বাংলাদেশে রোলস রয়েলস:গত ছয় মাসে ০৮ টি আমদানি 

বাংলাদেশে রোলস রয়েলস
রোলস রয়েলস-অফিসিয়াল ছবি

রোলস রয়েলস, একটি ব্র্যান্ড যার নাম শুনলেই ভেসে ওঠে আভিজাত্য ও বিলাসিতার প্রতীক। ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় যেকোনো সময় আপনার চোখে পড়তে পারে বিশ্বের সবচেয়ে অভিজাত গাড়ি রোলস রয়েস। কারণ, বাংলাদেশে রোলস রয়েলস বাজারজাত শুরু হয়েছে। মাত্র ছয় মাসের মধ্যে আটটি রোলস রয়েস গাড়ি এনেছেন দেশের বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ও গাড়ি ব্যবসায়ীরা। এর আগে আমদানি হওয়া সবচেয়ে দামি গাড়ি ছিল ‘ফেরারি’।

রোলস রয়েলস এত দামি কেন?

ইচ্ছেমত কাস্টমাইজেশন করার স্বাধীনতা

রোলস রয়েলস তাদের প্রতিটি গাড়িকে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করে। গাড়ির ড্যাশবোর্ড থেকে সিলিং পর্যন্ত সব কিছুই কাস্টমাইজ করা যায়। গ্রাহকের ইচ্ছানুযায়ী গাড়ির সিলিংয়ে তারার মতো ডিজাইন তৈরি করা যায়, যা সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এবং তৈরি করতে সময় লাগে ১৬ ঘণ্টারও বেশি। এই সূক্ষ্ম কারিগরির জন্য দাম বাড়া অস্বাভাবিক নয়।

নিখুঁত পেইন্টজব

গাড়ির রঙ মসৃণ ও নিখুঁত করার জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এখানে ব্যবহার করা হয় হাতে তৈরি ব্রাশ, যা মেশিনের মতো চিহ্ন রেখে যায় না। এই নিখুঁত কাজের জন্য সময় ও শ্রম উভয়ই ব্যয় হয় প্রচুর, যা গাড়ির দামকে প্রভাবিত করে।

শব্দহীন চলন্ত গাড়ি

রোলস রয়েলস গাড়ির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর নিঃশব্দ অভিজ্ঞতা। শব্দহীন পরিবেশ নিশ্চিত করতে ৩০০ পাউন্ডের ইনসোলেশন ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, গাড়ির বিশেষ ফোমযুক্ত টায়ার রাস্তার শব্দ প্রায় ৯ ডেসিবেল পর্যন্ত কমিয়ে আনে।

স্বয়ংক্রিয় হুইল

রোলস রয়েলস গাড়ির হুইলে একটি বিশেষ প্রযুক্তি রয়েছে, যা লোগোকে সবসময় সোজা উপরে রাখে। গাড়ি পার্ক করা অবস্থায়ও লোগো কখনো উল্টে থাকে না। এই প্রযুক্তি শুধু ব্র্যান্ডের প্রতি তাদের যত্নই প্রকাশ করে না, এটি গাড়ির নান্দনিকতাও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশে রোলস রয়েলস

বাংলাদেশে গাড়ির সব কটিই রোলস রয়েসের বৈদ্যুতিক গাড়ি ‘স্পেক্টার’। আমদানি হওয়া ৮ টি গাড়ির মধ্যে প্রতিটি গাড়ির দাম পড়েছে চার থেকে সাড়ে চার কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশে রোলস রয়েসের সবচেয়ে কম দামি কুলিনান ব্র্যান্ডের গাড়িতে শুল্ক–কর আসে অন্তত ২৫–৩৯ কোটি টাকা। বৈদ্যুতিক গাড়িতে শুল্ক–কর অনেক কম।

রোলস রয়েলস এর দাম কত?

গত ১৪ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার ভাটারা এলাকার ফোর হুইলস মোটরস এ বিলাসবহুল গাড়িটি ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকায় খালাস করেছে । এই গাড়ির আমদানিমূল্য ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার পাউন্ড। চট্টগ্রাম কাস্টমস গাড়িটির আমদানি মূল্য (শুল্কায়ন) ধরে ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বৈদ্যুতিক গাড়ি হওয়ায় শুল্ক–কর ছিল ৮৯.৩২% । মোট শুল্ক দাঁড়ায় ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে রোলস রয়েস ব্র্যান্ডের গাড়িটি আমদানিতে সব মিলিয়ে খরচ পড়েছে ৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি না হলে এই গাড়ির (চার হাজার সিসির বেশি ধরে) শুল্ক–কর দিতে হতো ৮২৬.৬০% বা ৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

রোলস রয়েলস কেনার শর্ত কি কি?

ব্রিটিশ কোম্পানির এই রোলস রয়েসের গাড়ির আভিজাত্যের বড় একটি বিষয় ছিল—শুধু টাকা থাকলেই হবে না, এই গাড়ি কেনার জন্য অনেকগুলো শর্ত মানতে হতো। এ ছাড়া বিক্রির আগে এ গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার সক্ষমতাও বিবেচনায় নিত কোম্পানিটি। তবে এক–দেড় দশক ধরে রোলস রয়েস গাড়ি বিক্রির সময় এসব শর্ত দিচ্ছে না। তাতে এখন যে কেউ টাকা থাকলে রোলস রয়েস গাড়ি কিনতে পারে।

বাংলাদেশে রোলস রয়েলস গাড়ি কার কার আছে?

NBR বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর হিসাবে রোলস রয়েস এনেছে যথাক্রমে

১. বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং লিমিটেড

২.ফারইস্ট স্পিনিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড

৩. ইসলাম নিট ডিজাইনস লিমিটেড

৪.ঢাকার প্রিয়াঙ্কা ট্রেডিং লিমিটেড

৫. কন্টিনেন্টাল মোটরস

৬. এশিয়ান ইমপোর্টস লিমিটেড

৭. এ এম করপোরেশন

৮. ফোর হুইলস মোটরস।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যবহারের জন্যই অভিজাত এই গাড়ি আমদানি করেছে। তবে ক্রেতার কাছ থেকে বুকিং নিয়ে আমদানি করেছে গাড়ির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো । প্রথম আলোর বরাতে জানা গেছে, একটি বেক্সিমকো পরিবার, আরেকটি শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক ডিবিএল গ্রুপ। ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর বেক্সিমকো পরিবারের কেনা গাড়িটি আগুনে পুড়ে যায়

বৈদ্যুতিক রোলস রয়েলস: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের গাড়ি

ব্রিটিশ বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রোলস রয়েস গত বছর প্রথমবারের মতো বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারজাত শুরু করে। নিঃশব্দে চলা এই গাড়িগুলো পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত। স্পেক্টার মডেলটি মাত্র ৪.৪ সেকেন্ডে ৬০ মাইল গতিতে পৌঁছাতে পারে, যা একটি বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য অসাধারণ।

শেষ কথা

রোলস রয়েলস এমন একটি ব্র্যান্ড, যা বিলাসবহুল গাড়ি শিল্পে তাদের সৃষ্টিশীলতা, প্রযুক্তি এবং গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য সর্বদা এগিয়ে। বাংলাদেশে এই ব্র্যান্ডের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে নতুন বৈদ্যুতিক মডেলের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের আর কোন ব্র‍্যান্ডের উপর আর্টিকেল লিখতে চান জানাবেন কমেন্টে। আরো জানুন : নিজের গাড়ি চুরি করেন মেহেদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *