ডিজিটাল ডেস্ক | ১৩ জানুয়ারি ২০২৫
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এনডিসি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর তদন্ত প্রক্রিয়ায় গতি আনতে নতুন এক নির্দেশনা দিয়েছেন। আজকের নীতিমালা অনুযায়ী, থানায় জিডি করার এক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করতে হবে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) ডিএমপির প্ল্যানিং, রিসার্চ অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগ আয়োজিত ‘জিডি অনুসন্ধান’-বিষয়ক প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার। তার ভাষায়, “নাগরিকদের প্রত্যাশিত সেবা দ্রুত দিতে হবে। বিলম্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?
এই নির্দেশনা প্রশংসিত হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। রাজধানীর ব্যস্ত পুলিশ স্টেশনগুলোতে দিনে প্রচুর সংখ্যক অভিযোগ আসে। তাই এক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছানো বাস্তবায়নে কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষক ড. কামরুল আহসান বলছেন,
“সঠিক জনবল ও সরঞ্জাম ছাড়া এই নির্দেশনা কার্যকর করা কঠিন। তবে এটি পুলিশি সেবার ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।”
ডিএমপি কমিশনার এর বক্তব্য
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, “আপনাদের পেশাদারিত্ব বজায় রেখে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।”
ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন নির্দেশনার বাস্তবায়নে প্রতিটি থানার জন্য আলাদা একটি পর্যবেক্ষণ দল গঠন করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এ ছাড়া থানাগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু হয়েছে। আরো জানুন: জাজিরা থানার ওসি আল-আমিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার:
থানায় জিডি করার ১ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত:
নতুন নির্দেশনার বিষয়ে নগরবাসীর প্রতিক্রিয়া মিশ্র। অনেকেই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। গুলশানের বাসিন্দা রাফিয়া ইসলাম বলেন,
“এমন উদ্যোগ আগে নেওয়া উচিত ছিল। যদি এটি বাস্তবায়ন হয়, তবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই কমবে।”
অন্যদিকে, কেউ কেউ এর টেকসইতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। মিরপুরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, “থানা থেকে সঠিক সময়ে সেবা পাওয়ার অভিজ্ঞতা কম। নির্দেশনা দিলেই যে সব বদলে যাবে, তেমনটা ভাবা কঠিন।”
থানায় জিডি করার অতীত অভিজ্ঞতা:
পুলিশি সেবা পেতে দীর্ঘ অপেক্ষার অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে। থানায় অভিযোগ জমা দেওয়ার পর তদন্তে বিলম্ব এবং সঠিক সাড়া না পাওয়ার অভিযোগ ছিল নিয়মিত। নতুন এই নির্দেশনা সেই অভিজ্ঞতাগুলো পাল্টাতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে।
জিডি অনুসন্ধানে বিশেষ প্রশিক্ষণ
ডিএমপির প্ল্যানিং, রিসার্চ অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকে জানা গেছে, জিডি অনুসন্ধান-বিষয়ক প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রতিটি ব্যাচে ৫০ জন করে পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চারটি ব্যাচে মোট ২০০ জন সদস্যকে এই বিষয়ে দক্ষ করা হবে।
ডিএমপি কমিশনারের আশা, এই প্রশিক্ষিত সদস্যরা থানার সেবার মান বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।
বড় চ্যালেঞ্জ কী?
নতুন নীতিমালার বাস্তবায়নে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ সামনে আসতে পারে:
1. জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতি: পর্যাপ্ত জনবল এবং পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত না হলে নির্দেশনার কার্যকারিতা হুমকির মুখে পড়বে।
2. সময় ব্যবস্থাপনা: এক ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য যথাযথ পরিকল্পনা জরুরি।
3. স্বচ্ছতা: প্রাথমিক তদন্ত সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে নাগরিকদের অভিযোগ বাড়তে পারে।
উপসংহার
থানায় জিডি করার এক ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এটি বাস্তবায়ন করতে হলে জনবল, প্রযুক্তি ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার সমন্বয় প্রয়োজন।
নাগরিকদের প্রতি পুলিশের দায়িত্ববোধ বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এটি কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ওপর।
নগরবাসী এখন অপেক্ষায় আছে—এই উদ্যোগ কি কেবল একটি ঘোষণা হিসেবেই থেকে যাবে, নাকি এটি সত্যিই সেবার মান বদলে দেবে?