দেশের সাহ্রি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। রমজান শুরু হবে ২ মার্চ ২০২৫। প্রথম রোজার সাহ্রির শেষ সময় ভোর ৫টা ৪ মিনিট ও ইফতারির সময় ৬টা ২ মিনিট।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন আরও জানায়, দূরত্ব অনুযায়ী ঢাকার সময়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৯ মিনিট যোগ করে অথবা ৯ মিনিট বিয়োগ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ সাহ্রি ও ইফতার করবেন।
এবছর সাহ্রির সময় শেষে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে। আগের সতর্কতামূলক ৩ মিনিটের ব্যবধান বাদ দেওয়া হয়েছে। হাদিসে সতর্কতামূলক সময়ের কোনো বর্ণনা না থাকায় এবার এভাবে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজকের সাহ্রির শেষ সময়: (Sehri Time Today)
প্রথম রোজা (২ মার্চ)
সাহ্রি শেষ: ভোর ৫:০৪
ইফতার: সন্ধ্যা ৬:০২
আজকের ইফতারের শেষ সময়: (Iftar Time Today)
শেষ রোজা (৩১ মার্চ)
সাহ্রি শেষ: ভোর ৪:৩৪
ইফতার: সন্ধ্যা ৬:১৫
অন্যান্য জেলার সময় পার্থক্য ঢাকার সময়ের সাথে সর্বোচ্চ ৯ মিনিট যোগ বা বিয়োগ করে অন্যান্য জেলার মানুষ সাহ্রি ও ইফতার করবেন।
খেজুর দিয়ে ইফতার করা উত্তম। সত্যকন্ঠ ব্লগ এখানেঃ
রোজা রাখার দোয়াঃ
আরবি:
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণ:
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসের ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা করছি। অতএব, তুমি আমার রোজা কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়া
আরবি:
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
বাংলা: “হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।”
সাহরি (Sehri) খাওয়ার হুকুম কি?
সাহরি খাওয়ার সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ সুবহে সাদিকের আগে। সাহ্রি খাওয়া সুন্নাত, তবে সাহ্রি না খেলেও রোজা হবে। তবে সাহ্রি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং এটি রোজা রাখার জন্য সহায়ক। সাহ্রি খাওয়ার সময় জাগ্রত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হয় এবং রোজার জন্য শক্তি দেয়।
এছাড়া, এসময় আল্লাহর রহমত নেমে আসে এবং দোয়া কবুল হওয়ার ভালো সুযোগ থাকে। সাহ্রির সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তাহাজ্জুত নামাজ আদায় করা খুবই বরকতময়।
সাহ্ রিতে কি খাওয়া উচিত?
সাহ্রিতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। বিশেষ করে বেশি তরল এবং পানীয় গ্রহণ করা উচিত। খাবারের মান যাচাই করে খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং ইবাদত ভালোভাবে করা যায়।
যদি সাহরির সময় গোসল ফরজ হয়, তবে সাহ্রি খেয়ে নিতে হবে এবং পরে গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে। সাহ্রি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়, তবে নামাজের জন্য পবিত্রতা ফরজ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পেট পুরে খায় এবং তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে, সে মুমিন নয়।” তাই সাহ্রি খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী ও অসহায় মানুষের সাহায্য করা উচিত।
রোজার নিয়ত মনে মনে করতে হবে?
রোজার নিয়ত মনের মধ্যে করা হয় এবং মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। অর্থাৎ, কেউ যদি নিয়ত না করেও রোজা রাখে, তবে তার রোজা আদায় হয়ে যাবে। (সূত্র: আল-বাহরুর রায়েক, আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ, রাদ্দুল মুহতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া)
বাংলাদেশে রোজার খুব্ক জনপ্রিয় একটি আরবি নিয়ত, যা মানুষ মুখে পড়ে। তবে এই নিয়ত হাদিস বা ফিকাহর কোনো কিতাবে বর্ণিত হয়নি। তবে, কেউ চাইলে এটি পড়তে পারেন, কিন্তু মনে রাখা উচিত যে, নিয়ত মুখে পড়ার চেয়ে মনের ইচ্ছা বা নিয়ত করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
রোজা রাখলে কি হয়?
রমজানকে সঠিকভাবে কাজে লাগালে শারীরিক সুস্থতা পাওয়া সম্ভব। ওজন কমানোর এটি একটি উপযুক্ত সময়। দেখুন কিভাবে ১ মাসে ৫ কেজি ওজন কমানোর উপায় কি?
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে রোজা রাখার অনেক পুরস্কার রয়েছে। রোজাদারদের জন্য আল্লাহ তাআলা অনেক পুরস্কার রেখেছেন তার মধ্যে জান্নাতে প্রবেশের “রাইয়ান” দরজা একটি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি—একটি ইফতারের সময় এবং অপরটি তার রবের সাক্ষাৎ লাভের সময়।’ (বুখারি, ১৯০৪)
ইফতারের আগে দোয়া: ইফতারের আগে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১৭৫২)
রমজান মাসে ওজন কমানোর টিপস
এই বরকতময় মাসে সবাই একটি রুটিনবদ্ধ জীবনযাপন করেন, যা ওজন কমানোর জন্য বেশ সহায়ক। ওজন কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। নিচে রমজানে ওজন কমানোর জন্য কিছু সহজ পরামর্শ দেওয়া হলো।
সাহরিতে কি খাবেন
– সেহরি শুরু করুন দুটি গ্লাস পানি, পাঁচ থেকে সাতটি ভেজানো বাদাম, একটি আখরোট এবং একটি ফল দিয়ে। আপেল, পেঁপে, ডালিম বা আঙুর ভালো হতে পারে।
– পছন্দের সবজির সঙ্গে তিনটি ডিম রান্না করে, একটি টোস্ট বা পরোটার সঙ্গে মুড়িয়ে নিন। ডিমে পালং শাক, মাশরুম, বেল মরিচ বা টমেটো যোগ করতে পারেন।
ইফতার কি দিয়ে করবেন
– খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙুন, তারপর এক গ্লাস পানি, ডাবের পানি বা লাচ্ছি খেতে পারেন। ডাবের পানি খালি পেটে না খাওয়াই ভালো, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হতে পারে।
– এক কাপ চা এবং কিছু ভাজা ছোলা খেতে পারেন।
রোজা রেখে রাতের খাবার কি খাবেন
– এক কাপ মুরগি, মাছ বা চিংড়ি রাখুন।
– দুই কাপ ভাজা বা ভাপানো সবজি রাখুন। সালাদও খেতে পারেন।
– কিছু ভাত বা রুটি নিন। মিষ্টি বা চকলেটের একটি ছোট টুকরো ডেজার্ট হিসেবে নিন।
রমজানে জীম করা যাবে কি?
– সন্ধ্যায় রোজা ভাঙার পর অন্তত আধ ঘণ্টা ব্যায়াম বা দ্রুত হাঁটার পরামর্শ দেওয়া হয়।
– জিমে যাওয়ার আগে বা হাঁটতে যাওয়ার আগে একটি কলা খান।
– ওয়ার্কআউটের পরে পানির সঙ্গে প্রোটিন পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন।
অতিরিক্ত টিপস: – সপ্তাহে একদিন নিজের পছন্দের খাবার উপভোগ করুন, তবে খাবারের পরিমাণের দিকে নজর রাখুন।