আয়নায় সবাই সবাইকে ফিট দেখতে পায়। কিন্তু ফাস্টফুড এর দুনিয়াতে ওজন কমানোর উপায় খুজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। কিছু ব্যক্তিদের মুখে এও শোনা যায়, তারা পানি খেলেও নাকি ওজন বাড়ে। আপনি যদি এমন একজন হয়ে থাকেন তাহলে আজকের লেখা আপনার জন্য।
প্রথম কথা ওজন কমানো কি সম্ভব? সারাদিন দৌড়াবেন নাকি খাওয়া দাওয়া সব বাদ দিবেন? কোনটাই করার দরকার নেই। নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুন, ৫ বেলা খাবার খেয়েও ওজন কমাতে পারেবেন। প্রথম কথা হলো
ওজন বেশি হলে সমস্যা কি?
অতিরিক্ত ওজন শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে শরীর সুস্থ থাকে, শক্তি বেশি পাওয়া যায়। পাশাপাশি সকল কাজ করতেও সুবিধা হয়।
– অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে
– হৃদরোগ সমস্যা: অতিরিক্ত মেদ রক্তনালী বন্ধ করতে পারে।
– ওজন বেশি হলে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করে না এবং ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
– শরীরে অতিরিক্ত চর্বি রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
– ওজন বেশি হলে হাঁটতে-চলতে দম নিতে কষ্ট হয়।
– ভারী শরীরের কারণে হাঁটু ও কোমরে চাপ পড়ে।
যত বিত্তশালী মানুষ ই হোক না কেন, তার যদি শরীর সুস্থ না থাকে, তাহলে তার টাকা কোন কাজে আসে না। তাই উপরের সমস্যাগুলো আপনার জীবনে না চাইলে শুরু করুন সুস্থ জীবনযাপন করা। ওজন কমানো কিন্তু একদিনে সম্ভব না। এই কথা মেনেই শুরু করতে হবে আপনাকে।
সুস্থ থেকে প্রতি মাসে ৪-৫ কেজি ওজন কমানো সম্ভব। এর চেয়ে বেশি হলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রথম টিপ: যারা এই পথে নেমেছেন, তারা শুরু করার প্রথম সপ্তাহে ওজন বাড়তেও দেখেছেন। তাই অবাক হওয়ার কিছুই নেই।
ওজন কমানোর উপায়
ওজন কমানোর প্রথম সূত্রঃ যার জিহ্বার উপর নিয়ন্ত্রন নেই সে জীবনে ফিট হতে পারবে না। সঠিক ডায়েট মানলে Vuri Komanor upay খুজে পাওয়া যাবে
কিভাবে ডায়েট প্ল্যান করলে ওজন কমবে?
– একসঙ্গে বেশি না খেয়ে বারবার খান।
– তেল, চিনি, কাচা লবন এড়িয়ে চলুন
– ভাজাপোড়া থেকে দূরে থাকুন।
– প্রচুর পানি পান করুন।
– খাবারে শাকসবজি ও প্রোটিন রাখুন।
– রাতে হালকা খাবার খান।
কি খেলে ওজন কমানো যায়?
– শাকসবজি (লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পালং শাক)
– প্রোটিন (ডিম, মুরগি, মাছ)
– ফল (আপেল, কমলা, বেরি)
– ভালো ফ্যাট (বাদাম, চিয়া বীজ, অলিভ অয়েল)
– আঁশযুক্ত খাবার (ডাল, ওটস, ব্রাউন রাইস)
ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট
– সকালে হালকা গরম পানি ও লেবু-মধু খান।
– দুপুরে শাকসবজি ও প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন।
– রাতে কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার খান।
– নাশতায় ওটস বা ডিম খেলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে।
চিয়া সীড খেলে কি ওজন কমে?
হ্যা, সঠিক নিয়মে চিয়া সীড ওজন কমাতে সাহায্য করে। এটি পেট ভরা রাখে ও হজম ভালো করে। শরীরের মেটাবোলিজম বাড়ানোর পাশাপাশি এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
চিয়া সীড খেয়ে Ojon Komanor Upay?
প্রতিদিন সকালে চিয়া সীড খালি পেটে ১ চামচ চিয়া বীজ পানিতে ভিজিয়ে খান। সকালে নাশতার আগে লেবু ও মধুর সাথে মিশিয়ে পান করতে পারেন। এছাড়া রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে খেলে হজম ভালো হয়।
ভাত খেয়ে কি ওজন কমানোর উপায়?
