
বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার পর্যটকদের কাছে সবসময়ই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ২০২৬ সালে কক্সবাজার ভ্রমণ আরও রোমাঞ্চকর হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং রেল যোগাযোগের উন্নতির ফলে। আপনি যদি ২০২৬ সালে কক্সবাজার ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন, তবে এই গাইডটি আপনার জন্য। এখানে আমরা হোটেল, খাবার, যাতায়াত এবং দর্শনীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত তথ্য ও খরচের তুলনামূলক বিশ্লেষণ তুলে ধরেছি。
১. যাতায়াত ব্যবস্থা ও খরচ (২০২৬ আপডেট)
ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য এখন সড়ক, রেল ও আকাশপথ—এই তিন মাধ্যমই জনপ্রিয়।
| মাধ্যম | শ্রেণী/ধরন | সম্ভাব্য ভাড়া (জনপ্রতি) | সময় | মন্তব্য |
|---|---|---|---|---|
| ট্রেন | শোভন চেয়ার | ৫৬৫ – ৬৯৫ টাকা | ৮-৯ ঘণ্টা | সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক (কক্সবাজার এক্সপ্রেস) |
| ট্রেন | স্নিগ্ধা (এসি) | ১,৩২২ – ১,৫০০ টাকা | ৮-৯ ঘণ্টা | জনপ্রিয় ও দ্রুত বুকিং হয়ে যায় |
| বাস | নন-এসি | ১,০৫০ – ১,২০০ টাকা | ১০-১২ ঘণ্টা | বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য |
| বাস | এসি (বিজনেস) | ২,০০০ – ২,৭০০ টাকা | ৯-১০ ঘণ্টা | স্লিপার বা রিলাক্সিং জার্নি |
| বিমান | ইকোনমি | ৪,০০০ – ১০,০০০ টাকা | ৪৫ মিনিট | দ্রুততম, সময় বাঁচাতে সেরা |
২. হোটেল ও রিসোর্ট: বাজেট বনাম লাক্সারি
২০২৬ সালে কক্সবাজারে থাকার জন্য বাজেটের ওপর ভিত্তি করে প্রচুর অপশন রয়েছে। নিচে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেওয়া হলো:
বাজেট হোটেল (৩-স্টার বা সাধারণ)
- খরচ: প্রতি রাত ৩,৫০০ – ৫,০০০ টাকা (৩০-৪৫ ডলার)।
- জনপ্রিয় নাম: হোটেল কল্লোল, সি প্যালেস (স্ট্যান্ডার্ড), বা কলাতলীর সাধারণ হোটেলগুলো।
- সুবিধা: এসি রুম, ফ্রি ওয়াইফাই, সৈকতের কাছাকাছি অবস্থান।
লাক্সারি হোটেল ও রিসোর্ট (৫-স্টার)
- খরচ: প্রতি রাত ৭,০০০ – ৪০,০০০+ টাকা (৬০-৩৫০+ ডলার)।
- জনপ্রিয় নাম: সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, সায়মন বিচ রিসোর্ট।
- সুবিধা: প্রাইভেট বিচ, ইনফিনিটি পুল, স্পা, বুফে ব্রেকফাস্ট, জিম।
টিপস: ছুটির দিন (শুক্র-শনি) বা শীতকালে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) হোটেল ভাড়া দ্বিগুণ হতে পারে। অফ-সিজনে (মার্চ-জুন) গেলে ৩০-৪০% ছাড় পাওয়া সম্ভব。
৩. খাবার ও রেস্তোরাঁ গাইড
কক্সবাজারে গিয়ে সামুদ্রিক মাছ বা সি-ফুড না খেলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

সেরা সি-ফুড রেস্তোরাঁ
- মারমেইড ক্যাফে: মেরিন ড্রাইভের পাশে রোমান্টিক ডিনারের জন্য সেরা। খরচ একটু বেশি হলেও পরিবেশ অসাধারণ।
- ইএফসি (EFC) লাইভ ফিশ: ইনানী বিচে জ্যান্ত মাছ বা ক্র্যাব ফ্রাই খাওয়ার জন্য জনপ্রিয়।
- সল্ট বিস্ট্রো: ইউরোপীয় ও লোকাল ফিউশন সি-ফুডের জন্য পরিচিত।
বাজেট খাবার ও লোকাল স্বাদ
- হাঁড়ি (Handi): বিরিয়ানি এবং ভর্তা-ভাতের জন্য বাজেট ফ্রেন্ডলি।
- শালিক রেস্তোরাঁ: কম খরচে দুপুরের লাঞ্চ বা ডিনারের জন্য আদর্শ।
- ঝাউবন: কলাতলী মোড়ে অবস্থিত, ভর্তা ও মাছ ভাতের জন্য বিখ্যাত।
৪. দর্শনীয় স্থান ও অ্যাক্টিভিটি ২০২৬
- মেরিন ড্রাইভ: ৮০ কিমি দীর্ঘ এই সড়ক দিয়ে জিপ বা অটোতে ভ্রমণ এক অসামান্য অভিজ্ঞতা।
- ইনানী ও হিমছড়ি: পাথুরে সৈকত এবং পাহাড়ের ঝর্ণা দেখার জন্য।
- মহেশখালী: আদিনাথ মন্দির ও রাখাইন পল্লী দেখার জন্য স্পিডবোটে যাত্রা।
- রামু বৌদ্ধ বিহার: প্রাচীন স্থাপত্য ও ১০০ ফুট লম্বা গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।
খরচ বিশ্লেষণ (৩ দিন ২ রাত – জনপ্রতি আনুমানিক)
| খরচের খাত | বাজেট ভ্রমণকারী | লাক্সারি ভ্রমণকারী |
|---|---|---|
| যাতায়াত (ঢাকা-কক্স-ঢাকা) | ১,২০০ – ১,৫০০ টাকা (ট্রেন/বাস) | ৮,০০০ – ১২,০০০ টাকা (বিমান) |
| হোটেল (২ রাত – শেয়ারিং) | ৩,০০০ – ৪,০০০ টাকা | ১৫,০০০ – ২৫,০০০+ টাকা |
| খাবার (৩ দিন) | ২,০০০ – ২,৫০০ টাকা | ৫,০০০ – ৮,০০০ টাকা |
| ঘোরাঘুরি ও অন্যান্য | ১,০০০ – ১,৫০০ টাকা | ৫,০০০ – ১০,০০০ টাকা (রিজার্ভ গাড়ি) |
| মোট খরচ | ৭,২০০ – ৯,৫০০ টাকা | ৩৩,০০০ – ৫৫,০০০+ টাকা |
উপসংহার
২০২৬ সালে কক্সবাজার ভ্রমণ আগের চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও আরামদায়ক হবে। আপনি যদি বাজেট ট্রাভেলার হন, তবে ট্রেনের টিকিট আগেভাগে কেটে অফ-পিক সিজনে ভ্রমণ করুন। আর লাক্সারি ট্রিপের জন্য মেরিন ড্রাইভের রিসোর্টগুলো বেছে নিন। কুয়েত টুরিস্ট ভিসা ২০২৫ আপডেট: চালু হলো ৪টি ই-ভিসা
তথ্যসূত্র:
৫. কক্সবাজার ভ্রমণ: জরুরি টিপস ও সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)
ভ্রমণকে আরও নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আনন্দদায়ক করতে পর্যটকদের কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর ও গোপন টিপস নিচে দেওয়া হলো:
কক্সবাজার ভ্রমণের সেরা সময় কখন?
সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ মাস কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময়। এই সময়ে আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ থাকে এবং সমুদ্র শান্ত থাকে। তবে আপনি যদি ভিড় এড়াতে চান এবং হোটেল ভাড়ায় ছাড় (৩০-৪০%) পেতে চান, তবে বর্ষাকাল (জুন-জুলাই) বা রমজান মাসে ভ্রমণ করতে পারেন。
সৈকতে ফটোগ্রাফার ও হকারদের সাথে সতর্কতা
সৈকতে নামার সাথে সাথে অনেক ফটোগ্রাফার ছবি তোলার জন্য অনুরোধ করবে। ছবি তোলার আগে অবশ্যই রেট (প্রতি কপি 3-5 টাকা) ঠিক করে নিন এবং মোট কতটি ছবি তুলবেন তা নির্দিষ্ট করে দিন। একইভাবে, বিচ বাইক বা ঘোড়ায় চড়ার আগেও দরদাম করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ。
নিরাপত্তা বিষয়ক টিপস
- জোয়ার-ভাটা মেনে চলুন: সমুদ্রে নামার আগে লাইফ গার্ডদের নির্দেশাবলি ও জোয়ার-ভাটার সময়সূচি দেখে নিন। লাল পতাকা উড়ানো থাকলে পানিতে নামবেন না।
- মহিলাদের নিরাপত্তা: কক্সবাজার এখন নারীদের জন্য বেশ নিরাপদ। টুরিস্ট পুলিশ সবসময় টহলে থাকে। কোনো সমস্যায় পড়লে ১৬৬৬৬ নম্বরে কল করে টুরিস্ট পুলিশের সহায়তা নিতে পারেন।
খাবারে খরচ বাঁচানোর উপায়
বড় রেস্তোরাঁর বদলে কলাতলী বা সুগন্ধা বিচের কাছের ঘরোয়া হোটেলগুলোতে (যেমন- পৌষি বা ঝাউবন) খেলে খরচ প্রায় অর্ধেক কমে যায়। এছাড়া, তাজা মাছ কিনে ফ্রাই করে খাওয়ার ক্ষেত্রেও আগে থেকে সলিড প্রাইস জেনে নেওয়া উচিত।