তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র: দেশের নতুন অধ্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র: দেশের নতুন অধ্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র: ছবি-সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আগামী ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র। এই ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হবে বলে আশা করছে সবাই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের প্রেক্ষাপটে এই ঘোষণাপত্র একটি দালিলিক স্বীকৃতির প্রয়োজন মেটানোর উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের প্রেক্ষাপট

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের ফলে পতন ঘটে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের। এই অভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষের জীবনহানি এবং ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা দেশকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়। তাদের দাবি, স্বৈরাচারী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল। তবে এই বিপ্লবের ঐতিহাসিক গুরুত্ব দালিলিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং আন্তর্জাতিক ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেতে এই ঘোষণাপত্রের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আরো জানুন: জনশক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি: জাতীয় নাগরিক কমিটির বিবৃতি

তবে এই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনের ভাষ্যমতে,

“ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এত বড় একটি ঘটনার দালিলিক স্বীকৃতি না থাকলে, ভবিষ্যতে এই আন্দোলনকে অস্বীকার করার ষড়যন্ত্র হতে পারে।”

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

  • ধারাগুলোর প্রাথমিক অংশে বাংলাদেশি জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
  • পরবর্তী অংশে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ, ফলাফল এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সংস্কারের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
  • এতে ১৪টি বিশেষ পয়েন্টে রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও প্রশাসনের সংস্কারের পরিকল্পনা এবং নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগকে তুলনা করা হচ্ছে ফরাসি বিপ্লব বা ইংল্যান্ডের ম্যাগনা কার্টার মতো ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্রের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুল হক সুপণ বলেছেন,

“প্রত্যেক সফল সামাজিক আন্দোলনের একটি দালিলিক প্রমাণ থাকা প্রয়োজন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেমন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং ১/১১ এর সময়কালীন রাজনৈতিক সংকটের বিশ্লেষণও থাকবে।

৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে 'জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র'।
৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’।

অন্তঃবর্তীকালীন সরকারের প্রতিক্রিয়া:

সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম, ঘোষণাপত্রটিকে ‘প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,

‘আমরা এটিকে প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ (বেসরকারি উদ্যোগ) হিসেবেই দেখছি। সরকারের সঙ্গে এর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যাঁরা এটিকে সাপোর্ট করছেন, একটা প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভকে সাপোর্ট করছেন।’

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘোষণাপত্রকে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হিসেবে দাবি করেছে।

বিএনপির ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া 

বিএনপি দলটি ঘোষণাপত্রের কিছু বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন,

১৯৭১ সালের সংবিধান শহীদদের রক্তে রচিত। সেটিকে কবর দেওয়ার মতো মন্তব্য আমাদের ব্যথিত করেছে।

তিনি আরও বলেন, যদি সংবিধানে কোনো ত্রুটি থাকে, সেটি সংশোধনযোগ্য।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সহযোগী শক্তিগুলো এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে উপস্থিতি

ঘোষণাপত্রের কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোটে থাকা দলগুলো বাদে বাকি সব দলের নেতাদের শহীদ মিনারের এই কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে মঞ্চে রাজনৈতিক কোনো দলের নেতারা থাকবেন না। মঞ্চে থাকবেন জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত ব্যক্তিরা। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন গত ৩ আগস্ট ঘোষিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৫৮ সদস্যের সমন্বয়ক টিমের সদস্যরা। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক উপদেষ্টাও অনুষ্ঠানে থাকতে পারেন।

জাতীয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, এই ঘোষণাপত্রটি শুধুমাত্র জাতীয় স্বীকৃতির দাবি জানাবে না, বরং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জনের দিকেও মনোযোগ দেবে। আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন,

“আগামী আগস্ট থেকে এই ঘোষণাপত্র কার্যকর করার দাবি জানানো হবে।”

উপসংহার

এ ঘোষণাপত্রের প্রকাশনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি নতুন দিকচিহ্ন হতে যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসকেই নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি দালিলিক দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানের দিকে দেশবাসীর দৃষ্টি এখন নিবদ্ধ।

FAQ: 

. জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র কী?
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র হলো ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক দালিলিক স্বীকৃতি। এটি আন্দোলনের কারণ, প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরার একটি প্রচেষ্টা।

. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করছে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্রে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনের জন্য ২৯টি ধারা অন্তর্ভুক্ত করেছে। তারা এটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে।

. ঘোষণাপত্রের মূল লক্ষ্য কী?
এর মূল লক্ষ্য হলো আন্দোলনের সাংবিধানিক ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন, যাতে আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভবিষ্যতে এটি দমন বা অস্বীকার করা না যায়।

. সরকারের প্রতিক্রিয়া কী?
সরকার ঘোষণাপত্রটিকে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে জানালেও বিষয়টি ঘিরে নানা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

. এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?
এই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নতুন প্রজন্মের অবদানকে চিহ্নিত করবে।

. এটি কবে এবং কোথায় প্রকাশিত হবে?
ঘোষণাপত্রটি ৩১ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রকাশিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!