CV বাংলা অর্থ হলো সংক্ষিপ্ত পেশাগত জীবনবৃত্তান্ত। লাতিন শব্দ “Curriculum Vitae” থেকে এসেছে এই শব্দটি । চাকরি কিংবা শিক্ষা, বিশেষ করে বর্তমানে বিয়ের জন্য সিভি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে যেকোন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা উল্লেখ থাকে বিস্তারিতভাবে । ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৮৩% রিক্রুটার সঠিকভাবে CV লেখার নিয়ম মানার কারণেই চাকরি দিয়ে থাকেন।
CV-আসলে কি?
লাতিন শব্দ “Curriculum Vitae” এসেছে “Course of Life” থেকে । ড্রিম জব, বিয়ে যাই বলেন, যেকোনো কিছু পেতে হলে পার হতে হয় প্রাথমিক বাছাই এবং পরবর্তীতে ইন্টারভিউ। কিন্তু এখন সিভির গুরুত্বই বেশি, কারণ সিভি দেখে পছন্দ হলে তবেই না ইন্টারভিউ তে ডাক আসে। এখন প্রতিটি সেক্টরের জন্য CV কিন্তু ভিন্ন। কিন্তু নিচের ১০ টি টিপস মেনে চললে আপনি ১ CV দিয়ে অনেক চাকরিতে এপ্লাই করতে পারবেন।
চাকরির CV ও একাডেমিক CV এর মধ্যে কিন্তু বিশাল পার্থক্য । চাকরির সিভি সাধারণত ১-২ পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ হয়। এতে চাকরি প্রার্থীর আগের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ থাকে। অন্যদিকে,
একাডেমিক CV অনেক বিস্তারিত হয় এমনকি ৬০+ পৃষ্ঠাও হতে পারে। যেহেতু এতে গবেষণার বিবরণ, প্রকাশনা ও শিক্ষামূলক কাজের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আরো জানুনঃ সময়ের কাজ সময়ে করা এত কঠিন কেন?
CV কত পৃষ্ঠা লিখতে হয়?
একজন ফ্রেশারের জন্য ১-২ পৃষ্ঠার CV ই যথেষ্ট। অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে ২-৩ পৃষ্ঠা হতে পারে। দীর্ঘ CV কোনভাবেই চাকরির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করে না। Forbes এর তথ্যমতে,
ফোর্বসের মতে একজন রিক্রুটার সিভিতে মোট ৬-৮ সেকেন্ড চোখ বুলায়।
চাকরি নিতে চাইলে ৭ সেকেন্ডের মধ্যে তাকে ইমপ্রেস করাই মূল উদ্দেশ্য।
চাকরির সিভির ফরম্যাটঃ
যত সহজ করা যায়, তত ভালো। অস্ট্রেলিয়ার হেড অব ট্যালেন্ট মার্কেটিং গিলিয়ান কেলি বলেছেন, চাকরির ক্ষেত্রে মানুষের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। তাই যত দক্ষতার ব্র্যান্ডিং করা যায় তত ভালো। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, এই জীবনবৃত্তান্ত হচ্ছে কোম্পানীর কাছে নিজেকে বেচার অফার। যত সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করা যাবে, অনেকের মধ্যে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। সিভির ছবি যেন ফ্যাশন টিভির মডেল এর মত না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চাকরির জন্য CV
চাকরির জন্য CV লেখার নিয়ম
১. সিভি সহজ এবং স্পষ্টভাবে লিখুন।
২. যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর, পোর্টফোলিও বা ওয়েবসাইটের লিংক দিন।
৩. আপনার দক্ষতা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা স্পষ্টভাবে দেখান। বিশেষ কারণ ব্যাতীত আপনার সিভির ৮০% জায়গা এই অংশ দিয়ে পূর্ণ করার চেষ্টা করুন। গ্লাসডোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিয়োগকারীরা, জীবনবৃত্তান্ত দেখার ৬৭% সময় শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা দেখতেই ব্যয় করেন
৪. ফ্রেশারদের CV লেখার নিয়ম হলো তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে ফোকাস করা। সাথে তাদের পড়াশোনার বাইরের গুণাবলী খেলাধুলা, বিতর্ক প্রতিযোগীতা, যেকোন টীমওয়ার্ক এর বর্ণনা, যেকোন সমস্যার মুহূর্তে আপনি কিভাবে তা থেকে বের হয়েছেন ইত্যাদি উল্লেখ করা।
৫. STAR (Situation, Task, Action, Result) ফরম্যাট ব্যবহার করুন।
৬. নতুন শিরোনামে নিজেকে ব্র্যান্ডিং করুন।
৭. Professional CV তৈরির নিয়ম হলো সর্বশেষ অর্জনগুলো উপরে রাখুন এবং সেগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা করুন।
৮. যে প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন করবেন, সেই প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী জীবনবৃত্তান্ত বানান। উল্লেখ করুন, সেই কোম্পানীতে কি অবদান রাখতে আপনি সক্ষম। যেমনঃ ৪৫% ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধি।
৯. কোম্পানী তার বিজ্ঞাপনে কি গুণসম্পন্ন লোক চেয়েছে তা বোঝার চেস্টা করুন।
১০. AI ব্যবহার করবেন না। ২০২৫ আপডেট অনুযায়ী ChatGptর প্রতিষ্ঠান OpenAi তে চাকরির জন্য AI দিয়ে সিভি লেখা নিষেধ।
একটি কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যে আপনার সিভি দেখবে সেও মানুষ, রোবট না। আপনার এর লেআউট, কালার কম্বিনেশন পছন্দ নাই হতে পারে। কিন্তু এই সমস্যা দূর করা অসম্ভব না। এমন ফরম্যাট পছন্দ করুন যা সবার জন্য আকর্ষণীয়। আরো জানুনঃ পৃথিবীর টপ ১% সফল ব্যক্তিদের অভ্যাস: কেন তারা এত সফল?
বিয়ের সিভিতে কী কী থাকবে:
১. নিজের তথ্য: সম্পূর্ণ নাম, জন্ম তারিখ, রক্তের গ্রুপ, উচ্চতা, ঠিকানা।
২. শিক্ষাগত যোগ্যতা: কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন, কোন বিষয়ে ডিগ্রি ইত্যাদি।
৩. কর্মক্ষেত্র: পেশা, চাকরির প্রতিষ্ঠানের নাম, পদবি।
৪. পারিবারিক তথ্য: মা-বাবা, ভাই-বোনের নাম, পেশা।
৫. ধর্মীয় এবং সামাজিক বিষয়: ধর্মীয় বিধি ও নিয়ম অনুসরণ করার বিষয়।
৬. বিশেষ গুণ বা শখ: ব্যক্তিগত শখ, পছন্দ-অপছন্দ, দর্শন, অর্জন।
৭. ফটো: ছবি যেন ফ্যাশন টিভির মডেল এর মত না হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৮. অতিরিক্ত তথ্য: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট যেমন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম।
এখান থেকে ডাউনলোড করুনঃ বিয়ের সিভি ডাউনলোড.doc
ঘরে বসেই পারফেক্ট সিভি তৈরীর জন্য সহজ কিছু পদ্ধতি আছে। সামান্য কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস ফলো করলেই বানানো সম্ভব।
কিভাবে ল্যাপটপে সিভি বানাতে হয়?
কিছু ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে সিভি সহজে বানানো যায়। কিন্তু এ গুলো থেকে ধারণা নেয়াই উত্তম। নিজে লেখা অথবা প্রফেশনাল দিয়ে লেখানোই হবে সর্ব্বোত্তম।
১. প্রথমে নিচের যেকোন একটি সাইটে যান।
- CVmaker.io
- CanvasCV.com
- https://www.canva.com/create/cv/
২. সাইন আপ করুন এবং “Create New Resume” বা “New CV” অপশন নির্বাচন করুন।
৩. এখানে অজস্র টেমপ্লেট থেকে আপনার পছন্দমতো বাছাই করে নিন।
৪. আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষা, কর্ম অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ইত্যাদি ফিল করুন। ডাউনলোড করুন:
কাজ শেষ হলে, ফ্রি বা প্রিমিয়াম ভার্সনে সিভি ডাউনলোড করতে পারবেন।
মোবাইল দিয়ে জীবনবৃত্তান্ত তৈরি কিভাবে:
মোবাইল দিয়েও একই পদ্ধতিতে জীবনবৃত্তান্ত তৈরী করা যায় সহজে। বিশেষ করে Canva দিয়ে।
প্রফেশনাল সিভি বানাতে এবং শিখতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।