প্রথম আলো রাজশাহী অফিসে হামলা
সম্প্রতি প্রথম আলো-এর রাজশাহী ও ঢাকার অফিসে হামলা ঘটে। সোমবার, ২৫ নভেম্বর, রাজশাহীর কুমারপাড়া এলাকায় প্রথম আলো-এর অফিসে কিছু ব্যক্তি হামলা চালান। তাঁরা অফিসের সাইনবোর্ড খুলে সেটিতে আগুন লাগান। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, এবং ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করেন এবং স্লোগান দেন। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দেন এবং ক্রেতারা নিরাপত্তার অভাবে সরে যান।
রাজশাহীর ঘটনায় ‘আলেম ওলামা ও তাওহীদি জনতা, রাজশাহী’ নামক ব্যানারে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা অফিসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তাঁরা অফিসের সামনে আগুন জ্বালান এবং প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের পত্রিকার কপিতে অগ্নিসংযোগ করেন।
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ এর প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে সোমবার বিকেলে ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন,
‘প্রথম আলো নিয়ে একটি উত্তেজনা দেখতে পাচ্ছি কয়েক দিন ধরে। গতকালও এ রকম উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল অফিসের সামনে। আজকে রাজশাহীতে তাদের অফিসে ভাঙচুর হয়েছে এবং চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে। আমাদের বক্তব্যটি হচ্ছে, কোনো গণমাধ্যম বা পত্রিকার বিরুদ্ধে যদি জনগণের কোনো অংশের অভিযোগ থাকে, ক্ষোভ থাকে, তারা সেটি প্রকাশ করতে পারে, তবে সেটি অবশ্যই শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে।’
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন,
‘কোনো পত্রিকা অফিসে ভাঙচুর করা, পত্রিকা বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ করা সেটা আমরা সমর্থন করি না। এই ধরনের ঘটনা পরবর্তীতে ঘটলে টলারেট (সহ্য) করা হবে না।’
ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন,
‘ক্ষোভ থাকলে শান্তিপূর্ণভাবে তা প্রকাশ করতে হবে। সভা সমাবেশের অধিকার সবার রয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তা আইনগত প্রক্রিয়ায় তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই।’
সামাজিক মাধ্যমে উসকানি
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু প্রচারণা চালানো হচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রচারণার পেছনে কিছু সংগঠিত গোষ্ঠীর হাত রয়েছে, যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দিতে চাইছে।
নাহিদ ইসলাম ব্রিফিংয়ে বলেন,
‘অহিংস গণ-অভ্যুত্থান’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ভোররাত থেকে ঢাকায় সাধারণ মানুষকে বাস ও মাইক্রোবাসে এনে মিথ্যা প্রচারণা করেছে। ওই প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা
রাজশাহীর ঘটনায় স্থানীয় থানার ওসি প্রথমে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে পরবর্তী সময়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। একইভাবে চাঁদপুর, বরিশাল, এবং চট্টগ্রামে প্রথম আলো কর্মীদের হুমকি দেওয়া হয়।
চাঁদপুরের এক সাংবাদিক এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপরাধীদের চিহ্নিত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুসংবাদ মেলেনি।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের হুমকি
প্রথম আলো’’র কর্তৃপক্ষের দাবি, এটি শুধু একটি পত্রিকার ওপর আক্রমণ নয়, বরং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের বিরুদ্ধে হুমকি। সাংবাদিকরা যদি নিজেদের নিরাপত্তাহীন মনে করেন, তাহলে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ সংকুচিত হয়ে পড়বে।
জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোও বাংলাদেশের বর্তমান গণমাধ্যম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সরকারের করণীয়
সরকারের উচিত দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। এছাড়া, গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
উপসংহার
প্রথম আলো অফিসে হামলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
আপডেট জানতে আমাদের সাইটে চোখ রাখুন। আরো জানুন :জোমাটোর চিফ অব স্টাফ পদের শর্ত: বেতন নেই, ফি ২০ লাখ???