বাংলাদেশে যে সকল দেশ থেকে বিপুল পরিমানে রেমিট্যান্স আসে তার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, দুবাই অন্যতম। বিলাসবহুল এই দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ১০% অর্থাৎ ১.২ মিলিয়ন বাংলাদেশি এই দেশটির বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে থাকেন। করোনার পর থেকে এবং সর্বশেষ ৫ আগস্ট এর পর থেকে প্রশ্ন একটাই। দুবাই ভিসা কবে খুলবে ২০২৫? গত ০৫ মে ২০২৫ থেকে দুবাই ভিজিট ভিসা থেকে শুরু করে সকল ভিসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা গেছে।
দুবাই ভিসা কবে খুলবে ২০২৫
দুবাই ওয়ার্ক ভিসা বাংলাদেশী পাসপোর্টধারীদের জন্য এখন পর্যন্ত সাময়িকভাবে বন্ধ আছে। গত ২৫ জুলাই ২০২৫ তারিখে ছাত্র আন্দোলনের সময় বিটিভি ভবন হামলা পরবর্তী সময়ে ৪৯ টি বৈদেশিক মিশনের এ্যম্বাসেডরদের উক্ত ভবন দেখানো হয়। তৎকালীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ বলেন,
“আমরা খবরে দেখেছি যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে । কিন্তু মিথ্যা তথ্য প্রচারের আগে তাদের যাচাই করা উচিত ছিল।”
উক্ত সময়ে দুবাইতে উপস্থিত নাগরিকেরা ফ্যাসিস্ট সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে দুবাই সরকার তাদের মধ্য থেকে ৫৭ জনকে গ্রেফতার করে। উল্লেখ্য আরব দেশগুলোতে এ ধরনের কাজকে নিয়মপরিপন্থি হিসেবে ধরা হয়।
তবে, সাম্প্রতিক ঢাকায় অবস্থিত সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস প্রতিদিন ৩০-৫০ টি ভিজিট ভিসা ইস্যু করছে, যা একটি আশার আলো। শীঘ্রই ওয়ার্ক ভিসাও খুলবে বলেও আশা করেন কর্তৃপক্ষ। দুবাই ভিসা চেক করুন তাদের অফিসিয়াল সাইটে
দুবাই ভিসা কত ধরনের?
বা্ংলাদেশি নাগরিকদের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত এর ৫ ধরনের ভিসা খুবই জনপ্রিয়। অফিসিয়াল ওয়েবসিইট এর তথ্যমতেঃ
১. দুবাই টুরিস্ট ভিসা: মোট ১৪,৩০ এবং ৬০ দিনের জন্য টুরিস্ট ভিসা পাওয়া যায় বিভিন্ন মেয়াদে।
২. দুবাই ভিজিট ভিসা: পরিবার ও বন্ধুদের সাথে দেখা করার জন্য এ ভিসা।
৩. দুবাই ওয়ার্ক ভিসা: সংযুক্ত আরব আমিরাত এ যেকোন কাজের ভিসা।
৪. দুবাই বিজনেস ভিসা: যেকোন ধরনের ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য এ ভিসা।
৫. স্টুডেন্টদের জন্য ভিসা: পড়াশোনার জন্য যে ভিসা দেয়া গয়।
প্রতিটি ভিসার জন্য আলাদা আলাদা শর্তাবলী এবং কাগজপত্র প্রয়োজন। আরো জানুনঃ ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করুন মাত্র ১ মিনিটে
৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি দুবাই টুরিস্ট ভিসা
দুবাই তথা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (UAE)এর নতুন ভিসা সুবিধা হলো ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি টুরিস্ট ভিসা। এই দুবাই টুরিস্ট ভিসা পেলে আপনি বারবার দুবাই ভ্রমণ করতে পারবেন—প্রতি সফরে সর্বোচ্চ ৯০ দিন থাকার অনুমতি মিলবে, এবং চাইলে আরও ৯০ দিন বাড়ানো যাবে। এটি বিশ্বের সকল দেশের নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত। তবে, এই ভিসার জন্য নিচের শর্ত পূরণ করতে হয়:
১. গত ৬ মাসে ব্যাংক ব্যালেন্স থাকতে হবে কমপক্ষে ৪,০০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা,
২. valid health insurance,
৩. প্লেন টিকিট এবং দুবাইয়ে থাকার হোটেল বুকিং বা রেসিডেন্সিয়াল ঠিকানা।
কি কি কাগজপত্র লাগবে?
ভিসা আবেদন করতে হলে যেসব ডকুমেন্ট প্রয়োজন তা হলো—
- রঙিন ছবি,
- পাসপোর্টের কপি,
- মেডিকেল ইনস্যুরেন্স,
- বিগত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যেখানে ব্যালেন্স ৪,০০০ ডলার বা তার সমতুল্য)
- একটি ট্যুর প্রোগ্রামের বিবরণ
- দুবাই থেকে ফেরার টিকিট।
এই প্রক্রিয়া বেশ সহজ এবং অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। যারা ভিসা-অন-অ্যারাইভাল বা ভিসা ফ্রি এন্ট্রি-এর আওতায় পড়েন না, তাদের জন্য এই uae visa আদর্শ। বিশেষত ১৮ বছরের নিচের মেয়েরা বাবা-মায়ের সঙ্গে ভ্রমণ না করলে এই ভিসা পাবেন না। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিশুদের জন্য ভিসা ফ্রি করা হয়েছে।
আপনি চাইলে এই ভিসা UAE-এর যেকোনো এয়ারলাইনের মাধ্যমে (যেমন Emirates, Etihad, Fly Dubai, Air Arabia) আবেদন করতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে ঐ এয়ারলাইনের টিকিট কাটা বাধ্যতামূলক। অথবা ভিসা আবেদন করতে পারেন দুবাইয়ের রেজিস্টার্ড ট্যুর অপারেটর কিংবা হোটেলের মাধ্যমে, যদি আপনি তাদের মাধ্যমেই টিকিট ও বুকিং করেন। মনে রাখবেন—UAE-এর কোনো দূতাবাস সরাসরি টুরিস্ট ভিসা ইস্যু করে না। তাই যাচাই-বাছাই ছাড়া কারো সঙ্গে কাগজপত্র শেয়ার করা উচিত নয়।
বাংলাদেশ থেকে দুবাই টুরিস্ট ভিসা ২০২৫ নিয়ে যেতে প্রায় ৬০,০০০ – ১,২০,০০০ টাকা খরচ পড়ে। আরো জানুনঃসিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) ট্যুর এর জন্য যা জানা প্রয়োজন
দুবাই ওয়ার্ক ভিসা কিভাবে পাবো?
বাংলাদেশ থেকে দুবাইয়ে কাজ করতে যেতে হলে ‘ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’ প্রয়োজন হয়। যদিও বাংলাদেশি অনেকেই ভিজিট ভিসা নিয়ে সেখানে গিয়ে অবৈধভাবে কাজ করে থাকেন, এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ আইনবিরোধী। এ রকম কাজের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের নাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। দুবাইয়ের কাজের ভিসার মেয়াদ সাধারণত ২-৩ বছর হয়ে থাকে। সরকারিভাবে ভিসা নিতে চাইলে বোয়েসেল, বিএমইটি, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় অথবা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ ব্যবহার করে আবেদন করতে পারেন। বেসরকারি বিভিন্ন অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমেও ভিসা প্রসেস করা যায়, তবে প্রতারণার শিকার এড়াতে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে।
দুবাই ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য নিচের কাগজপত্রগুলো প্রস্তুত রাখতে হবে:
- বৈধ পাসপোর্ট
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়)
- কাজের দক্ষতার প্রমাণপত্র
- অভিজ্ঞতার সনদ
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
- জব অফার লেটার
- ওয়ার্ক পারমিট কাগজ
এগুলো সংগ্রহ করার জন্য আবেদন করার ৬ মাস আগ থেকে প্রস্তুতি নেয়া উচিত।
দুবাই কোন কাজের চাহিদা বেশি?
বর্তমানে দুবাইয়ে নির্মাণ খাতে যেমন সাইট ম্যানেজার, নির্মাণ শ্রমিক, টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক বেশি। কৃষি সেক্টরেও পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় কৃষকের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সাধারণ পেশার মধ্যে ড্রাইভিং, ক্লিনার, ডেলিভারি বয়, রেস্টুরেন্ট কর্মী ও রিসিপশনিস্টদের নিয়োগ অনেক বেশি। প্রযুক্তি খাতে ডেটা অ্যানালিস্ট, ওয়েব ডেভেলপার, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ও সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া, ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরও উচ্চ চাহিদা রয়েছে।
দুবাই কোন কাজের বেতন বেশি?
দুবাইয়ে মেকানিক, রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, ড্রাইভার, টেকনিশিয়ান, ইলেকট্রিশিয়ান, এবং প্লাম্বারদের বেতন তুলনামূলক বেশি। প্রফেশনাল কাজের মধ্যে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ডেটা এনালিস্ট ও চিকিৎসকদের বেতন উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি হয়ে থাকে। যেমন:
ইঞ্জিনিয়ার: ১,২০,০০০ – ২,৮০,০০০ টাকা/মাস
আইটি সেক্টর: ১,০০,০০০ – ২,৫০,০০০ টাকা/মাস
চিকিৎসক: ৮০,০০০ – ৩,০০,০০০ টাকা/মাস
দুবাই ওয়ার্ক ভিসা খরচ কত?
এটি ভিসার ধরন ও পদ্ধতির উপর নির্ভর করে। সাধারণত সরকারিভাবে যেতে খরচ কম হয়, প্রায় ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে কিংবা দালালের মাধ্যমে যেতে খরচ পড়ে ৪ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে প্রতারণার শিকার এড়াতে সবসময় সরকারি অনুমোদিত মাধ্যম ব্যবহার করাই উত্তম।