তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

১৬ মিনিট ধরে চালু ছিল চীনের “কৃত্রিম সূর্য”

১৬ মিনিট ধরে চালু ছিল চীনের "কৃত্রিম সূর্য"
১৬ মিনিট ধরে চালু ছিল চীনের “কৃত্রিম সূর্য”

সূর্যকে মনে করুন একটা বিরাট বাল্ব আর হিটারের মতো। এটি আমাদের আলো আর তাপ দেয়, যার কারণে গাছপালা, মানুষ, পশুপাখি সবাই বেঁচে থাকে। দশম শ্রেণীর “এনট্রপি’’ অনুযায়ী সূর্য যেদিন তার শক্তি হারিয়ে এবং মরে যাবে, পৃথিবীর সবকিছু অন্ধকার আর ঠান্ডা হয়ে যাবে। সব প্রাণী আর গাছপালা মরে যাবে। এই চিন্তাটা ভয়ানক, কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর সমাধান খুঁজছেন। তাদের সমাধান হলো কৃত্রিম সূর্য। এনট্রপি নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে।

সম্প্রতি চীন এই কৃত্রিম সূর্য বানানোর ক্ষেত্রে বড় সাফল্য পেয়েছে। তাদের মেশিনটার নাম EAST (Experimental Advanced Superconducting Tokamak)। এই মেশিন ১,০০০ সেকেন্ড (প্রায় ১৬ মিনিট) ধরে প্লাজমা নামে একটা জিনিস ধরে রাখতে পেরেছে। এটা খুব বড় ব্যাপার, কারণ প্লাজমা যত বেশিক্ষণ ধরে রাখা যায়, তত বেশি শক্তি তৈরি করা যায়।

কৃত্রিম সূর্য আসলে কি?

কৃত্রিম সূর্য আসলে আকাশের সূর্যের মতো নয়। এটা একটা বিরাট মেশিন, যা সূর্য যেভাবে শক্তি তৈরি করে, সেটা কপি করার চেষ্টা করে। সূর্য তার ভেতরে নিউক্লিয়ার ফিউশন নামের একটা প্রক্রিয়ায় শক্তি তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় দুটি ছোট পরমাণু জোড়া লাগে এবং অনেক শক্তি বের হয়। বিজ্ঞানীরা এই একই প্রক্রিয়া মেশিনের মধ্যে তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

প্লাজমা কী?

প্লাজমা হলো পদার্থের চতুর্থ অবস্থা (ঠিক যেমন বরফ, পানি, বাষ্প)। প্লাজমা খুব গরম এবং এতে ইলেকট্রন আর আয়ন নামের কণাগুলো মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ায়। এই অবস্থায় পদার্থ সবচেয়ে বেশি শক্তি তৈরি করতে পারে। চীনের EAST মেশিন এই প্লাজমাকে ধরে রেখে শক্তি তৈরি করে।

চীনের পূর্বের সাফল্য

চীনের EAST মেশিন
চীনের (EAST) চুল্লি: উইকিমিডিয়া

২০২১ সালে চীন তাদের EAST মেশিনে মাত্র ৪০৩ সেকেন্ড (প্রায় ৬ মিনিট) প্লাজমা ধরে রাখতে পেরেছিল। কিন্তু এবার তারা ১,০০০ সেকেন্ড ধরে প্লাজমা ধরে রাখতে পেরেছে, যা একটা বিরাট সাফল্য। এই ঘটনার মানে হলো, ভবিষ্যতে সূর্যের মতো শক্তি তৈরি করার মতো সক্ষমতা মানবজাতির হচ্ছে ।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন পদ্ধতি

কৃত্রিম সূর্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করার পদ্ধতিটা একদম নতুন এবং উন্নত। এই পদ্ধতিতে নিউক্লিয়ার ফিউশন ব্যবহার করা হয়, যেখানে হাইড্রোজেনের মতো হালকা পরমাণুগুলিকে জোড়া লাগিয়ে হিলিয়াম তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি বের হয়, কিন্তু কোনো ক্ষতিকর বর্জ্য বা দূষণ তৈরি হয় না। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নত দেশে ব্যবহৃত নিউক্লিয়ার ফিশন পদ্ধতি (যেখানে ইউরেনিয়াম ভাঙা হয়) থেকে অনেক বেশি নিরাপদ এবং পরিবেশবান্ধব। আরো জানুনঃ চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী

নিউক্লিয়ার ফিউশন এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে লাভ কি?

১. এই পদ্ধতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড বা গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি হয় না, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমাতে সাহায্য করে।

২. হাইড্রোজেন পৃথিবীতে প্রচুর পরিমাণে আছে, তাই এই শক্তির উৎস কখনো ফুরোবে না।

৩. ফিউশন প্রক্রিয়ায় কোনো রেডিওঅ্যাকটিভ বর্জ্য তৈরি হয় না, যা মানুষ এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ।

বিদ্যুৎ কিভাবে উৎপাদন করা হয়?

বর্তমানে বিদ্যুৎ তৈরি করার জন্য কয়লা, তেল, এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো পোড়ালে বায়ু দূষণ হয় এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং বাড়ে। আবার নিউক্লিয়ার ফিশন পদ্ধতিতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়, যা বিপজ্জনক রেডিওঅ্যাকটিভ বর্জ্য তৈরি করে।

কিন্তু ফিউশন পদ্ধতিতে এই সমস্যাগুলো নেই। এটি পরিবেশবান্ধব, নিরাপদ, এবং শক্তির একটি অবিরাম উৎস। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সূর্যের মতো শক্তি তৈরি করা সম্ভব।

এনট্রপি কি?

এন্ট্রপি মানে হলো বিশৃঙ্খলা বা গণ্ডগোলের পরিমাণ। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি মহাবিশ্ব খুবই গোছালো, কিন্তু সে গোছালো থাকতে চায় না। সময়ের সাথে সাথে এলোমেলো হতে চায়। মহাবিশ্ব এই নিয়মই মেনে চলেছে! সহজ ভাষায় বললে, যখন কোনো সিস্টেমে শক্তি ছড়িয়ে পড়ে বা কাজে লাগে, তখন সিস্টেমের এনট্রপি বাড়ে। যেমন:

– এক কাপ গরম চা ঠান্ডা হলে, তার তাপ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে এনট্রপি বাড়ে।

এনট্রপি সবসময় বাড়তে চায়, কারণ প্রকৃতির নিয়ম হলো সবকিছু শৃঙ্খলা থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে যাবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *