তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

ভারতের ওয়াকফ বিল পাশ হলে যে ৫টি বড় সমস্যা হবে

ভারতের ওয়াকফ বিল পাশ হলে যে ৫টি বড় সমস্যা হবে
ভারতের ওয়াকফ বিল পাশ হলে যে ৫টি বড় সমস্যা হবে

০৪ এপ্রিল ২০২৫: ভারতের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু লোকসভায় ওয়াকফ বিল পেশ করেন। দীর্ঘ প্রায় ১৩ ঘণ্টার বিতর্ক শেষে সংসদে এই বিলটি পাস হয় । বিলের পক্ষে ২৮৮ জন সাংসদ ভোট দেন, আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ২৩২টি।

এই বিল পাস হওয়ার পরেই সংসদ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় ব্যাপক আন্দোলন। তাদের মতে, এই আইন দেশের মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার ও ধর্মীয় সম্পত্তির ওপর নতুন হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করবে।  তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংসদে বলেন,

“এই বিল সরাসরি মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত।”

ওয়াকফ কী?

ওয়াকফ বলতে এমন কোন সম্পত্তিকে বোঝায়, যা কোনো মুসলমান ব্যক্তি, ধর্মীয় বা সামাজিক কাজে দান করেন। এই সম্পত্তি সাধারণত মসজিদ, কবরস্থান, মাদ্রাসা, দাতব্য হাসপাতাল বা স্কুলে ব্যবহৃত হয়। এগুলো মুসলমান সমাজের প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ওয়াকফ বিল কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতে মুসলমানদের অনেক ওয়াকফ সম্পত্তি আছে। ভারতে মোট ৮.৭ লাখ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। ভারতীয় রেল ও সেনাবাহিনীর পরই দেশে ওয়াকফের বেশি সম্পত্তি রয়েছে।

আসলে, ওয়াকফ সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমটি হল, সম্পত্তির দেখাভাল ও তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন জনসাধারণ। অন্যটি হল, কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ করে দেওয়া হলে, তার দেখাভাল করবেন যিনি সম্পত্তি দানকারীই। পুরনো আইনেই তাই বলা রয়েছে।

তবে নতুন এই সংশোধনী বিলে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে যা নিয়ে মুসলমান সমাজের কিছু অংশ উদ্বিগ্ন। ভারতের ইতিহাসে প্রথম ওয়াকফ আইন তৈরি হয় ১৯৫৪ সালে। পরে ১৯৯৫ সালে এটি নতুনভাবে সাজানো হয়, যেখানে ওয়াকফ বোর্ডের ভূমিকা ও দায়িত্ব স্পষ্ট করা হয়। আরো জানুনঃ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান এর নামে গুজব ছড়াচ্ছে কে?

ওয়াকফ আইন সংশোধন ২০১৩

২০১৩ সালে এই আইনে আবার একটি বড় সংশোধন আনা হয়। এতে বলা হয়, সরকারি কোনো সংস্থা ওয়াকফ জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে আগে বোর্ডের অনুমতি নিতে হবে।

ওয়াকফ বিল সংশোধন আইন ২০২৪ পাশ হলে কি হবে?

বর্তমান সংশোধনী বিলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় হলো—

ভারত সরকার এখন চাইলে কিছু ওয়াকফ জমি “জনস্বার্থে” নিয়ে নিতে পারবে, এবং তাতে বোর্ডের মত নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

মুসলমানদের জন্য ৫টি বড় সমস্যা

ওয়াকফ বিল সংশোধন আইন ২০২৪ এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী
ওয়াকফ বিল সংশোধন আইন ২০২৪ এর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী

১. জমির নিরাপত্তা কমে যাবেঃ নতুন আইনে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কিছু জমি “জনস্বার্থে” নিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু “জনস্বার্থ” মানে কী, সেটা পরিষ্কারভাবে বলা হয়নি। ফলে এই ধারাটি খারাপভাবে ব্যবহার হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

২. বোর্ডের ক্ষমতা কমে যাবেঃ আগে সরকারকে ওয়াকফ বোর্ডের অনুমতি নিতে হতো জমি নিতে গেলে। এখন সেই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে বোর্ডের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা হ্রাস পাবে।

৩. মামলার সুযোগ কমবেঃ আগে যদি কোনো ব্যক্তি মনে করত, তার ওয়াকফ জমি অবৈধভাবে দখল হয়েছে, তাহলে সে মামলা করতে পারত। নতুন আইনে মামলা করার সুযোগ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।

৪. রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বাড়তে পারেঃ নতুন আইনে সরকার ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতে রাজনীতির প্রভাব বেড়ে যেতে পারে, যা ধর্মীয় সম্পত্তির জন্য ভালো নয়।

৫. সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয়ঃ অনেক ভারতীয় মুসলমান মনে করছেন, এই বিল তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার সুযোগ করে দেবে। যদিও সরকার বলছে এটি উন্নয়নের জন্য, কিন্তু অনেকেই এটিকে সন্দেহের চোখে দেখছেন।

অতীতেও জমি নিয়ে সমস্যা ছিল ভারতে ওয়াকফ জমি নিয়ে অনেক বিতর্ক আগে থেকেই চলে আসছে। বিভিন্ন রাজ্যে ওয়াকফ জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। অনেক সময় দেখা গেছে, সরকারি প্রকল্পে মসজিদ বা কবরস্থান ভেঙে দেওয়া হয়েছে উন্নয়নের নামে।

কিছু উদাহরণ

  • মহারাষ্ট্রে এক সময় মসজিদের জায়গা নিয়ে রাস্তা তৈরি হয়, কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি।
  • দিল্লিতে এক কবরস্থান নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বিবাদ হয়।
  • পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি ওয়াকফ জমি স্কুল বা হাসপাতাল বানানোর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়।

এই উদাহরণগুলো দেখায় যে, ওয়াকফ জমি নিয়ে আগে থেকেই সমস্যা ছিল, আর নতুন বিল সেই সমস্যাকে আরও জটিল করতে পারে। আরো জানুন Ind vs Pak ম্যাচ মানেই ইন্টারনেট ক্র্যাশ। দেখুন কে এগিয়ে?

ভারতে মুসলমানদের সাম্প্রতিক অবস্থা

ভারতে সম্প্রতি অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা ও জমির ওপর আক্রমণ বা হস্তক্ষেপ বেড়েছে। ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে এই নতুন বিল সেই প্রেক্ষাপটে আরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

  • কবরস্থান ভাঙাঃ ২০২৩ সালে উত্তরপ্রদেশের এক এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন কবরস্থান ভেঙে দেয় রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য। এই জায়গাটি ওয়াকফ বোর্ডের আওতাধীন ছিল। মুসলিম সম্প্রদায় তখন এর প্রতিবাদ করলেও প্রশাসন তা শোনেনি।
  • মসজিদ নিয়ে বিবাদঃ মধ্যপ্রদেশে এক মসজিদের জমি সরকারি প্রকল্পের আওতায় পড়ে। যদিও মসজিদটি ৫০ বছরের পুরনো, তবুও সেটিকে অবৈধ বলা হয় এবং ভাঙার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়।
  • জমির দলিল বাতিলঃ বেশ কিছু রাজ্যে মুসলমানদের দেওয়া ওয়াকফ জমির দলিল হঠাৎ করে বাতিল করা হয়। এতে বোর্ড এবং সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়ে।

এইসব ঘটনা নতুন আইন পাস হওয়ার পর আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।  মুসলিম সমাজে প্রতিক্রিয়া নতুন এই আইন নিয়ে ভারতের মুসলমান সমাজে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি মুসলিমদের ধর্মীয় পরিচিতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা।

মুসলিম নেতাদের বক্তব্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, AIMIM নেতা, বলেছেন:

“এই বিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে। এটা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির বিরুদ্ধে যায়।”

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ বলেছে:

“ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের পথ সহজ করতে এই আইন আনা হয়েছে।”

সাধারণ মানুষের ভয় অনেক সাধারণ মুসলমান বলছেন, যদি ওয়াকফ জমি নিরাপদ না থাকে, তাহলে মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান—সবকিছুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

ভারত সরকারের যুক্তি কী?

ভারতের সরকার বলছে, এই বিল কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়। বরং এটা উন্নয়নের জন্য করা হয়েছে।  উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের বড় বড় রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, স্কুল ইত্যাদি তৈরি করতে অনেক সময় জমির প্রয়োজন হয়। যদি কোনো ওয়াকফ জমি রাস্তার মাঝে পড়ে, তাহলে সেটিকে ব্যবহার করা দরকার।

সংখ্যালঘু উন্নয়ন তহবিল সরকার দাবি করেছে, ওয়াকফ বোর্ডকে শক্তিশালী করার জন্য আরও তহবিল বরাদ্দ দেওয়া হবে। সেইসাথে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমির তথ্য সংরক্ষণ করা হবে।

তবে মুসলিম সমাজ মনে করে, এই যুক্তি বাস্তবে প্রভাব ফেলছে না।

FAQ

১. ভারতে ওয়াকফ জমি কতটুকু?

ভারতে মোট ৮.৭ লাখ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে। ভারতীয় রেল ও সেনাবাহিনীর পরই দেশে ওয়াকফের বেশি সম্পত্তি রয়েছে।

২. ওয়াকফ আইন ২০২৪ পাশ হলে কি হবে?

ওয়াকফ আইন ২০২৪ পাশ হলে ভারত সরকার এখন চাইলে কিছু ওয়াকফ জমি “জনস্বার্থে” নিয়ে নিতে পারবে, এবং তাতে ওয়াকফ বোর্ডের মত নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।

২ thoughts on “ভারতের ওয়াকফ বিল পাশ হলে যে ৫টি বড় সমস্যা হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!