অনেকে মনে করেন, ভাত খেলে ওজন বেড়ে যায়। সত্যি কিন্তু সঠিক নিয়ম মেনে ভাত খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
– অতিরিক্ত ভাত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
– সঠিক পরিমাণে ভাত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। দিনে ১-২ কাপ ভাত খাওয়া নিরাপদ।
– ব্রাউন রাইস বা লাল চালের ভাত বেশি উপকারী। লাল চাল খেলে পেট বেশি সময় ভরা থাকে।
– ভাতের পরিবর্তে ওটস, কুইনোয়া বা চিড়া খাওয়া যেতে পারে।
ওজন কমানোর ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম করলে দ্রুত ওজন কমে এবং শরীর সুস্থ থাকে। ওয়েটলিফটার রা দ্রুত শরীরের ফ্যাট কমিয়ে মাসল বা পেশি বৃদ্ধি করতে পারেন। জীমে সময় দিতে না পারলে একটি সহজ ব্যায়াম করে আপনি বাসায় থেকে ওজন নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে পারবেন। তা হলো হাটাঁ । প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০-৪৫ মিনিট হাঁটুন। এছাড়াঃ
– দৌড়ানো – শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাতে সাহায্য করে।
– স্কোয়াট – পায়ের মাংসপেশি শক্তিশালী করে।
– প্ল্যাঙ্ক – পেটের ভুড়ি কমাতে কার্যকর।
– যোগব্যায়াম – শরীর ও মন সুস্থ রাখে।
সাধারণত দিনে ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়াম করা ভালো।
ব্যায়াম বনাম ডায়েট: কোনটি বেশি কার্যকর? ওজন কমানোর জন্য ৮০% ডায়েট ও ২০% ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় অভিনেতা আমির খান তার দাঙ্গাল মুভির জন্য এই নিয়মেই ওজন নিয়ন্ত্রনে এনেছিলেন।
ওজন কমানোর ঔষধ/ Vuri Komanor Upay
ওজন কমানোর জন্য অনেক ঔষধ ও সাপ্লিমেন্ট বাজারে পাওয়া যায়। তবে এগুলো ব্যবহারের আগে সচেতন থাকা জরুরি।
ওজন কমানোর জনপ্রিয় কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধ
– Phytolacca Berry – ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে।
– Calcarea Carbonica – অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
– Graphites – মেটাবলিজম বাড়ায় ও হরমোন ঠিক রাখে।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও সতর্কতা সঠিক মাত্রা না মেনে খেলে ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
ওজন কমানোর আয়ুর্বেদিক ঔষধ
– ত্রিফলা: হজমশক্তি বাড়িয়ে ওজন কমায়।
– গুগ্গুলু: মেটাবলিজম বাড়িয়ে চর্বি কমায়।
– অশ্বগন্ধা: স্ট্রেস কমিয়ে ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে।
কার্যকারিতা ও গ্রহণের নিয়ম প্রতিদিন সকালে খালি পেটে গরম পানির সাথে গ্রহণ করুন। অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে পেটে সমস্যা হতে পারে।
ওজন কমানোর সাপ্লিমেন্ট
গ্রীন টি ওজন কমানোর জন্য খুব ভালো কাজ করে।
প্রোটিন পাউডার: ক্ষুধা কমিয়ে পেশি গঠন করে।
Apple Cider Vinegar: ফ্যাট বার্ন প্রক্রিয়া দ্রুত করে।
ভুয়া ও ক্ষতিকর সাপ্লিমেন্ট এড়ানোর উপায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না। বাজারের অজানা ও অপ্রমাণিত ওষুধ এড়িয়ে চলুন।
ওজন কমানোর ইসলামিক উপায়,
শরীরের সুস্থতা ও ওজন কমানো ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়ার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদীসে বলা হয়েছে,
“তোমাদের শরীরের প্রতি অধিকার রয়েছে, এবং তোমরা তা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারো না।”
আরো জানুনঃ সুরা বাকারা’র রিং কম্পোজিশন অবাক করছে সবাইকে
রোজা রেখে ওজন কমায় কীভাবে?
রোজা: রোজা হলো একটি ইসলামী উপায় যা সঠিক সময় এবং নিয়ম মেনে খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ এবং পাশ্ববর্তী এলাকায় রোজার মধ্যে রীতি হয়ে উঠে ভাজাপোড়া খাওয়ার। সারাদিন না খেয়ে থাকার পর তৈলাক্ত খাবার গ্রহণ করতে পাকস্থলীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাই ইফতারে রাখুন ফল, খেজুড়, শসা এবং হালকা পানীয়।
রমজানে ওজন কমানো খুবই উপযুক্ত সময়। দিনের ১৪-১৬ ঘন্টা ক্ষুদার্থ থাকার পর প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে সহজে এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবেন। প্রতি রমজানে আমাদের শরীরের মৃত সেলগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। পাকস্থলী খাবার কে প্রসেস করা থেকে বিরতি নেয় এবং শরীরে নতুন করে শক্তি ফেরে আসে।
Intermittent Fasting (IF): ইন্টারমিডিয়েট ফাস্টিং কি?
ইসলামিক রোজার মতোই। এখানে ১৪-১৬ ঘন্টা আপনাকে না খেয়ে থাকতে হবে এবং বাকি ৮ ঘন্টায় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এটি শরীরকে স্বাভাবিকভাবে ডিটক্সিফাই করে এবং অতিরিক্ত মেদ কমায়। রোজার সময়েও IF-এর মতোই শরীরের ফ্যাট বার্ন প্রক্রিয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, IF শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং ক্যালোরির পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।