সকালের নাস্তা হোক কিংবা রাতের ডিনার, বাংলাদেশ হোক কিংবা পৃথিবীর যেকোনো দেশ হোক—ডিম সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে একটি। এটি যেমন সহজে রান্না করা যায়, তেমনি এর পুষ্টিগুণও অগণিত। উচ্চমানের প্রোটিন, অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর এই ডিমকে ‘প্রকৃতির সুপারফুড’ বলা হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়: প্রতিদিন ডিম খাওয়ার উপকারিতা কতটুকু আর অপকারিতাই কতটুকু?
অপর একটি মজার প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করা হয়েছে, তা হলো “ডিম আগে না মুরগি আগে?”
ডিমের মধ্যে কি থাকে?
– ডিমের মধ্যে ১২-১৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে যা পেশী গঠন ও মেরামতে সহযোগিতা করে।
– ভিটামিন B12 এনার্জি বাড়ায়।
– ভিটামিন D হাড় ও ইমিউনিটি শক্তিশালী করে।
– ভিটামিন A চোখ ভালো রাখে।
– খনিজ আয়রন, সেলেনিয়াম, জিঙ্ক
– হেলদি ফ্যাট যেমন ওমেগা-৩ যা মস্তিষ্কের জন্য উপকারী
– অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন যা চোখের ছানি প্রতিরোধে সহযোগিতা করে
– ২টি ডিমে ১টি মুরগির মাংসের সমান প্রোটিন থাকে, কিন্তু ক্যালরি অর্ধেক! আরো জানুনঃ ১০ টি কালোজিরা ফুলের মধুর উপকারিতা, যা সবাই জানেনা
প্রতিদিন ২টি করে ডিম খাওয়ার উপকারিতা
(১) ওজন কমাতে সাহায্য করে – উচ্চ প্রোটিন ও কম ক্যালরি (প্রতিটি ডিমে ~৭০ ক্যালরি) – পেট ভরা রাখে, অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স কম খাওয়া হয় । আরো জানুনঃ ১ মাসে ৫ কেজি ওজন কমানোর উপায় আছে কি?
(২) হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে – “ভালো কোলেস্টেরল” (HDL) বাড়ায় – নতুন গবেষণা: ডিম খাওয়া হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায় না
(৩) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি – কোলিন (Choline) নামক উপাদান স্মৃতিশক্তি ও বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক (৪) চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা – লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন চোখের রেটিনা সুরক্ষিত রাখে
(৫) হাড় ও দাঁত শক্ত করে – ভিটামিন D + ক্যালসিয়ামের সমন্বয়
(৬) রক্তশূন্যতা দূর করে – আয়রন + ভিটামিন B12 কম্বো
(৭) ত্বক ও চুলের উন্নতি – বায়োটিন ও অ্যামিনো অ্যাসিড কেরাটিন উৎপাদনে সাহায্য করে
(৮) পেশি গঠনে সহায়ক – জিমে যাওয়া লোকদের জন্য আদর্শ প্রোটিন সোর্স
(৯) গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী – ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশে সাহায্য করে
(১০) মানসিক চাপ কমায় – ট্রিপটোফ্যান (Tryptophan) সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ করে
ডিম খাওয়া নিয়ে কিছু মতবাদ
ডিমকে ঘিরে আমাদের সমাজে নানা রকমের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে।
১. ভুল ধারণা: ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে
✅ সত্য: ডিমের কোলেস্টেরল রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ায় না বরং উপকারী কোলেস্টেরল (HDL) বৃদ্ধি করে
২. ভুল ধারণা: প্রতিদিন ডিম খাওয়া কি ক্ষতিকর?
✅ মিথ্যা: স্বাস্থ্যবান মানুষ দিনে ২-৩টি ডিম খেতে পারেন নিরাপদে। গবেষণায় প্রমাণিত, নিয়মিত ডিম খাওয়া হার্টের জন্য ভালো
৩. ভুল ধারণা: কুসুম ফেলে দিলে ডিম বেশি স্বাস্থ্যকর
✅ মিথ্যা: ডিমের ৯০% পুষ্টি থাকে কুসুমে (ভিটামিন D, ওমেগা-৩, কোলিন) কুসুম ছাড়া ডিম খেলে প্রায় সব পুষ্টি হারাবেন
৪. ভুল ধারণা: ডিম ওজন বাড়ায়
✅ মিথ্যা: ডিমে উচ্চ প্রোটিন ও কম ক্যালরি (প্রতি ডিমে মাত্র ৭০ ক্যালরি) সকালে ডিম খেলে সারাদিন কম ক্ষুধা লাগে, ওজন কমাতে সাহায্য করে
৫. ভুল ধারণা: ডায়াবেটিস রোগীরা ডিম খেতে পারবেন না
✅ সত্য: ডিম রক্তে শর্করা বাড়ায় না। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন ডায়াবেটিক রোগীদের ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেয় সতর্কতা: যাদের already উচ্চ কোলেস্টেরল আছে, তারা দিনে ১টি ডিম খান ডিমে অ্যালার্জি থাকলে এড়িয়ে চলুন
ডিম আগে না মুরগি আগে বিজ্ঞান কি বলে?
“ডিম আগে না মুরগি আগে?”—এই প্রশ্নটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষকে ভাবিয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান এখন স্পষ্ট উত্তর দিয়েছে!
প্রকৃতপক্ষে, ডিমের আগে মুরগি আসেনি—কিন্তু সেই ডিমটা মুরগির ডিম ছিল না!
গবেষণা অনুসারে: প্রাচীন ডাইনোসরও ডিম পাড়ত (মুরগির লক্ষ বছর আগে) প্রথম মুরগি এসেছে একটি মিউটেশন ঘটে যাওয়া ডিম থেকে অর্থাৎ, একটি মুরগি জাতীয় এক পাখি এমন ডিম পেড়েছিল যার জিনে পরিবর্তন হয়ে প্রথম বর্তমানের মতো মুরগির জন্ম হয়। আরো জানুনঃ
৫০ হাজার টাকার ১টি ডিম
সোমারসেট সীমান্তের একজন কর্মী অ্যালিসন গ্রিন, একটি অসাধারণ গোলাকার ডিম খুঁজে পেয়েছিলেন। এটি দেখতে অস্বাভাবিক রকম গোল যা সাধারণ ডিমে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা এই ডিমকে “One-in-a-Billion” বলে বর্ণনা করেছেন।
সম্প্রতি এক্সেটারের বিয়ার্নস হ্যাম্পটন লিটলউড নিলামঘরে এই ডিমটি £420-তে বিক্রি হয়েছে যা ৫০ হাজার বাংলা টাকার বেশি। এই অর্থ সম্পূর্ণ দান করা হয়েছে এক চ্যারিটিকে। এর আগে বার্কশায়ারে একটি অনুরূপ গোলাকার ডিম £200-তে বিক্রি হয়েছিল, যার টাকাও একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থায় দান করা হয়েছিল। সোর্স
ছোট বাচ্চাদের ডিম খাওয়া উচিত কখন থেকে?
বাচ্চার ৬ মাস বয়স থেকে ডিম খাওয়ানো শুরু করুন:
– প্রথমে অর্ধেক সেদ্ধ ডিম (কুসুমসহ) দিন
– দেশি মুরগির ছোট ডিম দিলে একটি সম্পূর্ণ ডিম দিতে পারেন
– অন্যান্য প্রোটিন (মাছ/মাংস/ডাল) এর সাথে সমন্বয় করে দিন
– ৯ মাস বয়সে শিশুর ওজন ১০ কেজি হলে একটি সম্পূর্ণ ডিম দিতে পারেন এ সময় দৈনিক প্রোটিন চাহিদা ১৮ গ্রাম