তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

সাকরাইন উৎসব নিয়ে ২ ভাগে বিভক্ত পুরান ঢাকা

সাকরাইন উৎসব নিয়ে ২ ভাগে বিভক্ত পুরান ঢাকা
পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব

সাকরাইন উৎসব, যা অনেকেই পৌষ সংক্রান্তি নামেও জানেন —পুরান ঢাকার একটি অনন্য ঐতিহ্য। প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয় । শীতকালীন এই উৎসবটি পৌষ মাসের শেষ দিনকে কেন্দ্র করে পালিত হয়, যা পুরান ঢাকাবাসীর জীবনে এক ভিন্ন আবেগের প্রতীক। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে সাকরাইন ২০২৫ ঘিরে পুরান ঢাকা প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এই ঐতিহ্যের বিপক্ষে কিভাবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

সাকরাইন উৎসব কি?

বাংলার ষড়ঋতুর বৈচিত্র্যে ভরা এই দেশে পৌষ মাসের শেষ দিনটি, নতুন ফসল কাটার আনন্দে উদযাপন করা হয়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যিক শিকড় থেকে এর শুরু হলেও, পুরান ঢাকায় এটি বিশেষত ঘুড়ি উৎসবের মাধ্যমে নতুন পরিচয় পেয়েছে। ১৪ জানুয়ারি সকাল থেকে পুরান ঢাকার আকাশ যেন রঙিন ঘুড়ির মেলায় পরিণত হয়।

ঘুড়ি উৎসব: সাকরাইনের প্রধান আকর্ষণ

সাকরাইনের মূল আকর্ষণ হচ্ছে ঘুড়ি উৎসব। আকাশে একে অপরের ঘুড়ি কেটে দেওয়ার এই প্রতিযোগিতা, বয়স ও পেশা নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে জমে ওঠে। যারা ঘুড়ি কাটতে পারেন, তারা ‘বাজি’ জিতে আনন্দ উদযাপন করেন।

ঘুড়ি বিক্রির ঢল

সাকরাইনকে ঘিরে পুরান ঢাকার ঘুড়ির দোকানগুলোতে এখন কেনাকাটার ধুম লেগেছে। কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘুড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে, তবে উৎসাহ কমেনি। বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ির মধ্যে এ বছর ‘চাঁদ তারা,’ ‘সাপ,’ ও ‘ড্রাগন’ ঘুড়ির চাহিদা বেড়েছে।

পিঠাপুলির আনন্দ: সাকরাইনের মিষ্টি পরিবেশ

সাকরাইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পিঠা তৈরির ধুম। পৌষের এই দিনটিতে চিতই, পাটিসাপটা, দুধপুলি, আর নারকেলের মালাই পিঠা ঘরে ঘরে তৈরি হয়। আরো জানুনঃ খেজুরের রসের মাধ্যমে রিওভাইরাস (Reo Virus) ছড়াচ্ছে?

আলোকসজ্জা ও সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবহারে অসাবধানতা

আজকাল সাকরাইনের রাত আলোকসজ্জা ও ডিজে পার্টির মাধ্যমে আরো আধুনিক হয়ে উঠেছে। ঘরের ছাদগুলোতে রঙিন লাইটিং এবং সাউন্ড সিস্টেমের আয়োজন করা হয়। তবে ডিজে পার্টি এবং আতশবাজির মতো কার্যকলাপ মাঝে মাঝে এলাকাবাসীর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু ক্ষেত্রে এগুলো অশান্তির সৃষ্টি করে, যা মূল ঐতিহ্যের সঙ্গে মোটওে সংগতিপূর্ণ নয়।

সাকরাইন উৎসব নিয়ে ২ ভাগে বিভক্ত পুরান ঢাকা
সাকরাইন উৎসবে ডিজে পার্টি- ছবি AST House

ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি উৎসবের নাম হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর মধ্যে ঢুকে পড়েছে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়—অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, আর অনিয়ন্ত্রিত উন্মাদনা। সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় আতশবাজি, কানফাটানো ডিজে পার্টি, আর অসংযমী আচরণ, যা পুরো এলাকার শান্তি বিঘ্নিত করে।

সাকরাইন উৎসব ২০২৫ এ যাতে কোনো প্রকার অনাচার ও অনিয়ম না ঘটে, সেজন্য আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শাইখুল হাদিস ও মুহতামিম আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস উদ্যোগ গ্রহণ করেন, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠক করেন, এবং সবার সহযোগিতায় একটি শান্তিপূর্ণ ও নীতিসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালান। ১২ জানুয়ারি (রবিবার) বাদ আসর থেকে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

উপসংহার

সাকরাইন উৎসব ২০২৫ কেবল একটি ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা নয়; এটি পুরান ঢাকার লোকজ ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। উৎসব পালনে সকলের সুচিন্তিত পদক্ষেপ কামনা করে পুরান ঢাকাবাসী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

error: Content is protected !!