তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

কেন মোনালিসার আসল ছবি সরানো হচ্ছে লুভর থেকে?

কেন মোনালিসার আসল ছবি সরানো হচ্ছে লুভর থেকে?
কেন মোনালিসার আসল ছবিতে গোল্ডেন রেশিও / ফিবোনাচ্চি (১.৬১৮) এর ব্যবহার

প্রতিদিন হাজারো মানুষ লুভর মিউজিয়ামে ভিড় জমায় ইতিহাসের সবচেয়ে রহস্যময় চিত্রকর্ম—লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসাকে এক ঝলক দেখার জন্য । ছবিটির সামনে দাড়ালে দেখবেন কেউ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে, কেউ কাঁধ উঁচিয়ে উঁকি দিচ্ছ্র, কেউ বা এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটাকে ক্যামেরায়বন্দি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই মোনালিসা ছবি, ১৯১১ এর আগে কিন্তু এটি খুব একটা জনপ্রিয়ও ছিলো না। জনপ্রিয় হয় ফিবোনাক্কি সিরিজ ব্যবহার এবং এক চুরির কারণে।

এই মোনালিসার আসল ছবিকে সড়ানো হচ্ছে আবার। প্রশ্ন হচ্ছে কেন এবং কোথায়?

লুভর মিউজিয়াম এর পরিবর্তনঃ

সম্প্রতি, ফ্রান্স সরকার লুভর মিউজিয়ামের ব্যাপক সংস্কার প্রকল্প ঘোষণা করেছে, যা যাদুঘরটিকে আরও আধুনিক ও দর্শকবান্ধব করতে সহায়তা করবে। এই প্রকল্পে নতুন টয়লেট, রেস্টুরেন্ট এবং অন্যান্য সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর ফলে দর্শনার্থীদের জন্য লুভর পরিদর্শন আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়ে উঠবে। বিশেষ করে, সাল দেস এস্তেতস নামের প্রদর্শনী কক্ষটিতে সংস্কার করা হবে, যেখানে বিখ্যাত মোনালিসার আসল ছবি রাখা আছে।

লুভরের এই সংস্কার প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো এর অবকাঠামোকে আরও উন্নত করা, যাতে দর্শনার্থীরা আরও ভালো অভিজ্ঞতা পান। সাম্প্রতিক সময়ে, এখানে এত বেশি ভিড় হয় যে দর্শকদের মোনালিসার রহস্যময় হাসি উপভোগ করতে বেশ বেগ পেতে হয়।দীর্ঘ সময় ধরে দর্শকরা লুভরে অবস্থান করেন, তাই তাদের জন্য আরও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করাই এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এটি শুধু একটি ছোট সংস্কার প্রকল্প নয়, বরং পুরো যাদুঘরকে আরও আধুনিক করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর জন্য কয়েক শ কোটি ইউরো বরাদ্দ করা হয়েছে, যা লুভরের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিনিয়োগ। আরো জানুনঃ ৯ বছর পর জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ:

সংস্কারের খরচ: করদাতাদের উপর কোন চাপ নয়

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ ঘোষণা করেছেন যে এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকা ব্যবহার করা হবে না। তার পরিবর্তে মিউজিয়ামের টিকিট বিক্রি, দান এবং স্পনসরশিপ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হবে। এ উন্নয়নের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ আসবে আবু ধাবির সাথে এই মিউজিয়ামের চুক্তি থেকে।

মাক্রোঁ ইতোমধ্যেই নটর-ডেম ক্যাথেড্রালের সংস্কারে তার সফল নেতৃত্ব দেখিয়েছেন, এবং লুভরের সংস্কার তার পরবর্তী “গ্র্যান্ড প্রকল্প” হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

মোনালিসা ছবি কেন এত বিখ্যাত?

লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা তার সফুমাতো (Sfumato) টেকনিকের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া, মোনালিসার চোখ ও হাসির রহস্য দর্শকদের অবাক করে দেয়। যেদিক থেকেই তাকানো হোক না কেন, মনে হয় যেন ছবিটি আপনাকে অনুসরণ করছে—এটি এক ধরণের অপটিক্যাল ইলিউশন যা আজও গবেষকদের বিস্মিত করে।

প্রথমবারের মতো লিওনার্দো দা ভিঞ্চি যখন মোনালিসা আঁকলেন, তখন কি তিনি জানতেন যে এটি একদিন বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত শিল্পকর্মে পরিণত হবে? মোনালিসা-তে তিনি এক বিশেষ গাণিতিক নীতি প্রয়োগ করেছিলেন, যা ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্স নামে পরিচিত।

ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্স কি?

ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্স হলো এক ধরনের সংখ্যা বিন্যাস, যেখানে প্রতিটি সংখ্যা তার আগের দুটি সংখ্যার যোগফল (যেমন ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ইত্যাদি)। এই সংখ্যা বিন্যাস থেকে আসে গোল্ডেন রেশিও (১.৬১৮), যা প্রকৃতির অনেক কিছুতেই দেখা যায়—যেমন, সূর্যমুখীর বীজের বিন্যাস, শামুকের খোলস, ঝড়ের ঘূর্ণি, এমনকি গ্যালাক্সির আকৃতিতেও।

মোনালিসা কিভাবে চুরি হয়?

যদিও মোনালিসা আজকের মতো এতটাও পরিচিত ছিল না, কিন্তু ১৯১১ সালে এটি হঠাৎই আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে চলে আসে! এক ইতালিয়ান চিত্রকর্ম সংরক্ষণকর্মী ভিনসেঞ্জো পেরুজ্জিয়া বিশ্বাস করতেন যে মোনালিসা আসলে ইতালির সম্পদ, এবং এটি লুভরে থাকার কথা নয়। তাই একদিন তিনি যাদুঘরে কর্মীর পোশাক পরে ঢুকে মোনালিসার আসল ছবি চুরি করে ফেলেন!

চুরি হওয়া মাত্রই পুরো বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়। প্যারিস পুলিশের গোয়েন্দারা বিখ্যাত শিল্পী পাবলো পিকাসো পর্যন্ত সন্দেহের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন! প্রায় দুই বছর পর (১৯১৩), ভিনসেঞ্জো পেরুজ্জিয়া যখন এটিকে ইতালির একটি গ্যালারিতে বিক্রি করার চেষ্টা করেন, তখন ধরা পড়েন। এরপর মোনালিসা আবার লুভরে ফিরে আসে।

মোনালিসা চুরি হওয়ার পর

সংবাদপত্রগুলো একে ঘিরে নানা কাহিনি ছাপাতে থাকে। এরপর এটি একাধিকবার বিভিন্ন গবেষণার বিষয়বস্তু হয়েছে, এবং ড্যান ব্রাউনের ‘দা ভিঞ্চি কোড’-এর মতো জনপ্রিয় বই ও চলচ্চিত্রে একে রহস্যময়ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে মোনালিসার আশেপাশে আরও কৌতূহল তৈরি হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মোনালিসার ইতিহাস

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, মোনালিসাকে নাৎসিদের হাত থেকে রক্ষা করতে লুভর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার গোপন স্থানে সরিয়ে নেয়। এটি নিরাপদে রাখতে ফ্রান্সের বিভিন্ন দুর্গে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলোও মোনালিসার গুরুত্ব এবং এর ঐতিহাসিক মূল্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

মোনালিসার উপর হামলা

১৯৫৬: এক ব্যক্তি ছবিতে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারেন, এতে ছবির নিচের অংশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৯৫৬ (দ্বিতীয়বার): এক বলিভিয়ান ব্যক্তি পাথর ছুঁড়ে ছবিটির কাচ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন, এতে সামান্য ক্ষতি হয়।

১৯৭৪: জাপানে প্রদর্শনীর সময় এক প্রতিবাদকারী স্প্রে পেইন্ট ছিটিয়ে ছবিটি নষ্ট করার চেষ্টা করেন।

২০০৯: এক রুশ নারী সেরামিক কাপ ছুড়ে মারেন, তবে ছবিটি বুলেটপ্রুফ গ্লাসে থাকার কারণে রক্ষা পায়।

২০২২: পরিবেশ আন্দোলনকারী এক ব্যক্তি মোনালিসার গ্লাসের উপর কেক মেখে দেন, এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ ছিল।

One thought on “কেন মোনালিসার আসল ছবি সরানো হচ্ছে লুভর থেকে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *