India vs Pakistan ম্যাচ মানেই কোটি মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন। চরম উত্তেজনা ও আবেগের দেখা মিলে এই ম্যাচে। শুধু ব্যাট-বলেই নয়, সম্মানেরও লড়াই ও দেখা মিলে। সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ উপভোগ করেছে ৪০০ মিলিয়ন ক্রিকেটভক্ত । যুগে যুগে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা জন্ম দিয়েছে অগণিত মহাকাব্যিক মুহূর্ত। প্রথমবার ১৯৫২ সালে মুখোমুখি হয়েছিলে এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। এরপর প্রতিটি ম্যাচ রচনা করেছে নতুন ইতিহাস।
যেখান থেকে শুরু দুই দলের শত্রুতা
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা দেশ হয়। তখন থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক ভালো ছিল না। যুদ্ধ ও রাজনৈতিক সমস্যার কারণে সম্পর্ক ক্রমশই তিক্ত হতে থাকে। এই টানাপোড়েন ক্রিকেটেও প্রভাব ফেলে। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান প্রথমবার ভারতের সঙ্গে খেলে। এরপর অনেক টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ হয়। কিন্তু রাজনৈতিক সমস্যায় অনেক ম্যাচ বাতিল হয়। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ২০২৫ এ Ind vs Pak ম্যাচ
রবিবার (২৩ মার্চ) দুবাইতে হওয়া India vs Pakistan ম্যাচ ঘিরে আগ্রহ এখন তুঙ্গে। বেশিরভাগ ক্রিকেটপ্রেমী ভারতকে দেখছেন ফেবারিট হিসেবে। ব্যাটিং এবং বোলিং—দুই বিভাগেই ভারত ফর্মে আছে। ইতোমধ্যে ভারত, বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করা ভারতের ওপেনার জানিয়েছেন,
“এই উইকেটে ৩০০-৩২৫ খুব ভালো স্কোর হবে।”
মধ্য ওভারে ভালো ব্যাটিং করা দলই জয়ী হওয়ার সুযোগ পাবে। তিনি টস নিয়ে বলেন,
“শিশির না থাকায় টসের তেমন কোনো গুরুত্ব থাকবে না, তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে চাপে থাকতে হবে।”
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পাকিস্তান ই বেশি চাপে
অন্যদিকে, পাকিস্তান চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরু করেছে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে। তাদের ব্যাটিং নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে হতাশা দেখা যাচ্ছে। নাসিম শাহ, শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফদের বোলিং বিভাগও দারুণ কিছু করতে পারছে না বেশ কিছুদিন ধরেই। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান এখন বেশি চাপে।
পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার বাসিত আলী বলেছেন, ভারতকে হারানো হলে সেটি হবে অঘটন। তিনি বলেন,
“৮০ শতাংশ মানুষ ভারতকেই জয়ী হিসেবে দেখছেন।”
এখন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি তাদের জন্য বাঁচামরা। ২৯ বছর পর আইসিসির কোনো টুর্নামেন্ট পাকিস্তানে ফিরেছে। কিন্তু উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে পাকিস্তান হারায়। ভারতের বিপক্ষে জয় তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন, পাকিস্তান কীভাবে ম্যাচটি ঘুরিয়ে আনবে? গ্যালারিতে ভারতের সমর্থকরা বেশি থাকবে, এই অবস্থায় পাকিস্তানের পারফরম্যান্সই এখন দেখার বিষয়।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় টুর্নামেন্টে ২৫ বছর বয়সী শুভমন গিলকে সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে তিনি বলছেন, এই দায়িত্ব তার খেলার ধরনে কোনও পরিবর্তন আনেনি। শুভমন গিল জানিয়েছেন,
