসা’র মতো প্রতিষ্ঠানকে টেক্কা দিচ্ছে । ব্যক্তিটির নাম জানলে কমেন্টবক্সে জানাবেন। তার থেকে বড় উদাহরণ আর কি হতে পারে? আপনার পছন্দের যেকোন নতুন স্কিল শেখার চেষ্টা করুন।

নিজেকে একা করুন। আপনি যদি টপ ১% হতে চান, তাহলে বাকি ৯৯% আপনাকে নিয়ে কি ভাবলো তা নিয়ে সময় নষ্ট করা বন্ধ করতে হবে।

যা করবেন :

  • প্রতিদিন ৩০ মিনিট আপনার নতুন স্কিল এর পেছনে ব্যয় করুন। হোক তা ধর্মীয় বা পার্থিব।
  • প্রথমে ভুল হবেই, এটা মেনে নিয়েই এগিয়ে যান এবং পিছেনে ঘুরে তাকাবেন না।

যা করবেন না :

  • নতুন কিছু শেখার জন্য মানুষ আপনার পেছনে কি বলল তা ভেবে সময় নষ্ট করবেন না।

 ডিজিটাল ডিটক্স: মোবাইলের দাসত্ব থেকে বেরিয়ে আসুন

২ ঘন্টায় ম্যারাথন দৌড়ানো সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হলেও, পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো মোবাইল এর দাসত্ব থেকে বেড়িয়ে আসা। ১.৫৯.৪০ সেকেন্ডে তো মানবজাতি ম্যারাথন দৌড়ে শেষ করেছে কিন্তু এই সময়টুকু মোবাইল ছাড়া কি আপনি থাকতে পারবেন? মন থেকে পাওয়া প্রশ্নের উত্তর কমেন্টবক্সে জানাবেন।

বাংলাদেশের মানুষের Reels দেখে সময় নষ্ট করার পরিসংখ্যান খুবই ভয়াবহ। যতক্ষণ মোবাইলে Reels দেখেছেন, ততক্ষণে অনেকে লাখ টাকা কামিয়ে ফেলেছে। স্টিফ জবস, মার্ক জাকারবার্গ এবং সুন্দর পিচাই সারাদিনে ১০ মিনিটের বেশি মোবাইল ব্যবহার করে না। কিন্তু আপনি তাদের বানানো প্লাটফর্মে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় করছেন।

যা করবেন :

যা করবেন না :

  • সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি নোটিফিকেশনে দেখা প্রয়োজনীয় মনে করবেন না। সারাদিনে ৩০ মিনিট বা এর কম সময় বরাদ্দ রাখুন শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় যোগাযোগ মাধ্যম এর জন্য।

সফলতার চাবিকাঠি: উদ্ভাবনী মনমানসিকতা:

সফল মানুষরা যেকোন সমস্যাকে ১০টি দিক থেকে দেখেন। ক্যাল নিউপোর্ট বলেছেন, “গভীর মনোযোগের অভ্যাস গড়ে তুলুন, তবেই সাফল্য ধরা দেবে।” মোবাইলের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন এবং নিরিবিলি জায়গায় কাজ করুন।

একসঙ্গে একাধিক কাজ করলে আপনার চিন্তা করার শক্তি কমে যায়। নিজেকে ChatGpt না ভেবে মানুষ মনে করুন এবং একটি কাজ শেষ করে তবেই অন্যটি শুরু করুন।

যা করবেন :

  • আপনার চিন্তাভাবনায় ভিন্নতা আনুন এবং সৃজনশীল মানুষদের সাথে চলাফেরা করুন।
  • প্রতিদিন ১০ মিনিট নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাবুন।

যা করবেন না :

  • পুরনো পদ্ধতিতে আটকে থাকবেন না।

উপসংহার:

সান জু তার বইতে বলেছেন,

“যদি আপনি নিজেকে জানেন এবং আপনার শত্রুকে জানেন, তবে একশো যুদ্ধেও আপনি হারবেন না।”

প্রত্যেকের জীবন একটি যুদ্ধক্ষেত্র। এবং এই যুদ্ধক্ষেত্রে জয়ী আপনাকে হতেই হবে। সফলতার মূল সংজ্ঞা অর্থ নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রন এবং আত্মতুষ্টি। সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ধৈর্য এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে সঠিক পথে চলুন। আপনার অভ্যাসই আপনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

FAQs

জীবনে সফলতা কি?
সফলতা মানে আপনার লক্ষ্য অর্জন করা। এটি আপনার কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক অভ্যাসের ফল। এর মূল সংজ্ঞা অর্থ/টাকা ‍উপার্জন নয়, বরং আত্মনিয়ন্ত্রন এবং আত্মতুষ্টি।

একজন সফল মানুষের দৈনন্দিন রুটিন কি?
তাদের রুটিনে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, শরীরচর্চা, সারাদিনের পরিকল্পনা করা, এবং সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো ।

জীবনে সফল হওয়ার জন্য নিচের কোনটি এড়ানো উচিত?
অলসতা, সময় নষ্ট করা, এবং মানুষ কি ভাববে তার নেতিবাচক চিন্তা।

সফল হওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ কোনটি?
আত্মবিশ্বাস, স্থিরতা, এবং ইতিবাচক মনোভাব।

সফল মানুষ কি উপভোগ করে?
তারা কঠিন কাজের মধ্যেও আনন্দ খুঁজে নেন এবং লক্ষ্য অর্জনের পর আত্মতৃপ্তি পান।

কিছু মানুষ কেন বেশি সফল হয়?
কারণ তারা পরিকল্পনা করেন, পরিশ্রম করেন, এবং সঠিক অভ্যাস অনুসরণ করেন।

কিভাবে খুব সফল হওয়া যায়?
সময়ের সদ্ব্যবহার করুন, ধৈর্য ধরে কাজ করুন এবং সঠিক অভ্যাস তৈরি করুন,

সাফল্যের জন্য সবচেয়ে কার্যকর বই কোনটি?
আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী সব বইই কার্যকর। তবে শুরু করার জন্য ‘ইট দ্যাট ফ্রগ’, ‘অ্যাটমিক হ্যাবিটস’ এবং ‘দ্য আর্ট অফ ওয়ার’ অসাধারণ।

৩ thoughts on “পৃথিবীর টপ ১% সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস: কেন তারা এত সফল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *