খান জাহান আলী সেতু, যা রূপসা সেতু নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের খুলনা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটি রূপসা নদীর উপর নির্মিত একটি আধুনিক সেতু, যা খুলনা শহরকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির সাথে সংযোগ করেছে। সেতুটি যোগাযোগের মাধ্যম হওয়ার পাশাপাশি খুলনার দর্শনীয় স্থান এবং পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এই রূপসা সেতু খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এটি দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলি, বিশেষত মংলা সমুদ্র বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
খান জাহান আলী সেতুর বিখ্যাত ইতিহাস
জাপান সরকারের আর্থিক সহায়তায় সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০১ সালে এবং ২০০৫ সালে উদ্বোধন করা হয়। এই সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতুটির উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
রূপসা সেতুর যে তথ্যাবলী জানা প্রয়োজন
খান জাহান আলী সেতুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৬.৪৮ মিটার। সেতুটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর দুই প্রান্তে দুটি করে মোট চারটি সিঁড়ি রয়েছে, যা দিয়ে মূল সেতুতে উঠা যায়। সেতুটি পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য বিশেষ লেন সুবিধা প্রদান করে।
রূপসা নদী
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী রূপসা। খুলনা জেলার বুকচিরে প্রবাহিত হওয়া রূপসা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার। রূপসা নদী পদ্মা নদীর একটি শাখা এবং এটি ভৈরব নদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে পশুর নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীটি জোয়ার-ভাটায় প্রভাবিত হয় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
কিভাবে খান জাহান আলী সেতুতে যাবেন?
খান জাহান আলী সেতু বা রূপসা সেতু খুলনা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যা পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথে যাতায়াতের সুবিধা রয়েছে। আরো দেখুনঃ সিপ্পি আরসুয়াং (Sippi Arsuang) ট্যুর এর জন্য যা যা লাগবে
ঢাকা থেকে খুলনা কিভাবে যাবেন?
সড়কপথেঃ ঢাকার গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ থেকে এ কে ট্রাভেলস, সোহাগ, হানিফ, ফাল্গুনি, সেবা গ্রিন লাইন ও টুঙ্গি পাড়া এক্সপ্রেসের মতো বাসে করে খুলনা যাওয়া যায়। বাস ভেদে ভাড়া পড়বে ৬৫০ থেকে ১৪০০ টাকা।
রেলপথেঃ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন বা চিত্রা এক্সপ্রেসে খুলনা যাওয়া যায়। এসি টিকেটের মূল্য ২১৬৮ টাকা এবং সাধারণ কোচে ৬২৫ টাকা।
নদীপথেঃ ঢাকার বাদামতলী ঘাট থেকে প্রতি বুধবার পি এস মাসহুদ বা পি এস অস্ট্রিচের মতো স্টিমার মোংলা হয়ে খুলনা যাওয়া যায়।
খান জাহান আলী সেতু থেকে রূপসা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়, বিশেষ করে সূর্যাস্ত ও রাতের বেলায় সেতুটি থেকে খুলনা শহরের দৃশ্য অসাধারণ লাগে।
রূপসা সেতুতে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য কখন?
১. সূর্যাস্ত ও রাতের বেলায় সেতুটি আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়, যা দেখতে খুবই আকর্ষণীয়।
২. সেতুর পশ্চিম প্রান্তে নদীর পাড়ে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা রয়েছে, যা ফটোগ্রাফির জন্য আদর্শ।
৩. সেতুতে পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য আলাদা লেন রয়েছে, তাই নিরাপদে হাঁটাচলা করা যায়।
খুলনা কোথায় থাকবেন?
খুলনা শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্ট হাউস রয়েছে। যেমনঃ
– টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল হোটেল।
– হোটেল ক্যাসল সালাম।
– ওয়েস্টার্ন ইন।
– বিআইডব্লিউটিসি রেস্ট হাউস। (সরকারি)
– খুলনা সার্কিট হাউস। (সরকারি)
খুলনায় বিখ্যাত খাবার কোনটি?
খুলনা শহরে বেশ কিছু বিখ্যাত খাবার আছে। অন্যতম হচ্ছেঃ
– চুইঝালের ঘুগনি ও ঝালমুড়ি।
– খালিশপুরের বিরিয়ানি ও ১ টাকার পুরি।
– গলদা চিংড়ি ও সন্দেশ।
– চুইঝালের খাসি ও গরুর গোস্ত
– হোসেন মামার চা
খান জাহান আলী সেতু বা রূপসা সেতুর পাশাপাশি খুলনা জাদুঘর, হাদিস পার্ক, সুন্দরবন ও রাখতে পারেন আপনার ভ্রমণ লিস্টে।