তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

ভারতে বিক্রি শুরু সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস: নবীকে কটাক্ষ করে যে বই

ভারতে বিক্রি শুরু সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস: নবীকে কটাক্ষ করে যে বই
ভারতে বিক্রি শুরু সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস:

সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি ১৯৮৮ হতে এক যুগান্তকারী বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল, যা এখনো বিদ্যমান। বইটি প্রকাশের পরই মুসলিম সমাজের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, বিশেষত এর মধ্যে ইসলাম ধর্ম, প্রবর্তক মুহাম্মদ (সাঃ), এবং অন্যান্য ইসলামী চরিত্রের অবমাননা ছিল। এটি বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়েছিল এবং কিছু দেশে নিষিদ্ধও হয়েছিল। ভারতে বইটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এতটাই তীব্র হয়েছিল যে ১৯৮৯ সালে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। তবে, দিল্লি হাইকোর্টের সম্প্রতিক একটি আদেশে সেই নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়েছে, এবং এর ফলে ভারতীয় বাজারে পুনরায় বইটির বিক্রি শুরু হয়েছে।

ভারতে সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’বিক্রিতে কোন বাধা নেই

দিল্লি হাইকোর্টের আদেশে ১৯৮৮ সালের ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেওয়া হয়। আদালত জানায়, নিষেধাজ্ঞার কোন আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন ছিল না, ফলে এটি কোনো কার্যকরী আইনি পদক্ষেপ ছিল না। ফলে, এখন থেকে বইটি পুনরায় ভারতে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে।

এদিকে, ভারতে পুনরায় বইটির প্রকাশের বিষয়টি মুসলিম সংগঠনগুলির মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অল ইন্ডিয়া ভারত মজলিশ-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) এবং অল ইন্ডিয়া শিয়া পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএসপিএলবি) সহ বহু মুসলিম সংগঠন সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দাবি করছে, বইটি ইসলাম ধর্ম এবং মুসলিম সম্প্রদায় সম্পর্কে অবমাননাকর, এবং এটি পুনরায় প্রকাশিত হলে ভারতের সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আরো জানুন: ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আর নেই

সালমান রুশদির বই এ কি লেখা ছিল?

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি মূলত একধরনের কল্পকাহিনী যা ইসলাম এবং মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে বিতর্কিত দৃষ্টিকোণ উপস্থাপন করে। উপন্যাসে সরাসরি মহানবী (সাঃ)-এর নাম উল্লেখ না করলেও, মাহুন্দ নামে এক নবীকে তুলে ধরা হয়েছে, যার জীবন কাহিনীর সাথে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবন কাহিনীর মিল অনেক। উপন্যাসে তিনটি দেবী আল-লাত, আল-উজ্জা এবং মানাহের উল্লেখ রয়েছে, যেগুলোকে ইসলামের ইতিহাসে কাফেররা পূজা করত । এতে একধরনের কাব্যিক এবং ধর্মীয় অবমাননা করা হয়েছে।

বইটির মূলত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে খুবই কটাক্ষের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে, মাহুন্দ একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন যে, যদি তিনি তাদের দেবতাদের পূজা করেন, তবে তার অনুসারীদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। এই প্রস্তাব শুনে নবী মাহুন্দ পাহাড়ের ওপরে গিয়ে জিবরাঈল ফেরেশতার মাধ্যমে এ ব্যাপারে আল্লাহর ফায়সালা কী তা জানতে চান।

তখন জিবরাঈল ফেরেশতা নবীকে জানান যে আল্লাহ ওই প্রস্তাব মেনে নিতে বলেছেন। এরপর নবী ওই প্রস্তাব মেনে নেন। কিন্তু পরে আবার নবী মাহুন্দ দাবি করেন যে, ওই সময় আসলে জিবরাঈল ফেরেশতার রুপ ধরে শয়তান হাজির হয়েছিল তাকে ধোকা দিয়ে তিন দেবীর পুজা করানোর জন্য। এবং অবশেষে নবী মাহুন্দ ওই তিন দেবীর প্রতি আনুগত্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এজন্য পৌত্তলিকরা আবার নবী মাহুন্দ ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা শুরু করলে তারা মদীনায় পালিয়ে যান।

আত-তাবারী এবং ইবনু সাদ: ইসলামী ইতিহাসের একটি বিতর্কিত ঘটনা

আত-তাবারী এবং ইবনু সাদ-এ এক বিশেষ ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে, যা রুশদির বইয়ের সাথে সম্পর্কিত। এই ঘটনাটি এমন, যে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় ইসলামের প্রচার শুরু করেন, তখন একদিন তিনি কাবা শরীফের প্রাঙ্গণে মুসলিমদের মাঝে বক্তৃতা করছিলেন। সেদিন, হঠাৎ জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ওহী নিয়ে রাসূল (সাঃ)-এর কাছে আগমন করেন এবং সূরা নাজম তিলাওয়াত করতে শুরু করেন।

তবে তাবারী এবং ইবনু সাদ-এর বর্ণনা অনুযায়ী সূরা নাজমের ১৯ এবং ২০ নম্বর আয়াতের পর আরও দুটি বাড়তি আয়াত তিলাওয়াত করেছিলেন, যা আদতে শয়তান রাসূল (সাঃ)-কে ধোঁকা দিয়ে কুরআনের আয়াতের সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে জিবরাঈল ফেরেশতা রাসূল (সাঃ)-কে এ বিষয়ে সতর্ক করলে, রাসূল (সাঃ) সেগুলো বাদ দেন এবং তা ওহী ছিল না বলে জানিয়ে দেন।

বিতর্কিত আয়াত

সূরা নাজমের ১৯ এবং ২০ নম্বর আয়াতগুলো ছিল:

  • “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্পর্কে? এবং আরেক (দেবী) মানাত সম্পর্কে?”

