০৫ আগস্টের আগের কথাগুলো কি মনে আছে? অপ্রয়োজনীয় ভুয়া খবর আর বিরক্তিকর এড দিয়ে ভরা নিউজ সাইটগুলোর কথা? যেকোনো নিউজে ক্লিক করলে মনে হয় এটি খারাপ কোনো ওয়েবসাইট নাহলে Bikroy(.)com এর ছোটভাই।
কখনো কি খেয়াল করেছেন, যে একটা খবর পড়ার জন্য আপনাকে কত কষ্ট করতে হয়? কতগুলো এড কাটতে হয়? আপনার জরুরি একটা তথ্য দরকার, কিন্তু এই তথ্য পেতে আপনি দেশের সব নিউজ সাইট ভাজা ভাজা করে ফেলেছেন, কিন্তু পেলেন না? যা দেখছেন তা হালাল নাকি হারাম তার কথা না হয় বাদ ই দিলাম।
গুগল কিভাবে ভুয়া খবর ছড়ায়?
গুগলের প্রথম পেজে টাকা দিয়ে স্থান পাওয়া(Sponsored) আর্টিকেল গুলো যে বেশিরভাগ ভুয়া খবর, তা সবাই মনের অজান্তেই বুঝে গেছে। গুগলের এলগরিদম আগে এটা বাছাই করলেও বর্তমানের অবস্থায় তারা মনে হয় এটা ছেড়েই দিয়েছে। ভুয়া সংবাদ থেকে শুরু করে সত্যকে মিথ্যা বানিয়ে লেখাতে বাদ নেই দেশের কেউ।
অলিগলিতে ব্লগার, মোবাইল সাংবাদিকদের ভীরে আসল সত্যকন্ঠ কার কিভাবে খুজবেন?কাকে বিশ্বাস করবেন?ফেসবুক, ইউটিউবে দেয়া তথ্য গোগ্রোসে গিলতে থাকলে ফলাফল কি হবে?
সারাদিনে গ্রহণ করা সংবাদ কতটুকু কাজে আসে আপনার জীবনে?
আগে সারাদিন কাজ শেষ করে রাত ৭/১০ টায় খবর দেখা ছিলো একটা আভিজাত্য। কিন্তু এখন সবকিছু লাইভ। সেকেন্ডে সেকেন্ডে আপডেট। TRP আর ভিজিটর বাড়ানোর জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জার রা উঠে পরে লেগেছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা অথবা সাংবাদিকতা না থাকলে সারাদিনই খবর দেখা অস্বাভাবিক।
কোন টিকটক স্টার চুল সবুজ করলো এটা জানার সত্যিই কোন দরকার আপনার জীবনে আছে?
এ সমস্যায় শুধু যে বাংলাদেশিরা ভুগছে তা না। সবচেয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র দাবি করা আমেরিকা কোনো দিক দিয়েই কম নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ভুয়া খবরের পরিসংখ্যান
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প সহ ৬৬% ভোক্তা মনে করেন যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ৭৬% বা তার বেশি খবর পক্ষপাতদুষ্ট। সোর্স: এখানে
- অংশগ্রহণকারী ৬০% ব্যক্তিরা বিশ্বাস করে, সংবাদ মাধ্যমগুলো নিয়মিত মিথ্যা গল্প প্রকাশ করে।
- ৮২% আর্জেন্টিনিয়ান জানিয়েছেন যে তারা প্রায়ই ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা গল্প দেখেছেন, যা জার্মানি, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় অনেক বেশি।
- যুক্তরাষ্ট্রের ৬০% সাংবাদিক সংবাদপত্রের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
- ৯৪% সাংবাদিক মনে করেন যে বানানো খবর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
- ৩৮.২% মার্কিন সংবাদ ভোক্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অজান্তেই ভুয়া খবর শেয়ার করেছেন।
- মোট ১৬% উত্তরদাতা টুইটারের সংবাদকে সঠিক মনে করেছেন, তবে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী এই বিশ্বাসের তীব্র পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
- কোভিড-১৯ সম্পর্কিত আলোচিত ৬৬% বট মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে।
- ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ভিডিও Deepfake ৩ গুণ এবং ভয়েস Deepfake ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ২০২৩ সালে প্রায় ৫ লাখ Deepfake ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হয়েছে বলে অনুমান করা হয়েছে।
ভারতীয় ও দেশীয় গণমাধ্যমে ভুয়া খবর এর পরিসংখ্যান :
বিভিন্ন ভারতীয় টিভি চ্যানেল উঁচু গলায় বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলি পরিবেশন করা হচ্ছে, যেন একটা যুদ্ধ বেঁধেছে বাংলাদেশের সঙ্গে! সেই ‘যুদ্ধে’ একদিকে বাংলাদেশের হিন্দুরা, অন্যদিকে মুসলমানরা – এমনভাবেই পরিবেশন করা হচ্ছে ভুয়া খবর।
Rumour Scanner এর ২০২৩ স্ট্যাটিসটিকস অনুযায়ী প্রায় ৬২% মানুষ জানিয়েছেন যে তারা অনলাইনে ভুয়া খবরের সম্মুখীন হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশ সংবাদই ক্লিকবেট (Clickbait) অর্থাৎ শিরোনামে এক কিন্তু ভিতরে ভিন্ন। এক কথায় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যা মূলত বিভ্রান্তিকর এবং কখনো কখনো ভিত্তিহীন।
একই গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০% মানুষ অনলাইনে বিজ্ঞাপন এবং বিরক্তিকর পপআপ এডের কারণে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হন।
ভুয়া খবর এর ক্ষতিকর প্রভাব
তথ্যকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করার কারনে মানুষ একদিকে সত্যিকারের সমস্যাগুলোর সমাধান থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, অন্যদিকে সমাজে একটি অসুস্থ প্রবণতা তৈরি হচ্ছে।
- সঠিক তথ্যের অভাব: প্রায় ৭০% মানুষ মনে করেন, অনলাইনে তারা যা পড়েন তা কতটুকু সত্য, তা যাচাই করা কঠিন
- মানসিক চাপ: সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত তথ্যের স্রোত মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অনলাইন নিউজ পড়ার কারণে ৩৫% মানুষ উদ্বিগ্ন বোধ করেন।
- ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি: অনেক সময় বিভ্রান্তিকর তথ্যের কারণে মানুষ ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, যা তাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এই অবস্থায় সত্যকন্ঠ কার? সত্যকন্ঠ আপনাদের যারা সত্যের পথে থাকতে চায় এবং ন্যায়ের পথে চলতে চায়। নির্ভরযোগ্য এবং স্বচ্ছ তথ্যের জন্য ‘সত্যকন্ঠ’-এর সঙ্গে থাকুন। আরো জানুন: ৩০ সেকেন্ডের রিলস কেড়ে নিচ্ছে ৫ ঘন্টার ঘুম