বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, প্রবীর মিত্র আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ (৫ জানুয়ারি ২০২৫) রাত ১০টার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন । দীর্ঘ ৮১ বছরের জীবনে তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অমূল্য অবদান রেখেছেন।
প্রবীর মিত্রের জীবনকাহিনী
প্রবীর মিত্রের জীবনকাহিনী জানতে হলে যেতে হবে চাঁদপুরে। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪১ সালের ১৮ আগস্ট । বংশপরম্পরায় পুরান ঢাকার বাসিন্দা হওয়া সত্ত্বেও তিনি বড় হন ঢাকায়। সেন্ট গ্রেগরি এবং পোগজ স্কুলে পড়াশোনা শেষে জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
ক্যারিয়ারের শুরু ও নাট্যচর্চা
ছাত্রজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক ‘ডাকঘর’-এ প্রহরীর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চে অভিষেক ঘটে প্রবীর মিত্রের। পরবর্তী সময়ে পুরান ঢাকার লালকুটি থিয়েটার গ্রুপে নাট্যচর্চার মধ্য দিয়ে অভিনয় জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করেন তিনি।
১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। ছবিটির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন প্রবীর মিত্রের স্কুলজীবনের বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামান।
নায়ক থেকে চরিত্রাভিনেতা
ক্যারিয়ারের শুরুতে নায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন প্রবীর মিত্র। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’ এবং ‘রঙিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা’-তে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন। পরে তিনি চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেন।
সাফল্যের স্বীকৃতি পাওয়া প্রবীর মিত্র আর নেই
প্রবীর মিত্রের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হয়েছে অসংখ্য পুরস্কার। ১৯৮২ সালে ‘বড় ভাল লোক ছিল’-এর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে তাকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি ৪০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
ক্রীড়া জীবন
অভিনয়ের পাশাপাশি ক্রীড়াজগতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। ১৯৬০-এর দশকে ঢাকার ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেটে ক্যাপ্টেন হিসেবে খেলেছেন। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের হয়ে হকি এবং কামাল স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন ফুটবলও খেলেছেন। আরো জানুনঃ বিডিআর বিদ্রোহের পর সেনাকুঞ্জে কি ঘটেছিল?
অসুস্থতা ও মৃত্যুবরণ
প্রবীর মিত্র বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন। অক্সিজেন স্বল্পতাসহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। আজ রাত ১০টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
প্রবীর মিত্র সন্তান ও স্ত্রী
২০০০ সালে তার স্ত্রী অজন্তা মিত্র মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। ছোট ছেলে সামিউল ইসলাম ২০১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ
প্রবীর মিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন জীবনের এক পর্যায়ে গিয়ে। তার পুত্রবধূ সোনিয়া ইসলাম জানিয়েছেন, এফডিসিতে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
প্রবীর মিত্রের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ‘তিতাস একটি নদীর নাম’
- ‘জীবন তৃষ্ণা’
- ‘সেয়ানা’
- ‘জালিয়াত’
- ‘ফরিয়াদ’
- ‘চরিত্রহীন’
- ‘মধুমিতা’
- ‘ফকির মজনু শাহ’
- ‘অশান্ত ঢেউ’
- ‘অলংকার’
উপসংহার
প্রবীর মিত্রের মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তার অসামান্য অবদান, চরিত্রাভিনয় এবং ক্রীড়াজগতে সাফল্য তাকে স্মরণীয় করে রাখবে।
FAQs
- প্রবীর মিত্রের প্রথম চলচ্চিত্র কী ছিল?
তার প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘জলছবি’। - কতগুলো চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি?
তিনি প্রায় ৪০০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। - কোন ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন?
‘বড় ভাল লোক ছিল’ ছবির জন্য। - তার জন্মস্থান কোথায়?
চাঁদপুর। - তার মৃত্যুর তারিখ কত?
৫ জানুয়ারি ২০২৫।