সম্প্রতি কিংবদন্তি গায়িকা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রথমে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলেও পরে রাজধানীর পপুলার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সাবিনা ইয়াসমিন এইচডিইউতে (HDU) তে নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে আছেন। তবে এটি প্রথম নয়—একসময় মরণব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গেও লড়েছেন তিনি, ফিরেছেন সংগীতজগতে, মঞ্চ কাঁপিয়েছেন তার সুরের জাদুতে।
সাবিনা ইয়াসমিনের অসুস্থতা
বাংলা সংগীতের ইতিহাসে কিছু নাম চিরকাল জ্বলজ্বল করবে, আর তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাবিনা ইয়াসমিন। তার কণ্ঠের জাদুতে মোহিত হয়েছে কয়েক প্রজন্ম। স্বাধীনতার গান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের অনেক কালজয়ী গান—সবখানেই তার অবদান অপরিসীম। কিন্তু এই গায়িকার মঞ্চের পেছনে ক্যান্সারের গল্প কয়জন জানে?
সংগীতশিল্পী দিঠি আনোয়ার জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তিনি মঞ্চেই পড়ে যান। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিসজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। ভক্তরা তার সুস্থতার জন্য দোয়া করছেন।
সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম
সাবিনা ইয়াসমিনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় এক সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুন দুজনেই সংগীতপ্রেমী ছিলেন। পাঁচ বোনের মধ্যে তিনজনই ছিলেন সংগীতশিল্পী—ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান ও নীলুফার ইয়াসমিন।
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ ছিল। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি গান শেখা শুরু করেন। প্রথমে নজরুল সংগীতের প্রশিক্ষণ নেন, পরে ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রের গানে যুক্ত হন। আরো জানুনঃ পৃথিবীর টপ ১% সফল ব্যক্তিরা কেন এত সফল?
সাবিনা ইয়াসমিন এর বিখ্যাত গান
আশির দশকে সংগীতজীবনের শুরু হয়েছিল তার। সাবিনা ইয়াসমিন এর ছায়াছবির গান ‘আগুন নিয়ে খেলা’ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর থেকে তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়িকাদের একজন হয়ে ওঠেন।
তার গাওয়া বিখ্যাত কিছু গান হলো:
- “সদা জ্বলে আলো”
- “একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়”
- “এই পদ্মা এই মেঘনা”
- “প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ”
দেশাত্মবোধক গানেও তার অসামান্য অবদান রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গান মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
সাবিনা ইয়াসমিন এর ক্যান্সার হয় কবে?
সাবিনা ইয়াসমিন ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো ক্যান্সারে আক্রান্ত হন । চিকিৎসার জন্য তাকে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকতে হয়েছিল। সফলভাবে চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি আবারও সংগীতে ফিরে আসেন। কিন্তু ২০২৩ সালে ক্যান্সার আবার ফিরে আসে। নতুন করে তাকে রেডিওথেরাপি নিতে হয় এবং দীর্ঘ চিকিৎসার পর ধীরে ধীরে সুস্থ হন। এত কিছুর পরেও তিনি গান ছাড়েননি, বরং নতুন উদ্যমে শ্রোতাদের মাঝে ফিরে আসেন। কেন মোনালিসার আসল ছবি সরানো হচ্ছে লুভর থেকে?
সাবিনা ইয়াসমিন এর স্বামী কে?
তিনি তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার প্রথম স্বামী আনিসুর রহমান এবং দ্বিতীয় জন বাংলাদেশী নৃত্য পরিচালক এবং নৃত্য পরিকল্পক আমির হোসেন বাবু। তাদের দুজনের সাথে তার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। সাবিনা ইয়াসমিন এর বর্তমান স্বামী সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার কবীর সুমন। তার দুই সন্তান – কন্যা ফাইরুজ ইয়াসমিন এবং পুত্র শ্রাবণ। তার বাবা-মা দুজনেই গান পছন্দ করতেন এবং তার বড় বোনরাও সংগীতচর্চা করতেন।
সংগীতজীবনে অনেক উত্থান-পতন দেখেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। ৯০-এর দশকে তার জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গেলেও নতুন সহশিল্পীদের সঙ্গে কাজ করে আবারও নিজের অবস্থান ধরে রাখেন। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক গানেও তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন, যা তাকে আজও প্রাসঙ্গিক রেখেছে।
একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার
সাবিনা ইয়াসমিন ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৬ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
অসংখ্য জনপ্রিয় গান উপহার দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এটি বাংলাদেশের কোনো সংগীতশিল্পীর জন্য বিরল অর্জন।
সাবিনা ইয়াসমিনের দেশাত্মবোধক গান
- জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো
- সব ক’টা জানালা খুলে দাও না
- ও আমার বাংলা মা
- মাঝি নাও ছাড়িয়া দে
- সুন্দর সুবর্ণ
- একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার
- আমরা সব বাঙালি
- গানটি রচনা করেছি আমি
- মা তোমার জন্য রক্ত দেবে বাংলাদেশ
- শোনো শোনো গানের সুর
- আমাদের এই দেশের নাম
- বাংলার মাটিতে জন্মেছি
- সোনার বাংলা
- একরঙা নাও
- বাংলা দেশের পক্ষে
- হো চাঁদের দেশ
- ঐ আমার দেশ
- আমার দেশ এক দিগন্ত
- পাখি আমি ঘর বাঁধি
- দেশ তো শুধু দালানে নয়
- ঐ সোনালি সীমানায়
- সোনার বাংলা পেতে চাই
- শুনো, সারা দেশ তোমার কাছে
- তুমি আমার বাংলাদেশ
- বাংলার হারানো শঙ্খ
- আমি বাংলায় জন্মেছি
- স্বাধীনতা আমার বাংলাদেশ
- সব ক’টা জানালা খুলে দাও
- সুন্দর সুবর্ণ আমার
- দেশের বুকে বাংলা গান