তারপর, আরও দুটি বাড়তি আয়াত ছিল:

  • “তারা হলেন খুবই উঁচু পর্যায়ের (ক্ষমতাবান দেবী), তাদের কাছে সাহায্যও চাওয়া যায়।”

এই আয়াতগুলির কারণে মক্কার মুশরিকরা খুব খুশি হয়ে ওঠেন, কারণ তারা ভাবতে শুরু করেন যে, রাসূল (সাঃ) তাদের দেবীদের সম্মানিত করেছেন এবং তাদের পূজা করার জন্য মুসলিমদের অনুমতি দিয়েছেন।এটি ছিল এক বিতর্কিত ঘটনা, যা পরবর্তীতে খ্রিষ্টান মিশনারিরা এবং ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীগুলি রুশদি তার বইয়ে ব্যবহার করেছিলেন।

তবে এ ঘটনার সবচেয়ে বিতর্কিত ঘটনা হলো যে, ইসলামের মূলভিত্তি এক ঈশ্বরবাদে নিহিত। রাসূল (সাঃ) তার সত্যবাদিতার জন্য কাফেরদের কাছেও পরিচিত ছিলেন। উপরের সাংঘার্ষিক কথা/ওহী তিনি নিজে এবং রাসূল (সাঃ) এর প্রিয় সাহাবীরা সাথে সাথেই প্রত্যাখান করতেন।

‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর বাস্তবতা

আত-তাবারী এবং ইবনু সাদ-এর এই বর্ণনা পরবর্তীতে ইসলামবিদ্বেষী এবং খ্রিষ্টান মিশনারিরা নিজেদের বক্তব্যের পক্ষে ব্যবহার করতে শুরু করেন। তারা দাবি করেন, এই ঘটনার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চান যে, মহানবী (সাঃ) কখনোই পূজিত দেবীদের অবমাননা করেননি এবং তাদের সাথে মিশে গিয়েছিলেন।

এই ধরনের ব্যবহারের কারণে, রুশদি তার উপন্যাসে এমন বিতর্কিত ঘটনাগুলি উল্লেখ করেছিলেন, যাতে মুসলিম সমাজের প্রতি তীব্র অবমাননা থাকে এবং এটি ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তবে, মুসলিম সম্প্রদায় এ ধরনের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কুরুচিপূর্ণ বলে বিবেচনা করে এবং রুশদির বইটি ইসলামের প্রতি অবমাননা হিসেবে গণ্য করে।

রুশদির বইয়ের প্রভাব এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

রুশদির বইটির প্রভাব আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রবল হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয় এবং ইসলামিক নেতারা বইটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নেন। এমনকি ইরান সরকার রুশদির বিরুদ্ধে হত্যার জন্য একটি ফতোয়া জারি করে, যার কারণে তিনি বহু বছর গোপনে জীবনযাপন করেছেন।

তবে, বইটির বিক্রি শুরু হওয়ার পরই একবার আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

FAQ (Frequently Asked Questions)

Q1: ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি কেন নিষিদ্ধ হয়েছিল?
A1: বইটি ইসলামের প্রবর্তক মুহাম্মদ (সাঃ) এবং ইসলামী ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে কটাক্ষ করে, যা মুসলিম সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।

Q2: আত-তাবারী এবং ইবনু সাদের বর্ণনা কী বলে?
A2: আত-তাবারী এবং ইবনু সাদ-এ একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যেখানে রাসূল (সাঃ) কিছু ভুল ওহী গ্রহণ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

Q3: রুশদি বইটি কীভাবে ইসলামকে অবমাননা করেছে?
A3: রুশদি তার বইয়ে মুসলিমদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, মহানবী (সাঃ) এবং ইসলামী ইতিহাসকে অপমানজনকভাবে উপস্থাপন করেছেন।

Q4: বইটির প্রকাশের পর মুসলিম প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
A4: বইটির প্রকাশের পর মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল এবং অনেক দেশ এটি নিষিদ্ধ করেছে।

Q5: রুশদি কেন এত বছর গোপনে জীবনযাপন করেছেন?
A5: রুশদি তাঁর বইয়ের প্রকাশের পর ইরান থেকে একটি হত্যার ফতোয়া জারি হয়, যার ফলে তাকে গোপনে জীবনযাপন করতে হয়।

২ thoughts on “ভারতে বিক্রি শুরু সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস: নবীকে কটাক্ষ করে যে বই

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *