তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

বোবায় ধরার কারণ বা Sleep Paralysis কি? কেন হয়?

বোবায় ধরার কারণ বা Sleep Paralysis কি? ইসলামি ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
বোবায় ধরার কারণ বা Sleep Paralysis এর ইসলামি ও বৈজ্ঞানিক কারণ

মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর হঠাৎই মনে হলো আপনার বুকের ওপর ভারী কিছু বসে আছে। শরীর নড়ছে না, চিৎকার করার চেষ্টা করছেন কিন্তু শব্দ বের হচ্ছে না। এটি বেশ ভীতিকর, তাই না? বিশেষজ্ঞরা একে বলেন স্লিপ প্যারালাইসিস, বাংলায় যাকে বলা হয় বোবায় ধরা।

বোবায় ধরা মূলত ঘুম এবং জাগরণের মধ্যবর্তী একটি অবস্থার নাম। এই সময় মস্তিষ্ক জেগে ওঠে, কিন্তু শরীর পুরোপুরি সচল হয় না। এটি সাধারণত কিছু স্নায়বিক এবং মানসিক অবস্থার সাথে সম্পর্কিত।

বোবায় ধরার কারণ

. ঘুমের ধরণে সমস্যা : স্লিপ প্যারালাইসিস সাধারণত ঘুমের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে, REM  (Rapid Eye Movement) সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে এটি ঘটে। এ নিয়ে বিস্তারিত পড়ুন এখানে

. মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থের ভূমিকা : ডা. মো. হাসানুল হক জানান, মস্তিষ্কের গ্লাইসিন এবং গামা অ্যামাইনোবিউটেরিক অ্যাসিড নামক রাসায়নিক পদার্থ শরীরের পেশি সুইচ অফ করে দেয়। এটি তখনই ঘটে, যখন মস্তিষ্ক আংশিক জেগে ওঠে, কিন্তু শরীর ঘুমের অবস্থায় থাকে।

. মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ : ক্লান্তি, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগপূর্ণ অবস্থায় ঘুমাতে গেলে স্লিপ প্যারালাইসিসের ঝুঁকি বাড়ে।

. অনিয়মিত জীবনযাত্রা : ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন, অ্যালকোহল সেবন, ধূমপান এবং অত্যধিক ক্লান্তিও এর অন্যতম কারণ।

বোবায় ধরার লক্ষণ

  1. শরীর নাড়াতে বা কথা বলতে অক্ষমতা।
  2. বুকের ওপর ভার অনুভব করা।
  3. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  4. ভয়ানক কিছু দেখার বা উপস্থিতি অনুভব করা।
  5. অদ্ভুত শব্দ, যেমন ফিসফিস বা গুঞ্জন শুনতে পাওয়া।
  6. তীব্র আতঙ্ক এবং ঘাম হওয়া।

বোবায় ধরা নিয়ে ইসলাম কী বলে?

ইসলামের দৃষ্টিতে বোবায় ধরা অনেক সময় অতিপ্রাকৃত বা জ্বিন-ভূতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে দেখা হয়। অনেকে মনে করেন, এটি জ্বিনের আক্রমণ। তবে ইসলামি বিশেষজ্ঞরা বোবায় ধরা সম্পর্কে কুসংস্কার না করে আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে বলেন।

ঘুমানোর আগে কোন দোয়া পড়বেন ?

ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি এবং তিন কুল (সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস) পড়ে নিলে সুরক্ষা পাওয়া যায়।

  • ঘুমানোর আগে অজু করা এবং পবিত্র থাকা সুন্নাহ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

Sleep Paralysis এর কারণ (বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা)

REM  (Rapid Eye Movement)  স্লিপের সময় মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। এই পর্যায়ে, মস্তিষ্ক জেগে উঠতে পারে, কিন্তু শরীর প্যারালাইসিস অবস্থায় থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া, যা ঘুমের সময় পেশিগুলোকে সচল করে রাখে।

স্নায়ুবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা

ডা. হাসানুল হক বলেন, মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ স্নায়ু এবং পেশি ক্রিয়াকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। যদি ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময় এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তখন স্লিপ প্যারালাইসিস হয়।

যোগসূত্র মানসিক অসুস্থতার সাথে

নারকোলেপসি, মাইগ্রেন, উদ্বেগজনিত রোগ এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে।

বোবায় ধরার সমাধান এবং প্রতিরোধ

আপনার ঘুমানোর পরিবেশ, বোবায় ধরা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে, অস্বাস্থ্যকর ঘুমের পরিবেশ, যেমন অতিরিক্ত শব্দ, আলো, বা অগোছালো ঘর, স্লিপ প্যারালাইসিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ঘুমানোর জায়গাটি শান্ত, অন্ধকার এবং আরামদায়ক রাখা উচিত। তাছাড়া, ঘুমানোর আগে ফোন বা স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা এবং একটি বই পড়া বা ধ্যান করা মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং ঘুমের মান বাড়ায়। এই ছোট ছোট পরিবর্তনগুলো বোবায় ধরা থেকে রক্ষা পেতে এবং জীবনে সফল হতে সাহায্য করতে পারে।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

  • ঘুমের নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করুন।
  • প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
  • ধূমপান এবং অ্যালকোহল পরিহার করুন।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

  • মেডিটেশন এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
  • রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন।

চিকিৎসকের পরামর্শ

যদি বোবায় ধরা ঘন ঘন ঘটে, তবে নিউরোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং এবং ওষুধের মাধ্যমে এই সমস্যা দূর করা যেতে পারে।

Sleep Paralysis সম্পর্কে ভুল ধারণা

  1. এটি কোনো অতিপ্রাকৃত বা ভৌতিক ঘটনা নয়।
  2. এটি একটি মানসিক এবং স্নায়ুবিষয়ক ঘটনা ।
  3. বোবায় ধরা কোন গুরুতর অসুখ নয়।

বোবায় ধরা একটি স্বাভাবিক কিন্তু ভীতিকর অভিজ্ঞতা। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

FAQs

  1. বোবায় ধরা কেন হয়?
    স্লিপ প্যারালাইসিস মস্তিষ্কের রাসায়নিক পদার্থ এবং ঘুমের স্তরের ব্যাঘাতের কারণে ঘটে।
  2. বোবায় ধরা কি ভৌতিক কোনো ব্যাপার?
    না, এটি একটি বৈজ্ঞানিক সমস্যা, যা ঘুমের সময় ঘটে।
  3. বোবায় ধরা প্রতিরোধের উপায় কী?
    স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, নিয়মিত ঘুম, এবং মানসিক চাপ কমানো এর প্রতিরোধে সাহায্য করে।
  4. ইসলাম বোবায় ধরা নিয়ে কী বলে?
    ইসলামের দৃষ্টিতে বোবায় ধরা নিয়ে কুসংস্কার না করে দোয়া ও আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা উচিত।
  5. চিকিৎসা প্রয়োজন হলে কোথায় যেতে হবে?
    প্রয়োজনে নিউরোলজিস্ট বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

One thought on “বোবায় ধরার কারণ বা Sleep Paralysis কি? কেন হয়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *