১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবসে নতুন বাংলাদেশের প্রতিজ্ঞা
১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয় বাংলাদেশে। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর দিনটি জাতীয়ভাবে পালন করা হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সরকারিভাবে ছুটি প্রদান করা হয়। নতুন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় দিবসে কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি, ছাত্রশিবির, আওয়ামীলীগ সহ সকল রাজনৈতিক সংগঠন।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলেই স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
মহান বিজয় দিবস কিভাবে উদযাপন হয়?
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর ভোরে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে বিজয় দিবসের সূচনা হয়। জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর সদস্যরা অংশ নেন। প্রতিবছর রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করলেও এ বছর হচ্ছে না এর কোনোকিছুই। এ বছর পালন হবে বিজয় মেলা বিজয় মেলা।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও সাধারণ জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে অন্তবর্তীকালীন সরকারের ডাকটিকেট উন্মোচন
বিজয় দিবস ২০২৪ এবং মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাক টিকিট উন্মোচন করেছেন। রোববার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই স্মরণীয় ডাক টিকিটের পাশাপাশি ১০ টাকার উদ্বোধনী খাম এবং ৫ টাকার একটি ডেটাকার্ডও উন্মোচন করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং ডাক বিভাগের মহাপরিচালক এস.এম. শাহাবুদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বিজয় দিবস ২০২৪-এর এই উদ্যোগ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারীরা।
১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ছাত্রশিবিরের কর্মসূচি
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ৩ দিনব্যাপী (১৬-১৮ ডিসেম্বর) কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম আজ ১৫ ডিসেম্বর (রবিবার) এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে :
১. র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন।
২. শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল।
৩. রচনা, কুইজ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন।
৪. ইয়াতিম ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সাথে খাবার গ্রহণ।
৫. মেধাবী ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র উপহার প্রদান।
৬. মেডিক্যাল ক্যাম্প ও ব্লাড ডোনেশন প্রোগ্রাম।
৭. সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠের আসর ও দেয়ালিকা প্রকাশ।
৮. শহীদী গান ও ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রচার।
৯. জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা, সোশ্যাল মিডিয়া প্রভৃতি প্ল্যাটফর্মে বিজয় দিবস সম্পর্কিত লেখালেখি করা।
১৬ ডিসেম্বর- মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি তালিকা
মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারা দেশব্যাপী বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপিকে এই কর্মসূচির বাইরে রাখা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা, স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং সর্বজনীন কনসার্ট আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হবে। ১৫ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা এবং ১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচি ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে কনসার্ট আয়োজন করায় উদ্দীপনার নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্মসূচি:
১. ১৫ ডিসেম্বর : বেলা ২টায়: ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা।
২. ১৬ ডিসেম্বর:
- ভোরে: দলীয় সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন।
- সকাল সাড়ে ৭টায়: সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
- সাভার থেকে: শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ।
- বেলা ২টায়: মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে সর্বজনীন কনসার্ট আয়োজন।
১৬ই ডিসেম্বর – মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচিতে অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানানো হয়:
১. সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন।
২.ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
৩.গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
৪. মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা।
৫.সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মহান বিজয়ের মাসের যে কোনো উপযোগী দিনে বিজয় র্যালি ও বিজয় মেলার আয়োজন।
এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অনুরূপ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো যাচ্ছে।