বাংলাদেশের সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার সাথে সাথে গুজবের ঘনঘটা ছড়িয়ে পরে সাধারণ মানুষের মাঝে। এর মধ্যে ডাকাত, লুটপাট সহ আরো একটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় তা হলো দেশের সং্খ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রার্থনাস্থল ও তাদের সম্পদে লুটপাট।
বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার হলেও আসলেই কি এমন ঘটনার বাস্তবতা ছিলো? এ খবরে সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকাররা। তাদের ভাষ্যমতে, প্রচার হওয়া বেশিরভাগ খবর আসলে অতিরঞ্জিত বা ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা সাম্প্রদায়িক উষকানি ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদ সংস্থা এবং ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত শুরু করেছে। দেখা গেছে, বেশ কিছু ঘটনা বিচ্ছিন্নভাবে আংশিক সত্য হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তথ্যগুলো উপস্থাপন করা হয়েছে ভুলভাবে বা অন্য পুরোনো ঘটনার সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো কিছু ভিডিও এবং ছবি পূর্বের যা আবার নতুন করে প্রকাশিত হয়েছে এবং মানুষের মধ্যে ভীতির সঞার করে।
উদাহরণ হিসেবে, সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছিল যে এটি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর একটি সাম্প্রতিক হামলার দৃশ্য। তবে ফ্যাক্ট-চেকাররা তদন্তে উপলব্ধি করেন যে ভিডিওটি আসলে ২০১৩ সালের এবং এটি ভারতের কোন এক স্থানের। বাংলাদেশের না।
এই ধরনের ভুল তথ্যে ছড়ানোর কারণে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ানোর পাশাপাশি দেশের মুসলিম এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্পর্কও নষ্ট হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন সংবাদ এবং তথ্য যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করার ফলে সাধারণ নাগরিকদের মনে অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানবাধিকার কর্মীরা দাবি করেছেন, সহিংসতার খবর প্রচারিত হলে সেগুলোর সত্যতা যাচাই করা জরুরি, যাতে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে উত্তেজনা না ছড়ায়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ঘটনার সাথে বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন। বিভিন্ন জায়গায় দেখা গিয়েছে, মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয়া উপসানালয় গুলো পাহাড়া দিচ্ছে। এমনকি বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও বাংলাদেশের মানুষ জাত ধর্ম নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারও উল্লেখিত বিষয়টি নিয়ে সতর্ক রয়েছে এবং যারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দেশের মানুষের মাঝে গুজব ছড়ানোর চেষ্টায় আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সরকার নিশ্চিত করেছে যে দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা বদ্ধপরিকর এবং কোনও কোন ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সহ্য করা হবে না।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠানগুলো জনসচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিচ্ছে। তাদের পরামর্শ, কোনও তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করা উচিত, যাতে সমাজে মিথ্যা খবরের কারণে অস্থিরতা না ছড়ায়।
এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আশা করা যায়, ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে এবং মিথ্যা খবর ও গুজব রোধ করা সম্ভব হবে।