৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন প্যাডেলচালিত রিক্সাশ্রমিকরা।
গেলো ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হয়।
এরপর থেকেই শুরু হয় বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন দাবী– দাওয়া।
গেলো ২৬ শে আগস্ট রাজধানী ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামেন প্যাডেলচালিত রিক্সাশ্রমিকরা।সোমবার বেলা ১১ টায় তারা অবস্থান নেন শাহবাগ মোড়ে।প্রায় দুই থেকে তিনশো রিক্সাশ্রমিক সেখানে অবস্থান নেওয়ার ফলে বন্ধ হয়ে যায় শাহবাগ মোড় সহ এর আশপাশের অন্যান্য ব্যস্ত সড়কসমূহের যান চলাচল। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন রিক্সা মালিক ঐক্যজোটের ব্যানারে তারা নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে মাঠে নামেন। এ সময় তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরেন।
মমিন আলী,ঢাকা সিটি কর্পোরেশন রিক্সা মালিক ঐক্যজোটের সাধারণ সম্পাদক জানান, “আমরা আমাদের সাত দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছি। তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়েছেন। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন, সভাপতি জহুরুল ইসলাম মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ কুমার ভৌমিক, সহ সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন।“
তিনি আরো বলেন,”আমরা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। দাবি মানা না হলে আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। আমরা রিকশার বৈধ মালিক। আমরা এক লাখ ৪৩ হাজার লাইসেন্সধারী বৈধ রিকশার মালিক। আমরা সরকারকে ট্যাক্স দেই।“
এদিকে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই ৭ বছরে মোট ৩ বার হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার চলাচল বন্ধ করার জন্য।এই নির্দেশে অটোরিক্সার আমদানী নিষিদ্ধ করা হয়। ব্যস্ত সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা,থ্রি হুইলার এবং ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশনাও আসে হাইকোর্ট থেকে।
পরবর্তীতে ২০২৪ সালের মে মাসে সাবেক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার চলাচল বন্ধ করা হয়।
এতে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তার ৫ দিন পর ২০ মে,মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
এতে করে আবারো সড়ক মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত রিক্সার চলাচল শুরু হয়।
রিক্সা শ্রমিকদের সাত দফা দাবি:
মূল দাবি:
প্যাডেলচালিত রিক্সাশ্রমিকদের ৭ টি দাবির মধ্যে মূল দাবি হলো,ব্যাটারিচালিত রিক্সার চলাচল বন্ধ করা।
তারা বলেন,”ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার জন্য ন্যায্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।আগে প্রধান সড়কে অটোরিকশা চলতো না। কিন্তু এখন রাস্তায় অটোরিকশা চলার কারণে আমরা কোনো ভাড়া পাচ্ছি না।এই ব্যাটারিচালিত রিক্সাগুলো সরকার অনুমোদিত না হলেও ঢাকার অলিগলিসহ মূল রাস্তায় চলাচল করছে। এর ফলে দেখা দিচ্ছে জ্যাম এবং প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
আমাদের দাবি সহজ আর এর সমাধানও সহজ।সরকার চাইলেই আগের নিয়ম চালু করতে পারে। তাদের এটা করার জন্য আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি।
তাদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো–
–স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতন আন্দোলনে মারা যাওয়া রিকশাচালক ও আহতদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতার আওতায় আনতে হবে।দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের মাঝে দিতে হবে।
এ ব্যাপারে তারা আরো বলেন,আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের পাশে যখন কেউ ছিলো না,তখন প্যাডেলচালিত রিক্সাশ্রমিকরাই শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছেন নিজের জীবনের ঝুঁকি সত্ত্বেও।
–রিকশাচালকদের স্বাস্থ্যসেবা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
এবং বয়স্ক চালকদের দ্রুত পুনর্বাসনের আওতায় আনতে হবে।অসুস্থ চালকদের ফ্রি ফ্রাইডে চিকিৎসা দিতে হবে।
–এই সেক্টরে অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে ও কাজের সময় নির্ধারণ করতে হবে।গুলশান,বারিধারায় বিশেষ পোশাকে যেসব রিক্সা চালক বাহিনী গড়ে উঠেছে তা দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
–প্রত্যেক রাস্তার মোড়ে রিকশা চালকদের জন্য পার্কিং ও বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করতে হবে।
–ট্রাফিক পুলিশ দ্বারা শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। শপিংমল ও বাজারের দারোয়ানদের বাজে আচরণ বন্ধ করতে হবে।
–স্বাধীন দেশ সংস্কার কাজে রিকশাচালকদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে এবং তাঁদেরও সংস্কার কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। সবাইকে ট্রাফিক আইন শেখার জন্য বাধ্য করতে হবে।
এছাড়া তারা আরো দাবি জানান যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন যেভাবে রিক্সাকে প্রাচীন যুগের বাহন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে তেমনি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় জাদুঘরে রিক্সাকে প্রাচীন যুগের বাহন হিসেবে নৌকা,পালকি ও ঘোড়ার গাড়ির মতো স্থান দিতে হবে।
তারা ৭২ ঘন্টা,অর্থাৎ ৩১ শে আগস্ট পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে মাঠ ছাড়েন। দাবি আদায় না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।তারা বলেন,”আপাতত আমাদের সামনে কোনো কর্মসূচি নেই।তবে দাবি মানা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।“
পরে বেলা বারোটার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বুঝালে তারা সেখান থেকে সরে যান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তথ্যসূত্র:
-kalerkantho.com
-bangla.thedailystar.net
-amadersomoy.com