সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কের মুখে পড়েছেন। তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা একটি তথ্য নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। পোস্টে দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সংগঠন “হিযবুত তাহেরী”র সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
তবে ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম রিউমর স্ক্যানার এই তথ্যকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। তারা নিশ্চিত করেছে যে, ভিন্ন দুই ব্যক্তির নামের মিলকে কেন্দ্র করে এই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সামনে এনেছে।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিতর্কিত পোস্ট
সজীব ওয়াজেদ জয় তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। ভিডিওটি ইউটিউব চ্যানেল “চেতনা” থেকে প্রকাশিত। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল:
“ইউনূসের প্রধান সহকারী মাহফুজের ভয়ঙ্কর অতীত”
এই ভিডিও শেয়ার করে জয় লেখেন:
“অনির্বাচিত ও অবৈধ ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম অনেক বছর আগে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিল।”
এই পোস্টের পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, তথ্যটি সত্য কিনা।
ভুয়া তথ্যের উত্থান: মূল বিষয়বস্তু
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো একটি খবর অনুযায়ী, মাহফুজ আলম ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তবে ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম রিউমর স্ক্যানার এই দাবির সত্যতা যাচাই করে প্রমাণ করেছে যে এটি ভুয়া।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্য:
- গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি আলাদা: ২০১৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তি ছিলেন আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ, যিনি হিযবুত তাহরীরের একজন সদস্য ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নন।
- নামের মিল থেকেই বিভ্রান্তি: নামের মিল থাকায় তাদের একই ব্যক্তি হিসেবে অপপ্রচার চালানো হয়।
- তথ্য যাচাই: রিউমর স্ক্যানার মাহফুজ আলম এবং আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের ছবি, জেলা, বয়স এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য পরীক্ষা করে দেখেছে। এতে প্রমাণিত হয়, তারা দুজন সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যক্তি।
ভুয়া তথ্যের বিপদ: রাজনীতি ও সামাজিক প্রভাব
এই ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে যে প্রভাব তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
- রাজনৈতিক বিভ্রান্তি: তথ্যটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়ানো হলে এর পেছনে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
- সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকাঃ ফেসবুক এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে দ্রুত ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়া নতুন নয়। তবে ভুয়া তথ্য যাচাই করার আগে শেয়ার করা নৈতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।
- জনমনে বিভ্রান্তি: এ ধরনের তথ্য সরাসরি পাঠকদের ভুল বোঝাতে পারে এবং সত্যের বিকৃতি ঘটাতে পারে।
ভুয়া তথ্য এড়াতে করণীয়:
- তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব: কোনো তথ্য বিশ্বাস করার আগে তা নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করুন।
- সোশ্যাল মিডিয়া দায়িত্বশীলতা: বড় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের উচিত সত্যতা নিশ্চিত না হলে তথ্য শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা।
- ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার: রিউমর স্ক্যানার, ফ্যাক্টওয়াচের মতো নির্ভরযোগ্য ফ্যাক্টচেকিং প্ল্যাটফর্মের সাহায্য নিন।
উপসংহার:
সজীব ওয়াজেদ জয়ের পোস্টে প্রচারিত তথ্যটি ভুয়া হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় দিক তুলে ধরেছে। সমাজে ভুয়া তথ্যের বিপদ এবং তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা নিয়ে নতুন করে ভাবনার দরকার রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকা এবং তথ্য যাচাই করার সংস্কৃতি গড়ে তোলাই একমাত্র সমাধান।
আরো জানুন: শেখ হাসিনা কোথায় জানালেন জয়,
অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন উপদেষ্টা ০৫ জন, সন্ধ্যায় শপথগ্রহণ