রাজধানীর পূর্বাচলে ৩০০ ফিট সড়কে দ্রুতগামী প্রাইভেটকারের ধাক্কায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যু ঘটে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। এ ঘটনায় আরও দুই শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন, যিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। সহপাঠীর এমন অকাল মৃত্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছে বুয়েট শিক্ষার্থীরা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তারা ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন।
বুয়েট শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচারের দাবি
আজ শুক্রবার দুপুরে পলাশী মোড়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো:
১. এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিতে অভিযুক্তদের বাধ্য করা।
৩. নিহত মুহতাসিম মাসুদের পরিবারের জন্য যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা।
৪. তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।
৫. আহত শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বুয়েট কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিত করা।
বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যু কিভাবে?
বৃহস্পতিবার রাতে পূর্বাচল নীলা মার্কেটের কাছে ৩০০ ফিট সড়কে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে মুহতাসিম মাসুদ ও তার দুই বন্ধু – অমিত সাহা এবং মেহেদী হাসান – মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে বের হন। নীলা মার্কেটের কাছাকাছি পুলিশের চেকপোস্টে থামানোর পর একটি দ্রুতগামী প্রাইভেটকার তাদের মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দেয়।
পথচারীরা আহত তিনজনকে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মুহতাসিম মাসুদকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় অমিত সাহাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং মেহেদীকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
অভিযুক্তদের পরিচয়
প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন মুবিন আল মামুন, যিনি অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল মামুনের ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় অভিযুক্ত চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। প্রাইভেটকার তল্লাশি করে এক ক্যান বিয়ার এবং খালি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন,
“ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ডোপ টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে এবং সড়ক পরিবহন আইনে মামলা করা হয়েছে।”
নিহত ও আহতদের পরিচয়
- মুহতাসিম মাসুদ: নিহত, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার মাসুদ মিয়ার ছেলে।
- অমিত সাহা: আহত, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার তপন কুমার সাহার ছেলে।
- মেহেদী হাসান: আহত, কুমিল্লা সদরের মফিজুর রহমান খানের ছেলে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন,
“অভিযুক্ত চালক প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। তারা মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। আমরা অতীতে দেখেছি, প্রভাবশালী অপরাধীরা প্রভাব খাটিয়ে মামলার মোড় ঘুরিয়ে নেয়। তবে এবার আমরা তা হতে দেব না।”
তারা আরও বলেন,
“মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যু আমাদের জন্য একটি বড় ক্ষতি। অভিযুক্ত চালকের দোষ প্রমাণে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
পুলিশের চেকপোস্টে দুর্ঘটনা
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নীলা মার্কেটের কাছে রাতের খাবারের পর মুহতাসিম মাসুদ ও তার দুই বন্ধু মোটরসাইকেলে করে বাসায় ফিরছিলেন। চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় দ্রুতগতির প্রাইভেটকার তাদের ধাক্কা দেয়।
পুলিশ জানায়, প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় তাদের মোটরসাইকেলকে আঘাত করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
আজ সকালে রূপগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বুয়েট শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তারা মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। শিক্ষার্থীরা জানান,
“সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
উপসংহার
বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যু কেবল তার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়ন করা হলে এটি সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।
এই ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে এটি ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর বার্তা দেবে। মুহতাসিমের মৃত্যু যেন শুধুমাত্র একটি সংখ্যা হয়ে না থাকে, সেই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য।