তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

অপারেশন ডেভিল হান্ট সর্বশেষ আপডেট: শিকারীর শিকার শুরু

অপারেশন ডেভিল হান্ট সর্বশেষ আপডেট
অপারেশন ডেভিল হান্ট: প্রতীকি ছবি

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয় সারা দেশে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে এ অপারেশন যৌথভাবে পরিচালনা দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ।

অপারেশন ডেভিল হান্ট কিভাবে ‍শুরু হয়?

গত ২০২৫ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি, গাজীপুরে ছাত্র ও সাধারণ জনগণের ওপর সন্ত্রাসী হামলা করা হয় । এই হামলায় নেতৃত্ব দেয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী। এই হামলার ফলে বেশ কয়েকজনের হতাহতের ঘটনা ঘটে । সাধারণ জনগনের প্রতিরোধে থমথমে অবস্থা তৈরী হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। এ ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তদানুযায়ী ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে এই বিশেষ অভিযান শুরু হয়।

অপারেশন ডেভিল হান্টের সর্বশেষ খবর

– শুধুমাত্র আজ ৬০৭ জন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার।

– ২টি পিস্তল, ১টি এলজি, ১টি ওয়ান শুটারগান, ১টি পাইপগান, ২টি গুলি সহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার।

– গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৭৭৫ জন গ্রেপ্তার।

বাশার মার্কেট এলাকায় সন্ত্রাসী আটক (বাংলাদেশ নৌবাহিনী)

অপারেশন ডেভিল হান্ট এ নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আটককৃত দুর্বৃত্তিকারী
নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আটককৃত দুর্বৃত্তিকারী

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নৌবাহিনী কন্টিনজেন্টের কমান্ডার আফসার আহমেদের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। সন্ত্রাসীরা ব্রিকফিল্ডের সামনে যৌথ বাহিনীর গাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ করে। যৌথ বাহিনী তখন আত্মরক্ষা করতে ২৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসীদের পিছু হটায়। ধাওয়া করে ১০-১৫ জন সন্ত্রাসী পালিয়ে যায়। তবে, মো. নবীর উদ্দিন ও মো. ইমাম হোসেন নামে দুই সন্ত্রাসীকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৩টি একনলা দেশীয় বন্দুক, ৮টি কার্তুজ, ২০টি ককটেল, ২টি ডেগার, ৩টি ক্রিজ ও ১টি তলোয়ার উদ্ধার। আরো জানুনঃ সৈনিক পদে নিয়োগ ২০২৫: পরিবারকে গর্বিত করবেন যেভাবে!

এই অভিযানে নৌবাহিনীর সঙ্গে কোস্ট গার্ড ও পুলিশও অংশগ্রহণ করে।

ডেভিল হান্ট মানে কি?

ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। অর্থাৎ ডেভিল হান্ট-এর অর্থ দাঁড়ায় শয়তানকে শিকার করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত অপারেশন ডেভিল হান্ট বলতে বোঝায় দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের। এ বিষয়ে ৯ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতিটি অপারেশনের একটি কোড নেম দেওয়া হয় অপারেশনকে ফোকাস করার জন্য।

অপারেশন ডেভিল হান্ট কারা পরিচালনা করেছে?

বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে অভিযানটি পরিচালনা করছে, এর মধ্যে রয়েছে:

  • বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী
  • র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)
  • বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)
  • বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
  • বাংলাদেশ নৌবাহিনী
  • ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)

এ অপারেশন এর উদ্দেশ্য কি?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর মতে, পতিত আওয়ামী লীগের লুকায়িত সন্ত্রাসীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নষ্ট করতে না পারে সেই জন্য এ অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। তাছাড়াঃ

  • জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
  • সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা।
  • সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও দমন করা।
  • দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা।

কাদের শিকার করা হচ্ছে?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, অপারেশনের লক্ষ্যের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে

  • দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেই গ্রেপ্তার।
  • আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যারা সাধারণ জনগনের উপর আক্রমন চালিয়েছে বা চালাতে চাচ্ছে।
  • সরকার ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সদস্যদের।
  • ৫ আগস্ট এর পর থেকে যারা চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসের সাথে সংযুক্ত।

সন্ত্রাসীদের ধরতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রয়োজনে ভিডিও ফুটেজ এর সহযোগিতা নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশ এর ওয়েবসাইটে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ভিডিও আপলোড এর অপশন রাখা হয়েছে।

অপারেশন ডেভিল হান্টের বিষয়ে যা বলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সরকার এ অভিযানকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে বর্তমান সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, এটা পুলিশি অ্যাকশন। পুলিশ কাজ করবে এবং সেনাবাহিনী এতে সহায়তা করবে। যেসব দেশে বিপ্লব হয়েছে সেখানে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখেনি। এ সরকার অতটা অমানবিক হতে পারেনি। আমরা পুলিশকে রিফর্ম করেছি। পুলিশের কেউ ভয়ে এবং চাপে পড়ে অন্যায় করেছে। কিছু অতি উৎসাহী ছিল তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হচ্ছে। একটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে গেছে।

তিনি আরো বলেনঃ

আমরা চাই পুলিশ কোমর সোজা করে দাঁড়াক ।

কতদিন পর্যন্ত চলবে অপারেশন ডেভিল হান্ট?

রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে তাদের টার্গেট করে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলবে। গাজীপুরে যারা ছাত্র এবং সাধারন জনতার ওপর হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের ইতোমধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বাকিদেরও খুব তাড়াতাড়ি আনা হবে।

তিনি আরো বলেন,

ডেভিল মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অপারেশন চলবে

জনগণের প্রতিক্রিয়া

কিছু মানবাধিকার সংগঠন এ অপারেশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের অভিযোগ, এই ধরনের অভিযানে নিরপরাধ ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অপরদিকে অধিকাংশ সাধারণ জনগণ এই অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে ।

২ thoughts on “অপারেশন ডেভিল হান্ট সর্বশেষ আপডেট: শিকারীর শিকার শুরু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!