ড. মুহাম্মদ ইউনুস
বিশ্বজুড়ে “Banker to the Poor” গ্রন্থের রচনাকারী হিসেবে পরিচিত। তিনি একজন প্রভাবশালী অর্থনীতিবিদ এবং সামাজিক উদ্যোক্তা। ড. ইউনুস ১৯৪০ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন এবং ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পিএইচডি অর্জন করেন।
ক্ষুদ্র ঋণ
ড. ইউনুস এর জীবনের সবচেয়ে বড় অবদান ক্ষুদ্র ঋণের (small scale loan) ধারণার প্রবর্তন। এই প্রকল্পের প্রথম বাস্তবিক ব্যবহার হয় ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে। এর উদ্দেশ্য ছিল গ্রামে দরিদ্রদের মাঝে আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান করা, বিশেষ করে নারীদের। এই ক্ষুদ্র ঋণ মডেল দারিদ্র্য বিমোচনে একটি নতুন দিগন্তের পথ উন্মোচন করে। এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯৮৩ সালে, তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন যা আজ বিশ্বের অনেক দেশে অনুকরনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. ইউনুস ক্ষুদ্র ঋণের পাশাপাশি সামাজিক ব্যবসার ধারণারও পথপ্রদর্শক। তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যবসার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মুনাফা নয়, বরং সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রয়োজন। এই ধারণা অনুযায়ী, তিনি সামাজিক ব্যবসার অনেক মডেল তৈরি করেছেন, যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে।
নোবেল পুরষ্কার
২০০৬ সালে ড. ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা তাকে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি এনে দেয়। নোবেল কমিটি উল্লেখ করেছিল যে,
“ক্ষুদ্র ঋণের ধারণা একটি শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল বিশ্ব তৈরিতে দীর্ঘমেয়াদী মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছে।”
সম্মাননা
তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি অর্জন করেছেন:
১. স্বাধীনতা পুরস্কার (বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার)
২. মোহামেদ শাবদীন বিজ্ঞান পুরস্কার (১৯৯৩, শ্রীলঙ্কা)
৩. ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (১৯৯৪)
৪. কিং হুসেইন হিউম্যানিটারিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০০)
৫. সিউল পিস প্রাইজ (২০০৬)
৬. যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কর্তৃক “প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম” পুরস্কার
৭. “কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল” বিদেশি নাগরিকের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা
জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য হিসেবে কাজ করা ছাড়াও আরো আন্তর্জাতিক সম্মাননার পাত্র তিনি।
ড. ইউনুস এর লেখা “Banker to the Poor” গ্রন্থটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এবং এতে তার জীবনের গল্প এবং দারিদ্র্য বিমোচনে তার ধারণাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া, তিনি “Creating a World Without Poverty” ও “A World of Three Zeros” নামক আরও দুটি বই লিখেছেন, যেখানে তিনি দারিদ্র্য, বেকারত্ব, এবং সামাজিক পরিসরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের উপায় তুলে ধরেছেন।