তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ বাতিল মূল্যস্ফীতির কারণে

সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ বাতিল মূল্যস্ফীতির কারণে
সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ বাতিল মূল্যস্ফীতির কারণে

বর্তমান অর্থনৈতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রস্তাবিত মহার্ঘ ভাতা বাতিল বা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে মহার্ঘ ভাতা (ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স) সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। তবে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এতে সায় না দিয়ে তা ফেরত পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করা হতে পারে।

মহার্ঘ ভাতা এর প্রস্তাব

অর্থ বিভাগ প্রস্তাবিত মহার্ঘ ভাতা পরিকল্পনায় প্রায় ১৪.৫ লাখ সরকারি কর্মচারীকে তাদের মূল বেতনের ১০% থেকে ২০% হারে ভাতা দেওয়ার জন্য একটি খসড়া প্রস্তুত করেছিল। তবে, এই প্রস্তাবের পাশাপাশি কর্মচারীদের বার্ষিক ৫% বাড়তি ইনক্রিমেন্ট বাতিলেরও সুপারিশ করা হয়েছিল। এই মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়ন করলে এক অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতো বলে অর্থ বিভাগের হিসাবে উঠে এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বাজেটের বরাদ্দের ভিত্তিতে মহার্ঘ ভাতার জন্য অতিরিক্ত অর্থায়নের হিসাব করা হয়েছিল। প্রতি বছর বাজেটে বেতন ও ভাতা খাতে বরাদ্দ ৬% থেকে ৮% বৃদ্ধি পায়। এই হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেতন ও ভাতা খাতে বরাদ্দ প্রায় ৮৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় কাছাকাছি।

যদি মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ যুক্ত হতো, তাহলে এই খাতে ব্যয় হতো প্রায় ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

মূল্যস্ফীতি কি?

মূল্যস্ফীতি হলো এমন একটি অর্থনৈতিক অবস্থা, যেখানে জিনিসপত্রের দাম ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সহজ ভাষায় বললে, আজকে যে জিনিসের দাম যতটা, কিছুদিন পরে সেই একই জিনিসের দাম তার চেয়ে বেশি হয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, আজকে একটি বই কিনতে যদি ১০০ টাকা লাগে, তবে কিছুদিন পরে সেই বই কিনতে ১২০ টাকা লাগতে পারে। এই দাম বাড়াটাই হলো মূল্যস্ফীতি।

মূল্যস্ফীতি কেন হয়?

মূল্যস্ফীতি তখন হয় যখন মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেশি থাকে, কিন্তু জিনিসপত্রের সরবরাহ সীমিত থাকে। যেমন:

  • যদি সবাই বেশি টাকা খরচ করতে চায়, কিন্তু দোকানে জিনিসের পরিমাণ কম থাকে, তাহলে দাম বাড়ে।
  • কাঁচামালের দাম বেড়ে গেলে বা উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও জিনিসের দাম বাড়তে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কত?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১০.৮৭% এ দাঁড়িয়েছে। যেখানে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১২ .৬৬% । সেপ্টেম্বরে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৯২%। আরো জানুনঃ সিগারেটের দাম ২০২৫ সালে কত বাড়লো?

মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ নিয়ে বিশ্লেষকদের মতামত

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এই মুহূর্তে সরকারি ব্যয় কমানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়াটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পক্ষে অর্থনৈতিক যুক্তি দেওয়া কঠিন। কারণ, সরকারি কর্মচারীরা এমনিতেই বেসরকারি খাতের তুলনায় ভালো বেতন ও সুবিধা পাচ্ছেন। ২০১৫ সালের পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামো বেশ শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা বিনা সুদে গাড়ি ঋণ এবং গাড়ি ব্যবস্থাপনার জন্য মাসে অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা পাচ্ছেন। এত সুবিধার পরও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া থেকে বিরত থাকাটাই যুক্তিযুক্ত।” 

বেতন কাঠামো ও ইনক্রিমেন্ট

সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর পর সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জুলাই মাসে অষ্টম বেতন কাঠামো কার্যকর হয়। তখন নতুন কাঠামোর সুপারিশ না করলেও মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার প্রস্তাব ছিল। ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৫% হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছিলেন। তবে, মূল্যস্ফীতির চাপ বৃদ্ধির কারণে সরকারি চাকরিজীবীরা নতুন বেতন কাঠামো ও মহার্ঘ ভাতার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০% মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যদিও তা চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। তবে বিশেষ সুবিধা হিসেবে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি মূল বেতনের অতিরিক্ত ৫% প্রণোদনা দেওয়া হয়। এর ফলে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ১০% হারে ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সরকারি ব্যয় কম রাখার পরিপ্রেক্ষিতে মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হলে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ বাতিলে প্রতিক্রিয়া

এই সিদ্ধান্ত সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি ও ১০ থেকে ২০ গ্রেডের বেতন বৈষম্যের মাঝে মহার্ঘ ভাতা তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সহায়ক হতো। তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।

এ নিয়ে আপনার মতামত যানান কমেন্টবক্সে।

২ thoughts on “সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা ২০২৫ বাতিল মূল্যস্ফীতির কারণে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *