বাংলাদেশ পাকিস্তান ফ্লাইট আবারও শুরু হতে যাচ্ছে, যা দুই দেশের মধ্যে পর্যটনখাত ও বাণিজ্যখাতকে নতুন গতি দেবে। ঢাকা করাচি ফ্লাইট চালু হওয়ার এই উদ্যোগ আগ্রহী বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে। এই লেখায় ঢাকা করাচি সরাসরি ফ্লাইট, পাকিস্তানের দর্শনীয় স্থান এবং কেন পাকিস্তান ভ্রমণ, ভারতের চেয়ে আলাদা ও বিশেষ তা নিয়ে আলোচনা করব।
পাকিস্তানের ফ্লাইট কেন বন্ধ ছিল?
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাস জটিল হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নতির দিকে এগিয়েছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান ফ্লাইট বন্ধ হয় ২০১৫ সালে, যা দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগকে কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছিল। তবে, সম্প্রতি দুই দেশের সরকার পুনরায় সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ) এই উদ্যোগকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে।
ঢাকা টু করাচি সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে শুধু পর্যটনই নয়, বাণিজ্যিক সম্পর্কও আরও জোরদার হবে। বাংলাদেশের পাট, টেক্সটাইল ও ওষুধ রপ্তানি এবং পাকিস্তান থেকে কাপড়, রাসায়নিক ও যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে এই ফ্লাইট সেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে অর্থনীতিবিদরা।
ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তান ফ্লাইট কেন লাভজনক?
১. সংস্কৃতি ও ভাষার মিল: পাকিস্তানের সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্য বাংলাদেশের সাথে অনেক মিল আছে।
২. প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: পাকিস্তানের হুনজা ভ্যালি, স্কার্দু এবং নাঙ্গা পর্বতের মতো জায়গাগুলো খুবই সুন্দর। প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এগুলো স্বর্গের মতো। এ নিয়ে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা আছে।
৩. ভিসা সহজ: পাকিস্তানে ভিসা পাওয়া খুব সহজ এবং দ্রুত। পাকিস্তান এর অফিশিয়াল সাইট এবং পাকিস্তানে বাংলাদেশ এম্বাসীর নিয়মানুযায়ী সহজে ভিসা আবেদন করা যায়।
৪. খরচ কম: পাকিস্তান ভ্রমণ ভারত বা অন্যান্য পার্শ্ববর্তী দেশের চেয়ে সস্তা। থাকা-খাওয়া এবং যাতায়াতের খরচ কম।
৫. নতুন অভিজ্ঞতা: বৈদেশিক ভ্রমণপিপাসুদের জন্য পাকিস্তান হতে পারে আপনার নতুন গন্তব্যস্থল। নতুন জায়গা, নতুন খাবার এবং নতুন সংস্কৃতির পাশাপাশি ঐতিহাসিক স্থান এবং ইসলামাবাদের আধুনিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবে।আরো দেখুনঃ
বাংলাদেশের সিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) ট্যুর এর জন্য যা জানা প্রয়োজন
পাকিস্তানের সবচেয়ে বিখ্যাত জায়গা কোনটি?
ঢাকা করাচি ফ্লাইট চালু হওয়ার আগে জেনে নিন পাকিস্তানের কোন বিখ্যাত জায়গাগুলো আপনি পছন্দ করতে পারেন:
১. করাচি: সমুদ্রের শহর
করাচি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর এবং বাণিজ্যিক রাজধানী। এখানকার ক্লিফটন বিচ, সিন্ধু জাদুঘর এবং মোহাত্তা প্যালেস পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে থাকা এই শহরটি তার প্রাণবন্ত নাইটলাইফ এবং সুস্বাদু খাবারের জন্য বিখ্যাত।
২. ইসলামাবাদ: শান্তির শহর
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ তার সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। এখানকার ফয়সাল মসজিদ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর মধ্যে একটি। মারগালা হিলস এবং ডামান-ই-কোহ ভিউপয়েন্ট থেকে শহরের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
৩. লাহোর: মুঘল স্থাপত্যের শহর
লাহোর পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এখানকার বাদশাহী মসজিদ, লাহোর ফোর্ট এবং শালিমার গার্ডেন মুঘল স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। লাহোরের রাস্তায় রাস্তায় পাওয়া যায় মুখরোচক স্থানীয় খাবার, যা পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।
৪. উত্তরাঞ্চল: প্রকৃতির স্বর্গ
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে গিলগিট-বাল্টিস্তান, প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য স্বর্গসম। হুনজা ভ্যালি, স্কার্দু এবং নাঙ্গা পর্বতের মতো স্থানগুলো তাদের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। এখানে ট্রেকিং, ক্যাম্পিং এবং পর্বত আরোহণের মতো অ্যাডভেঞ্চার কার্যক্রম উপভোগ করা যায়।
৫. পেশোয়ার: ঐতিহাসিক শহর
পেশোয়ার পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি। এখানকার কিসা খাওয়ানি বাজার এবং পেশোয়ার মিউজিয়াম ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। শহরটি তার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলোর জন্য বিখ্যাত।
৬. মুলতান: সাধুদের শহর
মুলতানকে “সাধুদের শহর” বলা হয়, কারণ এখানে অসংখ্য সুফি সাধকের মাজার রয়েছে। এছাড়াও, মুলতান তার হস্তশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত।
বাংলাদেশ পাকিস্তানের সম্পর্ক
বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে প্রধান রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পাট ও পাটজাত পণ্য, টেক্সটাইল, ওষুধ এবং চামড়াজাত পণ্য। অন্যদিকে, পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা হয় কাপড়, রাসায়নিক দ্রব্য, খনিজ তেল এবং যন্ত্রপাতি। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের পণ্য, অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লাখ ডলারের পণ্য।
পাকিস্তানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প এবং কৃষি খাতে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করতে পারে। পাকিস্তানের হাইকমিশনারও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাকিস্তানে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ঢাকা করাচি ফ্লাইট এর দাম
সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে প্রতিদিন বা সপ্তাহে কয়েকদিন ফ্লাইট থাকবে বলে আশা করা যায়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ) এই রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারে। ঢাকা থেকে করাচি টিকেটের দাম সাধারণত ১৫,০০০-২৫,০০০ টাকার মধ্যে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সবচেয়ে কম দামের আপডেট দেখুন গুগলে
পাকিস্তান ট্যুর টিপস
– পাকিস্তানের মুদ্রা হল পাকিস্তানি রুপি (PKR)। বাংলাদেশি টাকার সাথে এর মান প্রায় ১.৫:১।
– পাকিস্তানের আবহাওয়া বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা শুষ্ক এবং ঠাণ্ডা। ভ্রমণের সময় আবহাওয়ার আপডেট রাখুন।
– স্থানীয় সংস্কৃতি ও রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন।