তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না। @@ surah baqara ayat 42 Al Quran 2:42 @@

চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী

চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী
চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী- NDTV

সম্প্রতি চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের একটি মহামারী নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা চলছে। এই ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায় এবং যেকোন বয়সের মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। যদিও এটি আগে থেকেই বিজ্ঞানীদের কাছে পরিচিত ছিল, চীনে এর সাম্প্রতিক সংক্রমণ পরিস্থিতি নতুন করে বিশ্ববাসীর কাছে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

কোভিড-১৯ মহামারীর পাঁচ বছর পর চীন এইচএমপিভি (হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস) এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করছে।  সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলি ইঙ্গিত দেয় যে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, কেউ কেউ দাবি করেছেন যে হাসপাতাল এবং শ্মশানগুলি ভর্তি  হয়ে আছে । অনলাইনে শেয়ার করা ভিডিওগুলিতে এর কিছু সত্যতা মিলে। কিছু ব্যবহারকারী বলছেন যে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, এইচএমপিভি, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া এবং কোভিড -19 সহ একাধিক ভাইরাস চীনে ছড়িয়ে পড়ছে।

HMPV (Human Metapneumovirus) কী?

HMPV বা Human Metapneumovirus একটি শ্বাসযন্ত্রজনিত ভাইরাস যা মূলত ফুসফুস এবং শ্বাসনালীতে সংক্রমণ ঘটায়। এটি প্রথমবার ২০০১ সালে আবিষ্কৃত হলেও, বিজ্ঞানীরা মনে করেন এটি অনেক আগে থেকেই মানবদেহে উপস্থিত ছিল। এই ভাইরাসটি ইনফ্লুয়েঞ্জা বা RSV-এর মতো কাজ করে এবং সাধারণ ঠান্ডা, সর্দি কিংবা নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ তৈরি করে।

HMPV-এর লক্ষণসমূহ

এই ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়:

  1. জ্বর
  2. গলা ব্যথা
  3. সর্দি ও কাশি
  4. শ্বাসকষ্ট
  5. ফুসফুসে প্রদাহ
  6. নিউমোনিয়া (গুরুতর ক্ষেত্রে)
  7. খাদ্যে অনীহা (শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি)

লক্ষণগুলো ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনাভাইরাসের মতো মনে হতে পারে, তবে এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি নেই

চীনে HMPV প্রাদুর্ভাব

সম্প্রতি চীনে এই ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ‘SARS-CoV-2 (Covid-19)’ নামক একাউন্টধারীর X (টুইটার) পোস্টে লিখেন:

চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী নিয়ে টুইটার পোস্ট
চীনে HMPV (Human Metapneumovirus) ভাইরাসের মহামারী নিয়ে টুইটার পোস্ট

রয়টার্সের একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, চীনের রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ শুক্রবার বলেছে যে তারা চলমান শীতকালে কিছু শ্বাসযন্ত্রের রোগের ঘটনা বাড়বে বলে আশা করছে।  এমনকি দাবি করা হয়েছে যে চীন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, যদিও এটি নিশ্চিত করা হয়নি। শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা HMPV-এর কারণে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাসটি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়াতে পারে, যা এটিকে অত্যন্ত সংক্রামক (contagious) করে তুলেছে। তবে এটি কতটা প্রাণঘাতী (deadly), তা নির্ভর করে রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর

HMPV কতটা সংক্রামক?

HMPV শ্বাসযন্ত্রের অন্যান্য ভাইরাসের মতোই হাঁচি, কাশি বা যেকোনো বস্তু হস্তান্তরের মাধ্যমে ছড়ায়। ঘন ঘন হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার, এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এর সংক্রমণ ঠেকাতে সহায়ক হতে পারে।  আরো জানুন: বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি কে? ফোর্বসের ২০২৪ সালের সর্বশেষ তালিকা

HMPV-এর ভ্যাকসিন

এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। তাই প্রতিরোধই এখানে মূলমন্ত্র। বিশেষজ্ঞরা নিম্নলিখিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেন:

  1. নিয়মিত হাত ধোয়া।
  2. মাস্ক পরা।
  3. বাইরে বের হলে জনবহুল জায়গা এড়িয়ে চলা।
  4. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।
  5. আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা।

FAQ (সাধারণ প্রশ্নোত্তর) 

প্রশ্ন: HMPV কি প্রাণঘাতী?

উত্তর: HMPV সাধারণত প্রাণঘাতী নয়। তবে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তাদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে।

প্রশ্ন: HMPV কীভাবে ছড়ায়?

উত্তর: এই ভাইরাসটি হাঁচি, কাশির মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়ায়।

প্রশ্ন: HMPV-এর জন্য কোনো ভ্যাকসিন আছে কি? 

উত্তর: না, HMPV-এর জন্য বর্তমানে কোনো ভ্যাকসিন নেই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই সংক্রমণ রোধের উপায়।

প্রশ্ন: HMPV-এর চিকিৎসা কীভাবে করা হয়? 

উত্তর: HMPV-এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসা সাধারণত লক্ষণ উপশমের ওপর ভিত্তি করে করা হয়, যেমন প্যারাসিটামল বা কাশির সিরাপ ব্যবহার।

প্রশ্ন: শিশুদের জন্য এই ভাইরাস কতটা বিপজ্জনক?

উত্তর: শিশুদের জন্য এটি গুরুতর হতে পারে, বিশেষত যদি তারা আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত থাকে।

উপসংহার

HMPV ভাইরাস বর্তমানে চীনে জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। যদিও এটি প্রাণঘাতী নয়, সতর্কতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এর সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং স্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো ভাইরাসটির পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাই, সচেতন থাকা এবং সঠিক তথ্য জানা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।