“ভাইস ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব পাওয়ার পর কিছুই বদলে যায়নি। যখনই আমি ব্যাটিং করি, একজন ব্যাটার হিসেবেই খেলি। ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচও কিছু বদলে দেবে না। আমরা খেলি প্রতিটা ম্যাচ জেতার জন্য।”
ভারত পাকিস্তান ম্যাচ পরিসংখ্যান
পাকিস্তান এখনও ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে। টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তান ১২টি ম্যাচ জিতেছে। ভারত জিতেছে ৯টি টেস্ট ম্যাচ। ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তান ৭৩টি ম্যাচ জিতেছে। ভারতের জয় সংখ্যা ৫৫। তবে টি-টোয়েন্টিতে ভারত এগিয়ে। ভারত জিতেছে ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। পাকিস্তান জয় পেয়েছে ৪টি ম্যাচে। এই পরিসংখ্যানগুলো দুই দলের মধ্যে উত্তেজনার মূল কারণ। যদিও পরিসংখ্যানের পার্থক্য রয়েছে, প্রতিটি ম্যাচই বিশেষ।
ভারত পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাস
১৯৭১ এর পর প্রায় ১৫ বছর দুই দল একে অপরের সঙ্গে খেলেনি। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের পরও সম্পর্ক খারাপ হয়। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর আবার সংকট দেখা দেয়। সম্পূর্ণ ইতিহাস দেখুন এখানেঃ
১৯৪৭: ভারত ও পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর প্রথম যুদ্ধ ।
১৯৫২: India vs Pakistan প্রথম টেস্ট ম্যাচ । এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের টেস্ট খেলা শুরু হয়।
১৯৬১-১৯৭৮: রাজনৈতিক কারণে কোনো ম্যাচ হয়নি।
১৯৬৫: ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ।
১৯৭১: বাংলাদেশ পাকিস্তান যুদ্ধ।
১৯৮২-১৯৯০: এই সময়ের মধ্যে পাঁচটি টেস্ট সিরিজ হয়, জেনারেল জিয়া উল হক এর মতে এ সময় ক্রিকেটকে “কূটনীতি” হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
১৯৯০-১৯৯৯: এই সময় কোনো টেস্ট সিরিজ না হলেও, দুদেশ নিয়মিত বিদেশের মাটিতে ওয়ানডে ম্যাচে খেলেছে।
১৯৯৯: কার্গিল যুদ্ধের সময়ে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ভারত পাকিস্তানের সাথে খেলেছে।
২০০৪-২০০৬: দুই দেশ আবার ক্রিকেট খেলতে শুরু করে। এই সময়ে ৩১টি ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ
২০০৮: মুম্বাই হামলা, যেগুলি পাকিস্তান থেকে ট্র্যাক করা হয়।
২০০৮-২০১৯: একমাত্র একটি ছোট সিরিজ (২০১২/১৩) হয়, ভারত সরকার পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেট বন্ধ করে দেয়।
২০১৯: পুলওয়ামা হামলায় ৪০ ভারতীয় পুলিশ মারা যায়, এরপর ভারত পাল্টা আক্রমণ করে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের বয়কটের দাবি ওঠে।
২০১১ সালে মোহালিতে ভারত পাকিস্তান ম্যাচের আগে, হার্ভজন সিং বলেন, “আমি ঘুমোতে পারছিলাম না। আমি শুধু চিন্তা করছিলাম, যদি আমরা হারি, তাহলে কী হবে? আমার মাথায় অনেক চিন্তা আসছিল।” আরো জানুনঃ সাইফ আলি খানের উপর হামলাকারী বাংলাদেশী: বিবিসি
এই মন্তব্য সঠিক প্রমাণিত হয়েছে, কারণ ইতিহাসে দেখা গেছে, যখনই ভারত পাকিস্তানের কাছে হারিয়েছে, “দর্শকরা রেগে গিয়ে কিছু না কিছু করে বসে”
১৯৯৯ সালে কলকাতায় ষাট হাজার ভক্তকে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল, যারা আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পাথর ও প্লাস্টিক বোতল ফেলে প্রতিবাদ করেছিল।